মায়ের পাশে ঘুমিয়েছিল ৯ মাসের শিশু, ঘুমের ঘোরে হামাগুড়়ি দিয়ে পড়ে মৃত্যু

ঘুমের ঘোরে হামাগুড়ি দিয়ে খাট ও দেওয়ালের মধ্যিখানের ফাঁক দিয়ে পড়ে যায় একরত্তি অনিকেত। খাট আর দেওয়ালের মাঝে গলা আটকে যায় তার।

নিজস্ব প্রতিবেদন : কথাতে আছে, বিপদ কখনও বলে কয়ে আসে না। রাতের ঘুমের মধ্যেই যে এতবড় বিপদ ঘটে যাবে, কেড়ে নেবে তাদের কোলের সন্তানকে, তা বোধহয় দু-স্বপ্নেও ভাবেনি মিঠুন ও অষ্টমী। ঘুমের মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে পড়ে মৃত্যু হল মিঠুন ও অষ্টমীর ৯ মাসের পুত্রসন্তানের। অত্যন্ত বেদনাদায়ক এই ঘটনাটি ঘটেছে নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জে।

কৃষ্ণগঞ্জের শিবনিবাস কৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দা মিঠন ঘোষ ও অষ্টমী ঘোষ। সবে ৯ মাস হয়েছিল তাঁদের একমাত্র পুত্রসন্তানের। কোলের সন্তান নিয়ে স্বপ্নে বিভোর ছিলেন অষ্টমী। কিন্তু মঙ্গলবারের 'অভিশপ্ত' রাত ভেঙে চুরমার করে দিল অষ্টমী-মিঠুনের সব স্বপ্ন। কোল ফাঁকা হয়ে গেল অষ্টমীর। সন্তানহারা বাবা-মায়ের এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না, একরাতের ঘুমের মধ্যে কী থেকে কী হয়ে গেল?

রোজকার মতোই রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে ৯ মাসের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ঘুমাতে যান অষ্টমী। বাবা-মায়ের সঙ্গেই ঘুমিয়েছিল ৯ মাসের ছোট্ট অনিকেত। কিন্তু, অষ্টমীর ঘুম ভাঙতেই সকালবেলায় উদ্ধার হল ৯ মাসের ছোট্ট অনিকেতের নিথর দেহ। একমাত্র ছেলের এভাবে মৃত্যু কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছে না মায়ের মন। বাঁধ মানছে না চোখের জল। বাবা-মায়ের সঙ্গেই তো ঘুমিয়েছিল অনিকেত? কিন্তু, তারপর কী হয়?

জানা গেছে, ঘুমের ঘোরে হামাগুড়ি দিয়ে খাট ও দেওয়ালের মধ্যিখানের ফাঁক দিয়ে পড়ে যায় একরত্তি অনিকেত। কিন্তু ফাঁকা অংশটি সরু হওয়ায়, খাট আর দেওয়ালের মাঝে গলা আটকে যায় তার। শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয় ছোট্ট অনিকেতের। সকালে ঘুম ভেঙে উঠে অষ্টমী দেখেন, বালিশ বিছানা ফাঁকা। খাটে নেই তাঁদের ৯ মাসের সন্তান।

ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে ঘাবড়ে যান অষ্টমী। ঘুম থেকে ডেকে তোলেন স্বামী মিঠুনকে। স্বামী-স্ত্রীতে মিলে খোঁজাখুঁজি শুরু করতেই দম্পতির চোখ আটকে যায় খাটের ধারে। দেখতে পান, খাটের পাশে দেওয়ালের ফাঁকে ঝুলছে অনিকেত। দেখা মাত্র হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় অষ্টমীর। তাড়াতাড়ি ছেলেকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।

সন্তান হারিয়ে শোকস্তব্ধ দম্পতি। সন্তানহারা বাবা-মাকে সান্ত্বনা দেওয়া ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না প্রতিবেশীরা। হাসিখুশি ছোট্ট অনিকেত পাড়ায় সবারই খুব প্রিয় ছিল। প্রিয় অনিকেতের এভাবে অকালে চলে যাওয়া মানতে পারছে কেউ-ই।