চিঁড়ে-মুড়ি থেকে বিরিয়ানি-ওষুধ, লকডাউনে সবার হাতে খাবার তুলে দিল 'মানবিক' পুলিস

চালু করা হয়েছে একটি হেল্পলাইন নম্বর। সেই নম্বরে ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপ করে জানালেই খাবারের ব্যবস্থা করছে পুলিস।

Edited By: সুদেষ্ণা পাল | Updated By: Mar 27, 2020, 06:11 PM IST
চিঁড়ে-মুড়ি থেকে বিরিয়ানি-ওষুধ, লকডাউনে সবার হাতে খাবার তুলে দিল 'মানবিক' পুলিস

নিজস্ব প্রতিবেদন : লকডাউনে গোটা দেশ। করোনাকে রুখতে ঘর থেকে বেরনোর উপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কেউ নিয়ম ভাঙলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ রয়েছে প্রশাসনের। এই পরিস্থিতিতে লকডাউনের প্রথম দিনগুলোতে পুলিসকে লাঠি হাতে রাস্তায় নামতে দেখা গিয়েছে। কেউ নিয়ম ভাঙলে তাঁকে লাঠিপেটা করতে, তাঁদের কান ধরে ওঠবস করাতেও দেখা গিয়েছে পুলিসকে। তবে লকডাউন পিরিয়ডে পুলিস যে শুধু লাঠি হাতে রাস্তায় নেমেছে এমনটা নয়, রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ, বিভিন্ন জায়গায় পুলিসকে মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দিতেও দেখা গিয়েছে। কঠোর কড়া রূপের পাশপাশি সামনে এসেছে পুলিসের মানবিক মুখও। 

মালদা:

রাস্তার ভবঘুরেদের খাবার মিলছে না। এমনই খবর আসছিল পোস্টফিস মোড়, রাজ হোটেল মোড়, থানা মোড়, রথবাড়ি মোড়, স্টেশন সহ একাধিক এলাকা থেকে। এদিন মুড়ি, চিঁড়া, গুড়, পাঁউরুটি, এমনকি বিরিয়ানি নিয়ে পথে নামলেন পুলিস সুপার অলোক রাজোরিয়া ও অতিরিক্ত পুলিশস সুপার দীপক সরকার। নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে খাওয়ালেন ভবঘুরেদের। যতদিন লকডাউন চলবে, ততদিন এই খাবার প্রতিদিন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। 

উত্তর ২৪ পরগনা:

এইডস আক্রান্ত রোগীদের  হাতে ওষুধ তুলে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল উত্তর ২৪ পরগনার মসলন্দপুর ফাঁড়ির পুলিশ। ফাঁড়ির আধিকারিক চিন্তামনি নস্কর জানান, এদের ওষুধ শেষ হয়ে গিয়েছিল। লক ডাউনের জন্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রাপ্ত সরকারি ওষুধ আনা সম্ভব ছিল না। গতকাল তাঁরা মসলন্দপুর ফাঁড়ির দ্বারস্থ হন। কলকাতা থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে তাঁদের হাতে সেই ওষুধ তুলে দেওয়া হয়েছে। 

দুঃস্থ-গরিবদের হাতে রান্না করা খাবার তুলে দিল বীজপুর থানা। নিজেদেরই ক্যান্টিনে ভাত, ডাল, মাছ, আলু চোখা,তরকারি রান্না করে গরিব মানুষদের হাতে সেই খাবারের প্যাকেট তুলে দিল বীজপুর থানার পুলিস। থানার তরফে শুধু একটাই স্লোগান প্রচার করা হচ্ছে, 'আপনারা ঘরে থাকুন। শুধু  নিয়ম রক্ষা নয়, নিয়ম মানুন।' রান্না করা খাবার পেয়ে খুশি দুঃস্থ-অসহায় মানুষরা।

শুধু বীজপুর থানা নয়। বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিল অশোকনগর থানার পুলিসও। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ১২টি পরিবারের হাতে এদিন খাবার পৌঁছে দিল পুলিস। এদিন অশোকনগরে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন ডিএসপি (সদর) রোহেদ শেখ ও ওসি অয়ন চক্রবর্তী। পরিদর্শনের সময়ই তাঁরা ভিন রাজ্য থেকে ফেরা হোম কোয়ারন্টিনে থাকা ১২টি পরিবারের হাতে চাল, ডাল, আলু তুলে দেন। পাশাপাশি অশোকনগরের বিভিন্ন বাজারেও তাঁরা নজরদারি চালান। 

দক্ষিণ দিনাজপুর:

বালুরঘাট হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়-পরিজন যাঁরা বিশ্রামাগারে অপেক্ষা করছিলেন, তাঁদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করল বালুরঘাট পুলিস। লকডাউনে জেরে অনেক রোগীর আত্মীয় যাঁরা বাইরে থেকে এসেছেন, তাঁরা হাসপাতাল চত্বরেই থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁদের খাবারের সমস্যা হচ্ছিল। শুক্রবার দুপুরে তাঁদের হাতে শুকনো খাবার তুলে দেয় পুলিস।

হুগলি:

#NoEmptyStomach...লকডাউনের সময় গরিব-দুঃস্থ মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করতে অভিনব উদ্যোগন নিয়েছে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট। চালু করা হয়েছে একটি হেল্পলাইন নম্বর। 9434222000, এই নম্বরে ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপ করে জানালেই চন্দননগর পুলিস কমিশনারেট সেইসব মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করবে। এদিন চন্দননগর পুলিস কমিশনারেটের পক্ষ থেকে গরিব মানুষদের চাল, ডাল, আলু, তেল বিলি করা হয়। পুলিস কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, এই উদ্দেশ্যে একটি ফান্ড গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই দেড়শো টন চাল, ৫০ টন আলু ও ২০ টন ডাল কেনা হয়ে গিয়েছে। এক লাখ মানুষকে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে। হুগলি গ্রামীণ পুলিশের উদ্যোগে খাদ্য সামগ্রী বিলি করা শুরু হয়েছে গুপ্তিপাড়াতেও।

উত্তর দিনাজপুর:

লকডাউনে দুঃস্থ, দিন আনি দিন খাওয়া মানুষদের জন্য যৌথ উদ্যোগে রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করল জেলা পুলিস, জেলা প্রশাসন ও রায়গঞ্জ পুর প্রশাসন৷ 'ফুড ফর অল' কর্মসূচিতে সোশ্যাল ডিসট্যান্স বজায় রেখেই ২০০০ মানুষকে খাওয়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৩ মিটার দুরত্ব বজায় রেখে সাদা বৃত্ত এঁকে মানুষের দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি পানীয় জলের ব্যবস্থা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সবই চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়।

আরও পড়ুন, 'না খেয়ে মরতে বসেছি, বাঁচান'... বাংলার শ্রমিকদের আর্তির পরই ১৮ মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন মমতা

.