U19 Womens T20 World Cup: ঝুলনের পর বিশ্বমঞ্চে কাপজয়ী তিন বঙ্গ তনয়া রিচা, তিতাস, ঋষিতা! জেনে নিন ওদের উত্থান
ইংল্যান্ডের ইনিংসের শুরুতেই চার ওভারে ছ’রান দিয়ে দু’টি উইকেট তুলে নেন তিতাস। সেটাই ম্যাচের রঙ বদলে দিয়েছিল।
জি ২৪ ঘন্টা ডিজিটাল ব্যুরো: পুরুষ ও মহিলা নির্বিশেষে কবে ভারতীয় দলে তিনজন বাঙালি খেলেছেন, মনে করে দেখতে পারেন? শেষ কবে তিন বাঙালি একসঙ্গে বিশ্বজয়ী দলের সদস্য হয়েছেন, মনে আছে? আপনার ভাবনা ময়দান থেকে আরব সাগরের তীরে হাঁটা দিলেও, মনে পড়বে না। তব এমনটাই যে ঘটে গেল সদ্য সমাপ্ত মহিলাদের অনূর্ধ্ব-১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (ICC Women U19 T20 World Cup 2023)। শেফালি ভার্মার (Shafali Verma) যে দলটা পচেস্ট্রুমের বাইশ গজে ইংল্যান্ডকে (England Womens Under 19 Cricket Team) সাত উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল, সেই দলের তিন ডাকাবুকো বঙ্গ তনয়া হলেন তিতাস সাধু (Titas Sadhu), রিচা ঘোষ (Richa Ghosh) ও ঋষিতা বসু (Hrishita Basu)। এরমধ্যে ঋষিতা আবার লক্ষ্মী রতন শুক্লা অ্যাকাডেমির (Laxmi Ratan Shukla Academy) ছাত্রী। ঝুলন গোস্বামীর (Jhulan Goswami) ব্যাটন ধরার মশলা এই তিনজনের মধ্যে আছে কিনা সেটা সময় বলবে। তবে ত্রয়ী যে নজর কেড়েছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
রিচা ইতিমধ্যেই সিনিয়র দলে জায়গা করে নিয়েছেন। অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর (Harmanpreet Kaur), এই বঙ্গ উইকেটকিপার-ব্যাটারের আগ্রাসী মানসিকতাকে পছন্দ করেন। তিতাস কাপ যুদ্ধে ৬টি ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৬টি উইকেট। এরমধ্যে সেরা পারফরম্যান্স করেছেন মেগা ফাইনালে। মাত্র ৬ রানে ২ উইকেট নেওয়ার সুবাদে হয়েছেন ম্যাচের সেরা। তবে সেই জায়গায় দেখতে গেলে ঋষিতা বাকি দু'জনের মতো নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। তবে তাতে কি! ফাইনালে সৌম্যা তিওয়ারি যখন উইনিং স্ট্রোক নিচ্ছেন, তখন ঋষিতা ছিলেন অন্য প্রান্তে।
রিচার বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ বলেছিলেন, "পুরো প্রতিযোগিতায় ওরা একজোট হয়ে খেলেছে। নিউজিল্যান্ডকে সেমি ফাইনালে হারানোর পরেই বুঝে গিয়েছিলাম যে, ফাইনাল জেতা শুধু সময়ের অপেক্ষা। রিচা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য হওয়ার জন্য গর্বিতবোধ করছি। তবে ওর আসল লক্ষ্য হল সিনিয়র দলকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়া। গত কয়েকবার খুব কাছে গিয়েও সিনিয়র দল খালি হাতে ফিরে এসেছে। এবার সেই বাঁধা টপকাতেই হবে।" জয়ের পর রিচা স্বভাবতই আবেগি হয়ে পড়েছিলেন। বললেন, "প্রথম বার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ হয়েছে আর শুরুতেই আমরা চ্যাম্পিয়ন। এই অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। দারুণ লাগছে।"
আরও পড়ুন: Novak Djokovic, Australian Open Final 2023: চোখের জলে রড লেভার এরিনা ভিজিয়ে মনের কথা বলে দিলেন জোকার
ইংল্যান্ডের ইনিংসের শুরুতেই চার ওভারে ছ’রান দিয়ে দু’টি উইকেট তুলে নেন তিতাস। সেটাই ম্যাচের রঙ বদলে দিয়েছিল। ম্যাচের পর তিতাস বললেন, "দারুণ অনুভূতি হচ্ছে। বিশ্বাসই হচ্ছে না। অনেক দিন ধরে এই দিনটার জন্যে অপেক্ষা করে ছিলাম। ফাইনাল খেলতে নামার আগে থেকেই আমাদের একটা পরিকল্পনা ছিল। সেটা কাজে লাগিয়েছি। আমরা এখানে দু’টি ম্যাচ খেলেছি। বাকি যে ম্যাচগুলো হয়েছে সেগুলোও দেখেছি। তাই কোথায় বল করতে হবে সেটা আগে থেকেই জানতাম।"
তিতাসের বাড়ি হুগলীর চুঁচুড়া। সেখানে অনুশীলন করেই ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। তাঁর কোচ প্রিয়ঙ্কর মুখোপাধ্যায় বললেন, "এটা সবে শুরু। তিতাস ঠিক মতো গাইডেন্স পেলে অনেক দূরে যাবে। তিতাস যেভাবে খেলছে তাতে আগামি দিনে ও সিনিয়র দলেও সুযোগ পাবে। সে আরও ভাল খেলবে। ও খুব বুদ্ধিমতী। তাড়াতাড়ি শিখে নিতে পারে।"
বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার চরণজিৎ সিং অনেক বছর ধরেই লক্ষ্মী রতন শুক্লা অ্যাকাডেমির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। তিনি স্বভাবতই বিশ্বজয়ী ঋষিতার সাফল্যে উচ্ছস্বিত। এহেন চরণজিৎ সিং বলেন, "ঋষিতা আমার অ্যাকাডেমির ছাত্রী হলেও, রিচা কিন্তু আমাদের অ্যাকাডেমির ছাত্রী নয়। বরং বাংলার বয়সভিত্তিক দল থেকে সিনিয়র দলে থাকার সময় রিচা ও তিতাসকে খুব কাছ থেকে দেখেছি।"
এরপর ঋষিতা ফের যোগ করেন, "বলের জন্য ছেলেদের মতো ঝাঁপাতে হৃষিতা ছাড়া আর কোনও মেয়েকে দেখিনি। বেশ পরিশ্রম করতে পারে। ফিটনেসও দারুণ। ছোট থেকে প্রতিটি স্তরেই সাফল্য পেয়েছে। ২০১৯ সালে প্রথম বাংলার অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ পেয়েছিল। আজ আলাদা করে কারও কথা বলতে চাই না। দেশ জিতেছে। এটাই তো বড় কথা। সেই জয়ের বাংলার অবদান আছে। এটা আমাদের কাছে বড় প্রাপ্তি। তাই খুব আনন্দ হচ্ছে।"
বুধবার কলকাতায় নামবেন তিন বিশ্বজয়ী বঙ্গ তনয়া। তাঁদের জন্য আরও বড় সেলিব্রেশন অপেক্ষা করছে। সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)