Bardhaman: বেঙ্গালুরুতে আটক বর্ধমানের দম্পতি, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা অসহায় পরিবারের
জামালপুর বিধানসভার বিধায়ক অলোক মাঝি টেলিফোনে বলেন,পলাশ অধিকারী ও তাঁর পরিবার আমার বিধানসভা এলাকার তেলে গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ও ভোটার।ভারতীয় নাগরিকত্বের সমস্ত প্রমাণপত্রও তাদের রয়েছে
অরূপ লাহা: শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে বেঙ্গালুরুতে বর্ধমানের এক দম্পতি। রেহাই পায়নি তাঁদের দেড় বছরের শিশুপুত্রও। বাংলাভাষী এই দম্পতিকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী অভিযোগে গ্রেপ্তার করে বেঙ্গালুরু পুলিস। তাদের ঠিকানা এখন জেল। তিন মাস শিশু পুত্র আদিকে নিয়ে বেঙ্গালুরুর জেলে দিন কাটছে পলাশ অধিকারী ও শুক্লা অধিকারীর।তাঁদের বাবা-মা বেঙ্গালুরুতে গিয়ে সেখানকার পুলিসকে ছেলে ও বৌমার ভারতীয় নাগরিকত্বের সমস্ত প্রমাণপত্র দেখান। কিন্তু তাতেও লাভ কিছু হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ছেলে,বৌমা ও নাতির মুক্তির জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেছেন অসহায় বাবা-মা।
আরও পড়ুন-সিত্রাংয়ের দাপটে বিদ্যুতহীন বাংলাদেশের বহু জেলা, মৃত কমপক্ষে ১৫
পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার জৌগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তেলে গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা পলাশ অধিকারী ও শুক্লা অধিকারী। সেখানে রয়েছে তাঁদের টিনের চালার দু’কুঠুরি ভাঙাচোরা বাড়ি। দারিদ্র অধিকারী পরিবারের নিত্যদিনের সঙ্গী। পলাশদের মতোই তাদের প্রতিবেশীরাও
অত্যন্ত দরিদ্র। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুই শুধুমাত্র সম্বল। বেশিরভাগই দিন মজুরির কাজ করেন। বাকিদের কেউ বালাপোশ তৈরি, আবার কেউ বিড়ি বাঁধার কাজ করে উপার্জন করেন। এমনই এক গ্রামের ছেলে পলাশ রোজগারের আশায় স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে বেঙ্গালুরু গিয়েছিল। কিন্তু রোজগার তো দূরের কথা ,উল্টে সেখানে তাঁদের পরিণতি হয়েছে ভয়ংকর। তাদের কথা জেনে স্তম্ভিত তেলে গ্রামের বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা।
অধিকারীর আত্মীয় পিন্টু হাওলাদার । তিনি জানান,“শ্রমিকের কাজ করার জন্য জুন মাসে শিশু পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে
পলাশ তাঁর স্ত্রী ও শিশু বেঙ্গালুরু যায়।একই উদ্দেশ্যে পলাশের বাবা পঙ্কজ অধিকারী, মা সবিতাদেবী ও প্রতিবেশী সুনীল অধিকারীও ব্যাঙ্গালোরে যান। সেখানকার মারাথাহাল্লি (Marathahalli) মহকুমার ভারথুর(varthur) থানার সুলিবেলে(sulibela) গ্রামের কায়েন খাঁনের ডেরায় তারা ওঠেন। সেখানে দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা মজুরির শর্তে তারা কায়েন খাঁনের অধীনে কাজ করা শুরু করেন। তাদের কাজ ছিল হোটেল,রেঁস্তোরা,সিনেমা হল সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত বর্জ্য,বোতল,প্লাস্টিক সরঞ্জাম এইসব বাছাই করা। পিন্টু হাওলাদার বলেন,“সেখানে সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল।হঠাৎ করেই গত ২৭ জুলাই ভারথুর (varthur) থানার পুলিস কায়েন খাঁনের ডেরায় হানা দেয়। সেখানে যারা বাংলাভাষী ছিল তারা সবাই নাকি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, এমন সন্দেহে ভারথুর থানার পুলিস তাদের ও আরো ৫ জনকে পাকড়াও করে থানায় নিয়ে যায়। ওইসময়ে পলাশ,তাঁর স্ত্রী,বাবা-মা ও প্রতিবেশী সুনীল অধিকারী,সবাই ভারথুর থানার পুলিসকে জানান তাঁরা কেউই বাংলাদেশি নন। তাঁরা নিজেদেরকে ভারতীয় বলে জানিয়ে নিজের নিজের আধার কার্ড,প্যান কার্ড,ভোটার কার্ড দেখান। সেইসব দেখে সেখানকার পুলিস পলাশের বৃদ্ধ বাবা,মা ও প্রতিবেশীকে ছেড়ে দিলেও পলাশ এবং তাঁর স্ত্রী ও শিশুপুত্র সহ সাত জনকে আটকে রাখে । পরে তাদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে দেয়। সেই থেকে প্রায় ৩ মাস হয়ে গেল শিশু পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে পলাশ ও তাঁর স্ত্রী জেলেই দিন কাটাচ্ছে বলে পিন্টু হাওলাদার জানিয়েছেন“।
পলাশের প্রতিবেশী সুনীল অধিকারী বলেন, আমিও রোজগারের আশায় পলাশদের সঙ্গেই বেঙ্গালুরু যাই । সেখানে ভারথুর থানার পুলিশ আমাকেও সন্দেহে ধরে। ওখানকার পুলিসের সঙ্গে আমাদের কথা বলার ক্ষেত্রে ভাষাগত সমস্যা হচ্ছিল।ওরা আমাদের কথা যেমন বুঝতে পারছিল না,তেমন আমরাও ওদের কথা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তবুও আমি,পলাশের বাবা- মা ও পলাশ বাংলা ভাষাতেই ভারথুর থানার পুলিসকে বারেবারে বলে যাই আমরা ভারতীয়,পশ্চিমবাংলার বর্ধমানের বাসিন্দ। তেলে গ্রামে থাকা আমার স্ত্রীর ফোন নম্বর ওরা চাইলে সেটাও আমি দিয়ে দিই। এর পর ওরা কি বুজলো জানি না । আমাকে এবং পালাশের বাবা ও মাকে ছেড়ে দেয় । কিন্তু অদ্ভুত ভাবে পলাশ এবং তার স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে ছাড়েনি। মিথ্যা অভিযোগে তদের জেলে পাঠিয়ে দেয় ।সুনীলবাবু জানান,এইসব দেখে তাঁর মনে হয় বাঙালিদের বেঙ্গালুরুতে কাজ করতে যাওয়া খুব একটা নিরাপদের নয়।তাই ওই ঘটনার আট দিন বাদে ট্রেনের টিকিট কেটে আমি তেলে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন“।
হুগলীর বৈঁচিগ্রামের বাসিন্দা পলাশের আত্মীয় সুজন হালদার বলেন,“ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের জন্য কেন্দ্র পশ্চিম বাংলায় সিএএ (CAA),এনআরসি (NRC) লাগু করতে পারেনি। তবে তাঁর মনে হচ্ছে বিজেপি শাসিত কর্ণাটক সরকার অলিখিত ভাবে সিএএ ,
এনআরসি কার্যকরে যাকে পাচ্ছে তাকে বিদেশি বলে জেলে ভরে দিচ্ছে“।একই অভিযোগ করেছেন তেলে গ্রামের বাসিন্দা জৌগ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য কৃষ্ণা সরকার। পলাশের বাবা ও মা বলেন, ছেলে ,বৌমা ও নাতিকে ব্যাঙ্গালোরের জেল থেকে ছাড়াতে এখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীই তাঁদের একমাত্র ভরসা। তাঁরা মমতা ব্যানার্জীর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেছেন।
বিডিও( জামালপুর ) শুভঙ্কর মজুমদার টেলিফোনে বলেন,“এমন একটা ঘটনার কথা আমি শুনেছি।বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনকে ওয়াকিবহাল করা হয়েছে।এসডিও(বর্ধমান দক্ষিণ) সাহেবও বিষয়টি দেখছেন“।
জামালপুর বিধানসভার বিধায়ক অলোক মাঝি টেলিফোনে বলেন,পলাশ অধিকারী ও তাঁর পরিবার আমার বিধানসভা এলাকার তেলে গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ও ভোটার।ভারতীয় নাগরিকত্বের সমস্ত প্রমাণপত্রও তাদের রয়েছে।তা সত্ত্বেও কোন যুক্তিতে ব্যাঙ্গালোরের পুলিশ পলাশ এবং তাঁর স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে কি অভিযোগে গ্রেপ্তার করে জেলে ভরে রেখেছে সেটাই আশ্চর্য্যের। আলোক মাঝি জানান, কালী পুজো মিটলেই তিনি এই বিষয়টি নিয়ে জেলা জেলাশাসকের মাধ্যমে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।