Jhulan Goswami : বিশ্বজয়ী না হওয়ার আক্ষেপ, সৌরভ-দ্রাবিড়-লারাদের দলে নাম লেখালেন 'চাকদহ এক্সপ্রেস'
Jhulan Goswami : ২০০৫ সালের ১০ এপ্রিল। সেঞ্চুরিয়ানে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৯৮ রানে হার। এরপর ফের একটা ফাইনাল খেলতে ঝুলনকে আরও ১২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ২৩ জুলাই লর্ডসে এ বার মিতালি রাজের সামনে ছিল ইংল্যান্ড।


সব্যসাচী বাগচী
অর্থনীতিতে একটা চালু প্রবাদ আছে...'চাহিদা রেখার মান ঊর্ধ্বমুখি।' তবে সব মানুষের চাহিদার ভাঁড়ার তো আর সারাজীবনেও পূর্ণ হয় না। সেই হতভাগ্যদের তালিকায় এ বার জুড়ে গেল ঝুলন গোস্বামীর (Jhulan Goswami) নাম। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly), রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid), ব্রায়ান লারাদের (Brian Lara) মতো 'গ্রেট' অনেক উচ্চতা অর্জন করেছেন। তবে বিশ্বজয়ীর তকমা পাননি। বঙ্গ তনয়া ঝুলনের সঙ্গেও তেমন ঘটনা ঘটেছে। তাও আবার ২০ বছরের দীর্ঘ আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে দু'বার রানার্সের তকমা নিয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন 'চাকদহ এক্সপ্রেস' (Chakdah Express)। ড্রেসিংরুম থেকে শুরু করে টিম হোটেলে নিজের ঘরে নীরবে, লোকচক্ষুর আড়ালে ফেলেছেন চোখের জল। ভারতীয় মহিলা দলের প্রবাদপ্রতিম জোরে বোলার বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছেন কান্নায়।
আর মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা। দীর্ঘ যাত্রার পর 'ক্রিকেটের মক্কা' লর্ডসে (Lords) আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চলেছেন ঝুলন। ক্রিকেটের তিনটে ফরম্যাটে উইকেট সংখ্যা মোট ৩৫২। বর্ণাঢ্য কেরিয়ারে ঝুলন বহু সাফল্য অর্জন করেছেন। একদিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী। ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব এবং আইসিসি-র বর্ষসেরা মহিলা ক্রিকেটারের তকমা সবকিছুই তাঁর ঝুলিতে রয়েছে। তবে ক্যাবিনেটে বিশ্বকাপ নেই।
একটা সময় বড় মেয়ের ক্রিকেট খেলা নিয়ে চাকদহের গোস্বামী পরিবারের তীব্র আপত্তি ছিল। সেই ঝর্ণা দেবী অবশ্য অনেক আগে থেকেই নিজের সেলিব্রেটি মেয়েতে মজে রয়েছেন। জি ২৪ ঘণ্টাকে টেলিফোনে বললেন, 'দেখতে দেখতে কুড়িটা বছর কাটিয়ে দিল। বৃহস্পতিবার মাঠ থেকে ফিরে এসে ফোন করেছিল। বলছিল, 'মা বয়স তো হয়ে গেল। আর কতদিন খেলব'! ঝুলু এ বার অনেকটা সময় আমার কাছে থাকবে। কাতলা মাছের পেটি খেতে খুব ভালবাসে। বাড়ি ফিরে আমার হাতের ভাত, ডাল, আলুভাজা আর কাতলা মাছ খেতে চেয়েছে। এগুলো ভেবে তো ভালই লাগছে। তবে খারাপ লাগছে ওকে আর মাঠে দেখতে পাব না। আর একটা খারাপ লাগাও আছে। এত চেষ্টা করেও ঝুলু বিশ্বকাপ জিততে পারল না। এটা আমাদের কাছেও সমান যন্ত্রণার।'
আরও পড়ুন: Jhulan Goswami : 'চাকদহ এক্সপ্রেস'-কে সম্মান দিতে কোন বিশেষ উদ্যোগ নিল সিএবি? জেনে নিন
২০০৫ সালের ১০ এপ্রিল। সেঞ্চুরিয়ানে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৯৮ রানে হার। এরপর ফের একটা ফাইনাল খেলতে ঝুলনকে আরও ১২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ২৩ জুলাই লর্ডসে এ বার মিতালি রাজের সামনে ছিল ইংল্যান্ড। বিপক্ষ, সময়, ভেন্যু সব বদলে গিয়েছিল। কিন্তু চাপের ফাইনালে চুপসে যাওয়ার মধ্যে বদল ঘটেনি। ২৩ রানে ৩ উইকেট নেওয়ার পরেও ভারত হেরে গিয়েছিল মাত্র নয় রানে।
বিদায়ী ম্যাচের আগে ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন। স্বাভাবিক ভাবে তাঁকে অপ্রাপ্তির কথা জানতে চাওয়া হয়। কোনও রাকডাক না করেই ঝুলন বলে দেন, 'দুটি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেললেও অল্পের জন্য ট্রফি জিততে পারিনি। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ। সেটা শুধু আমার কেরিয়ারের শোভা বাড়ানোর সঙ্গে ভারতীয় মহিলা দলের জন্যও দারুণ বিজ্ঞাপন হত। কারণ বিশ্বকাপ জেতার জন্যই সব ক্রিকেটার পরিশ্রম করে। সেই ট্রফি না পাওয়ার একটা আক্ষেপ তো থেকেই যাবে।'
সত্যিই তো ঝুলনের এই আভিজাত্যপূর্ণ ক্রিকেট কেরিয়ারে এই একটা অপ্রাপ্তি থেকেই গেল। ঘটনাচক্রে একটা বিশ্বকাপ ফাইনালে 'বল গার্ল' হিসেবে খুব চেনা ইডেন গার্ডেন্সে নেমে ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানো ও বিশ্বজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গ সমাজের এই 'স্বপ্নের ফেরিওয়ালা'। সেই প্রসঙ্গে তো এ দিন ঝুলন ফের বললেন, '১৯৯৭ সালে ইডেন গার্ডেন্সে অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ড মহিলা বিশ্বকাপের ফাইনালে আমি 'বল গার্ল' ছিলাম। সেই মুহূর্ত থেকেই জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। সেই সময় প্রথমবার দেখেছিলাম যে বেলিন্ডা ক্লার্ক বিশ্বকাপের ট্রফি হাতে তুলছেন এবং গোটা মাঠ জুড়ে ভিকট্রি ল্যাপ দিচ্ছেন। সেটা দেখার পর থেকে জীবনের প্রতি দর্শন বদলে গিয়েছিল।'
ভেবেছিলেন ২০২১-২২ মরসুমের বিশ্বকাপ পর্ব মিটলেই বাইশ গজের যুদ্ধকে বিদায় জানিয়ে দেবেন। বিশ্বকাপ চলাকালীনই বিসিসিআই তাঁকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু, চোটের কারণে ঝুলন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্যায়ের শেষ ম্যাচে তিনি খেলতে পারেননি। এরপর তাঁর অবসরের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসতে চলেছে আর কয়েক ঘণ্টা পর।
প্রতিবেদনের শুরুতেই ঝুলনের সঙ্গে সৌরভের নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। মহারাজের পর দ্বিতীয় বাঙালি হিসাবে বিশ্ব ক্রিকেটে এত বড় মাপের সাফল্য পেলেন। সৌরভের দেশের জার্সিতে মোট ৪২৪ বার মাঠে নেমেছেন। সেখানে ঝুলনের ঝুলিতে তিন ফরম্যাটে এখনও পর্যন্ত ২৮৩টি ম্যাচ । শনিবার লর্ডসে পা রাখতেই সংখ্যাটা বেড়ে ২৮৪-তে দাঁড়াবে। এবং জুড়বে না আর কোনও ম্যাচ। কারণ ঝুলনের পাশে লেখা থাকবে 'প্রাক্তন'।