TMC Clash: মালদহে তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে, প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মারধর!
মালদা জেলা বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক রূপেশ আগরওয়াল বলেন, দলের মধ্যে পদ দেওয়ার জন্য এরা টাকার লেনদেন করছে। সেই নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে গিয়ে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে
রণজয় সিংহ: পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রকাশ্যে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল। প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানকে মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠল প্রাক্তন তৃণমূল ব্লক সভাপতি এবং পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষের দলবলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ব্লক সভাপতি থাকাকালীন পদ পাইয়ে দেওয়ার জন্য ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। সেই নিয়েই চলছিল দ্বন্দ্ব। টাকা চাইতে গেলে দেওয়া হয়েছিল মিথ্যা মামলা। ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা এলাকায়। যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রাক্তন তৃণমূল ব্লক সভাপতি। পাল্টা প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানকেই দায়ি করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন- আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাড়তে হবে সরকারি আবাসন, মেহবুবা মুফতিকে নোটিস প্রশাসনের
এনিয়ে মুখে না বললেও অস্বস্তিতে শাসকদল। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের দৌলতনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান তথা বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য মোহাম্মদ নজিবুর রহমানকে রাতের অন্ধকারে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ও লোহার রড দিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠল হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি হজরত আলি এবং হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ সমাউন ইসলামের দলবলের বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে পার্শ্ববর্তী বাংরুয়া গ্রামে উরষ মেলা থেকে ফিরছিলেন মোহাম্মদ নজিবুর রহমান। সেই সময় মাঝ রাস্তায় তাকে আটকে দেয় হজরত আলির দুই ছেলে এবং সামাউন ইসলামের দলবল। মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে লোহার রড দিয়ে মারধর করে রক্তাক্ত করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বর্তমানে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
বিবাদের সূত্রপাত এক বছর আগে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নিয়ে। তৃণমূলেরই অন্যান্য পঞ্চায়েত সদস্যদের আনা অনাস্থার জেরে প্রধানের পদ খোয়াতে হয় মোহাম্মদ নজিবুর রহমানকে। অনাস্থা ভোটে তিনি হেরে যান পিন্টু যাদবের কাছে। সেই সময়েও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে শাসকদলের দুই পক্ষ। অভিযোগ তারপর বিরোধী দল নেতা করার নাম করে তার কাছ থেকে কুড়ি হাজার টাকা নিয়েছিলেন তৎকালীন ব্লক সভাপতি হজরত আলি। কিন্তু তিনি কাজ করে দিতে পারেননি। টাকা বারবার ফেরত চাইলে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। কিন্তু হজরত আলির পাল্টা অভিযোগ, তিনি কোনও টাকা নেননি। মোহাম্মদ নজিবুর রহমান প্রধান পদ হারিয়ে ভারসাম্যহীন হয়ে গেছেন। এর আগেও তিনি হজরত আলিকে শরীরিক নিগ্রহ করেছিলেন। তা নিয়ে মামলা রয়েছে। সবকিছু নিয়ে প্রকাশ্যে এসে পড়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘাত। হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি তবারক হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, দলে কোন রকম গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বা দুর্নীতি নেই। দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দলের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে মিটিয়ে নেওয়া হবে।
এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিজেপি। বিজেপির কটাক্ষ, যারা দলের মধ্যে পদের জন্য টাকার লেনদেন করে, আগ্নেয়াস্ত্র বোমা গুলি ব্যবহার করে তারা মানুষের জন্য কী করছে বোঝাই যাচ্ছে। অন্যদিকে, গোটা ঘটনা হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। আহত তৃণমূল নেতা তথা মোহাম্মদ নজিবুর রহমান বলেন, হজরত আলির দুই ছেলে এবং কৃষি কর্মাধ্যক্ষ সামাউন ইসলামের দলবল আমাকে মারধর করেছে। মাথায় বন্দুক ঠেকিয়েছে। লোহার রড দিয়ে মেরেছে। আমার কাছে হজরত আলী পদ দেওয়ার জন্য কুড়ি হাজার টাকা নিয়েছিল। সেটা আমি চাইছি বলেই ওদের রাগ।
অন্যদিকে, প্রাক্তন ব্লক সভাপতি হজরত আলি বলেন, দুর্নীতির জন্য ওর প্রধান পদ গেছে। সেই নিয়ে আমার উপর রাগ। আমি কোনও টাকা নিইনি। সকলে জানে আমি দুর্নীতিতে থাকি না। ও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গেছে। হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি তবারক হোসেন চৌধুরী বলেন, দলের মধ্যে কোন দুর্নীতি বা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। নজিবুর রহমান যেটা অভিযোগ করেছে সেটা খতিয়ে দেখে দলের মধ্যেই মিটিয়ে নেওয়া হবে।
উত্তর মালদা জেলা বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক রূপেশ আগরওয়াল বলেন, দলের মধ্যে পদ দেওয়ার জন্য এরা টাকার লেনদেন করছে। সেই নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে গিয়ে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে। সাধারণ মানুষের জন্য এরা কি করে সেটা বোঝা যাচ্ছে। মানুষ সব দেখছে জবাব দেওয়ার অপেক্ষা করছে। প্রসঙ্গত পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে উন্নয়নকে হাতিয়ার করেছে শাসকদল। কিন্তু দুর্নীতি থেকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কিছুতেই যেন পিছু ছাড়ছে না তাদের। বারবার সামনে এসে পড়ছে অভ্যন্তরের সংঘাত। এই ধরনের ঘটনা সাধারন মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক ওয়াকিবহল মহল।