পনেরর কিশোরের কিংবদন্তী হওয়ার পথের এক ঝলক
সাহিত্য সহবাসের সাড়ে পাঁচফুটের তেন্ডলা থেকে আজকের মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকর। মাঝে২৪টা বছর। চড়াই-উতরাই রয়েছে। তবু সাফল্য-ব্যর্থতায় মেশা সচিন তেন্ডুলকরের ক্রিকেটীয় জীবন দুই যুগের শেষে সোনায় মোড়া। এই দীর্ঘপথের প্রতিটা বছরেই কোনও না কোনও নজির গড়েছেন সচিন।
সাহিত্য সহবাসের সাড়ে পাঁচফুটের তেন্ডলা থেকে আজকের মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকর। মাঝে২৪টা বছর। চড়াই-উতরাই রয়েছে। তবু সাফল্য-ব্যর্থতায় মেশা সচিন তেন্ডুলকরের ক্রিকেটীয় জীবন দুই যুগের শেষে সোনায় মোড়া। এই দীর্ঘপথের প্রতিটা বছরেই কোনও না কোনও নজির গড়েছেন সচিন।
দীর্ঘ ২৪ বছর। এই দুই যুগে অনেক পরিবর্তনই তো হয়েছে বায়ুমন্ডলের প্রতিটি স্তরে।বয়সের সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে প্রতিটি মানুষের ভূমিকারও। ১৯৮৯-এর হাফপ্যান্ট পরা স্কুলবয় এখন কোনও মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ১৯৮৯-এর সরকারি অফিসের মধ্যবয়স্ক কর্মচারী আজ হয়ত গর্বিত দাদু। কিন্তু `৮৯ সালের সেই ষোড়শের মারাঠি কিশোর দুই যুগ ধরে ২২ গজের সোঁদা গন্ধ ও লাল বলের বিষাক্ত ছোবল সহ্য করে এইমূহুর্তে ক্রিকেট দুনিয়ার সম্রাট মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকর।
বাবা রমেশ তেন্ডুলকর মারাঠি সাহিত্যের দিকপাল।মা রজনী তেন্ডুলকর একটি বিমা সংস্থার সাধারণ কর্মী।সাহিত্যমনস্ক পরিবার থেকে উঠে এসে ক্রিকেট দুনিয়া কাঁপানোর স্বপ্নটা আর পাঁচটা স্বপ্ন দেখা ক্রিকেট শিক্ষার্থীর মতই ছিল সচিনের কাছে।
এগারো বছর বয়সে দাদা অজিত তেন্ডুলকরের হাত ধরে ক্রিকেটের প্রাথমিক পাঠ নিতে যাওয়া।সেই বছর,অর্থাত্ ১৯৮৪ সালে মাত্র এগারো বছরেই মহারাষ্ট্রে সেরা স্কুল টুর্নামেন্ট জাইলস শিল্ডে অভিষেক ম্যাচে ২৪ রান করেন সচিন। ২৪ বছরের দীর্ঘ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবনের মালিক সচিন কাকতালীয়ভাবে অভিষেক ম্যাচে রানও করেছিলেন সেই ২৪।
পরের বছরই নয়া নজির। মাত্র ১২ বছর বয়সে খেলে ফেললেন অনূর্ধ্ব ১৭ হ্যারিস শিল্ড। সারদাশ্রমের দাদাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে প্রথম সেঞ্চুরিও করে ফেললেন সচিন।
পরের বছর থেকেই তখনকার বোম্বে ক্রিকেটে নজরকাড়া শুরু। ১৯৮৬ সালে ১৩ বছরের সচিন জাইলস শিল্ডে ঘটালেন একের পর এক ইতিহাস। ছয়টি সেঞ্চুরি ও একটি ডাবল সেঞ্চুরি।
পরের বছর,অর্থাত্ চোদ্দ বছরে পা দেওয়া সচিন বন্ধু কাম্বলিকে নিয়ে গড়লেন বিশ্বরেকর্ড। স্কুল ক্রিকেটে জুটিতে ৬৬৪ রান করে সচিন-কাম্বলি জুটি তখন মুম্বইয়ের সিনিয়র দলের নির্বাচকদের নোটবুকে জায়গা করে নিলেন। গাভাসকার পরবর্তী জমানা যে একেবারে শূন্য থাকবেনা, তা যেন বুঝতে পারছিল মুম্বইকর ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা।
মাত্র পনেরো বছরেই বেঙ্গসরকর, রবি শাস্ত্রীদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করে নেওয়ার লোভনীয় সুযোগ এল সচিন তেন্ডুলকরের সামনে। আইডলদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করে,আবেগে ভেসে যাওয়া নয়,১৫ বছরের সচিন ছিলেন মাটিতে পা রাখা একজন পরিণত ক্রিকেটার। যার ফল পেলেন গুজরাতের বিরুদ্ধে রঞ্জি ম্যাচেই। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন সেই ম্যাচেই। খুলে গেল সচিন তেন্ডুলকরের জন্য জাতীয় দলের দরজা।
১৯৮৯ সালে ২৪ বছরের দীর্ঘ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারের জন্য প্রথম পদক্ষেপ ষোড়শ সচিনের। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ও একদিনের ম্যাচে অভিষেক। ইমরান,কাদিরদের বোলিং আক্রমণ সামলাতে সামলাতে সচিন যেন নিজের অজান্তেই প্রমাণ করছিলেন,বিশ্বক্রিকেট তৈরি হও। সাম্রাজ্য বিস্তার করতে আসছে এক অদম্য সাহসী মারাঠি।
শচীন দেববর্মনের প্রেমে পাগল রমেশ তেন্ডুলকর ভালবেসে তাঁর ছোটছেলের নাম রেখেছিলেন সচিন তেন্ডুলকর।শচীনকর্তার সুরের ছোঁয়ার মত তাঁর পুত্রের ব্যাটিং স্ট্রোকও যে আসমুদ্রহিমাচলকে মোহাবেশে দিশেহারা করে দেবে,তা কে জানত!