Mal Bazar: সামনে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস, রেল লাইনে বৃদ্ধা! মুহূর্তের ফারাকে প্রাণ বাঁচালেন যুবক
স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস পার হবে দেখে নির্ধারিত সময়েই লুকসানের রেল গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। লীলাদেবী গুপ্তা লুকসান মোড়ের দিক থেকে লুকসান বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। রেল গেট বন্ধ থাকলেও সম্ভবত বয়সজনিত কারনে ভালো মতো কিছু বুঝতে না পেরে তা তিনি উপেক্ষা করে বসেন।
অরূপ বসাক: জীবনের ঝুকি নিয়ে রেল লাইন থেকে বৃদ্ধাকে বাঁচালেন এক ব্যাক্তি। আপন খেয়ালে বন্ধ রেল গেট টপকে তখন মাঝ ট্র্যাকে বৃদ্ধা লিলাদেবী গুপ্তা। হাতে সময় বলতে বড় জোর দু থেকে তিন সেকেন্ড। স্টপেজহীন ক্যারন স্টেশন পার করে আলিপুরদুয়ার জংশনগামী আপ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস তখন ওই ষাটোর্ধ মহিলার প্রায় গায়ের উপর। এমন সময়ে দেবদূতের মতো আবির্ভুত হয়ে তাঁকে কোলে তুলে লাইনের ওপারে নিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচালেন সঞ্জীব সুব্বা নামে এক ব্যক্তি। সঞ্জীবের নিজের জীবন বিপন্ন করেও আরেক জনের জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার এই কাহিনী এখন লোকের মুখে মুখে। ঘটনাটি ঘটে রবিবার নাগ্রাকাটা ব্লকের লুকসানে। সঞ্জীবের এই বীরত্বকে কুর্ণিশ জানাচ্ছে রেল মন্ত্রকও।
স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস পার হবে দেখে নির্ধারিত সময়েই লুকসানের রেল গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে দুই পাশে ধীরে ধীরে অপেক্ষমান যানবাহনের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এই সময়ে লুকসান বাজার থেকে লুকসান মোড়ের দিকে নিজের বাইকে চেপে যাচ্ছিলেন স্থানীয় সমাজসেবী হিসেবে পরিচিত সঞ্জীব সুব্বা। গেট বন্ধ থাকায় তিনিও দাঁড়িয়ে পড়েন। এরপরেই টানটান ক্লাইমেক্স এর শুরু।
সঞ্জীবের কথায়, ‘আমার সামনে তখন দুই তিনটি বাইক দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ রেল গেটের দুই পাশ থেকেই চিৎকার শুরু হয়। কী হয়েছে ভালোভাবে বোঝার আগেই দেখি দু দিকের গেটের ঠিক মাঝখানের রেল লাইন বরাবর এক মহিলা হতভম্ব অবস্থায় দাঁড়িয়ে। এদিকে ট্রেনের মুহুমুর্হু হুইসেল কানে বাজছে। কি হতে চলেছে তা আঁচ করে কোনরকমে বাইক স্ট্যান্ড করে গেটের তলা দিয়ে মায়ের বয়সী বৃদ্ধাকে কোলে তুলে যখন ঝুঁকির অংশ টুকু পেরিয়েছি ঠিক সেসময়ই ট্রেনটি পার হওয়া শুরু করে।‘ এতে অবশ্য বীরত্বের কিছু দেখছেন না তিনি নিজে। তিনি বলেন, ‘একজনের জীবন রক্ষা করতে পেরেছি এটাই আমার জীবনের বড় পাওনা।‘
আরও পড়ুন: Ketugram: ভোট পরবর্তী অশান্তির ঘটনা, মৃতের পরিবারকে হুমকির অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে
এদিকে আশপাশের অন্যরা তখন যেন ঠিক ঘোরের মধ্যে। খোদ গেটম্যান গোপাল মাহাতোর দশাও যেন ঠিক তাই। পরে তিনি বলেন, ‘মহিলাকে ওই অবস্থায় দেখে অন্যদের সাথে আমিও চ্যাঁচাতে থাকি। তখন হাতে আর বড়জোর দুই থেকে তিন সেকেন্ড সময় ছিল। এরপরে চোখের সামনে সঞ্জীব বাবু যা করলেন তা অবিশ্বাস্য।‘
আরও পড়ুন: Bengal Weather Update: দক্ষিণবঙ্গে বাড়বে বৃষ্টি, সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন লীলাদেবী গুপ্তা লুকসান মোড়ের দিক থেকে লুকসান বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। রেল গেট বন্ধ থাকলেও সম্ভবত বয়সজনিত কারনে ভালো মতো কিছু বুঝতে না পেরে তা তিনি উপেক্ষা করে বসেন।
ওই ঘটনার পর প্রশংসার বন্যায় ভেসে যাচ্ছেন সঞ্জীব। রবিবার রাতে লুকসানের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্দ্ধিত করা হয়। লীলাদেবীর ছেলে দেবরথ বলছেন, ঘটনার সময় আমি লুকসান মোড়ের বাড়িতে ছিলাম। মা যে কখন ওদিকে গিয়েছে তা জানতাম না। ঘটনার কথা শুনে রেল গেটে ছুটে যাই। মায়ের জীবন দান করা সঞ্জীব সুব্বার এই ঋণ কখনও শোধ করতে পারবো না।