‘বুকে আগুন জ্বলছে, আমি বদলা চাই’
৫ তারিখ কামারহাটি বিধানসভায় আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক উদ্বোধন করবেন তিনি। আর সে কারনেই গোটা দক্ষিণেশ্বর চত্বর নিজের হাতে সাজানোর বন্দোবস্ত করেছেন মদন মিত্র।
নিজস্ব প্রতিবেদন: ‘বদল-টদল অনেক হয়েছে, এবার একটু বদলার কথা বলুন’। বক্তার নাম মদন মিত্র। স্থান বেলঘরিয়া। সোমবার সন্ধ্যায় বেলঘরিয়ার ১৭ থেকে ৩৫ নং ওয়ার্ডের পৌর প্রতিনিধিদের ডাকা একটি বিজয়া সম্মেলনী অনুষ্ঠানে এমনই আগুনে বক্তৃতা করলেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা মদন মিত্র।
আরও পড়ুন- ‘রাস্তায় পাঁচিল তুলে বিজেপির রথ আটকাবে সিপিএম’
সারদাকাণ্ডে তাঁকে ২২ মাস জেল খাটতে হয়েছে। সেই যন্ত্রণা তিনি এখনও ভুলতে পারেননি। আর ততদিন ভুলবেন না, যতদিন না তিনি বদলা নিতে পারছেন। এদিন বিজয়া সম্মেলনীর অনুষ্ঠানে এসে মদন মিত্র সাফ বলেন, যারা তাঁকে ২২ মাস জেলে আটকে রেখেছে, যাদের জন্য তাঁর পরিবার ২২ মাস ঘুমোতে পারেনি তাদের ৪৪ মাসের ঘুম তিনি কেড়ে নেবেন। আর সেটা যতদিন না তিনি করতে পারছেন, ততদিন পর্যন্ত তার বুকের আগুন নিভবে না!
আরও পড়ুন- আমরা গণতন্ত্রে পথ ছাড়লে তৃণমূলকে কেউ বাঁচাতে পারবে না, পুলিসও না, হুঙ্কার দিলীপের
এখানেই শেষ নয়, তাঁর অন্তরে কাঁটার মতো বিঁধছে কামারহাটি-তে হেরে যাওয়াও। এতদিন পেরিয়ে গেলেও কামারহাটি বিধানসভায় সিপিএমের কাছে তৃণমূলের হেরে যাওয়াকে তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। উল্লেখ্য, ২০১৬ বিধানসভায় কংগ্রেস সমর্থিত বাম প্রার্থী মানস মুখোপাধ্যায়ের কাছে হারতে হয়েছিল মদন মিত্রকে। সোমবারের বিজয়া সম্মেলনীর অনুষ্ঠানে মদন মিত্র দাবি করেন, কামারহাটিতে তৃণমূল হারেনি, তৃণমূলকে চক্রান্ত করে হারানো হয়েছে। তাঁর কথায়, “আমাকে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়েছে, কিন্তু পরীক্ষার হলে যেতে দেওয়া হয়নি। যদি আমাকে সেখানে যেতে দেওয়া হত, আমি ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে জিততাম”।
আরও পড়ুন- রথযাত্রায় শাসকের হামলা ঠেকাতে প্রাক্তনীদের ভরসায় বঙ্গ বিজেপি
একই সঙ্গে এদিন দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে কড়া বার্তাও দেন মদন বাবু। তাঁর কথায়, “এখনই সব ঝগড়া মিটিয়ে ফেলতে হবে। শাসক দলের মধ্যে যেটুকু যা ঝগড়া হওয়ার হয়ে গিয়েছে, এবার সব মিটিয়ে নিন। কারণ, হাতে আর সময় নেই”। তিনি আরও বলেন, এখন থেকে আর কোনও অজুহাত আর তিনি শুনবেন না। দলকে জেতাতে না পারলে নেতাদের দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করার কথাও বলেন তিনি। তাঁর একটাই কথা, জেতার জন্য যা যা প্রয়োজন, সবই দেওয়া হবে। প্রয়োজনে পোস্টার, ব্যানারের সঙ্গে লাঠিও পৌঁছে দেওয়া হবে। তেল পাকানো লাঠি। যেন-তেন প্রকারেণ কামারহাটি জেতা তাঁর চাই-ই চাই। আর কামারহাটি-তে তৃণমূলকে জেতাতে হলে যে সবার আগে সৌগত রায়কে দমদম লোকসভা কেন্দ্র থেকে জেতাতে হবে সেকথাও পরিষ্কার করে দেন মদন মিত্র। সেকারণেই সৌগত রায়কে জেতানোর জন্য তিনি ঘোষণা করেন, “আমি মদন মিত্র পালিয়ে যাওয়ার ছেলে নই। কথা দিচ্ছি, সৌগত দা-কে(রায়) জিতিয়ে দিন, আমি সোনা দিয়ে আপনাদের হাত বাঁধিয়ে দেব”।
প্রসঙ্গত, ৫ তারিখ কামারহাটি বিধানসভায় আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক উদ্বোধন করবেন তিনি। আর সে কারনেই গোটা দক্ষিণেশ্বর চত্বর নিজের হাতে সাজানোর বন্দোবস্ত করেছেন মদন মিত্র। ওই দিন গোটা দক্ষিণেশ্বর চত্বরের ‘আকাশ-বাতাস, বাড়ি-ঘর, পোস্ট, ল্যাম্প পোস্ট সর্বত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি, পোস্টারে ভরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আর তাঁর নির্দেশ মতো দক্ষিণেশ্বরকে মমতাময়ী করে তুলতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও।