Katwa: মানুষ আর প্রকৃতির জোড়া থাবায় আক্রান্ত শীতের খেজুর গুড়, পাটালি...
Katwa Khejure Gur: 'তুমি আর নেই সে তুমি'! বিখ্যাত বাংলা গান। তবে সেই গান মানুষ এখন গুন গুন করছেন হয়তো সম্পূর্ণ ভিন্ন আবহে। শীত এসেছে, বাজারে এসেছে নতুন গুড়, পাটালি, নতুন গুড়ের সন্দেশ-রসগোল্লাও। কিন্তু সেই স্বাদ আর নেই! নেই সেই মন-মাতানো গন্ধও। কেন?
সন্দীপ ঘোষ চৌধুরী: 'তুমি আর নেই সে তুমি'! বিখ্যাত বাংলা গান। তবে সেই গান মানুষ এখন গাইছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন আবহে। শীত এসেছে, বাজারে এসেছে নতুন গুড়, পাটালি এবং নতুন গুড়ের সন্দেশ-রসগোল্লাও। কিন্তু সেই স্বাদ আর নেই! নেই সেই মন-মাতানো গন্ধও। কেন? প্রথমত, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। দ্বিতীয়ত, একশ্রেণির ব্যবসায়ীর অসাধুতা। এইসব কারণে নলেন গুড়ের স্বাদ হারিয়ে যাচ্ছে। একই ছবি পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায়। সেখানেও গুড়ের স্বাদগন্ধের খামতি নিয়ে অভিযোগ তুলছেন খোদ শিউলিরাই।
আরও পড়ুন: Bankura: পোড়ানো হল ১০ বছর ধরে জমে থাকা হাতির ৬০ দাঁত! কেন?
কী বলছেন শিউলিরা? তাঁদের অভিযোগ, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে ভেজাল গুড়ের বাড়বাড়ন্ত কাটোয়ায়। তাই খাঁটি খেজুর গুড়ের ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম সংকটে। খাঁটি খেজুর গুড়ের অভাবে কাটোয়ার খেজুর গুড় বা নলেন গুড়ের দীর্ঘ ঐতিহ্য লুপ্ত হতে বসেছে। আর সেই ছিদ্রপথে ঢুকে পড়ছে ভেজাল গুড়। খেজুরের অল্প রসের সঙ্গে চিনি, চুন মিশিয়ে চলছে সেই ভেজাল নতুন গুড় তৈরি। সেই গুড়ই ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিকোচ্ছে। সেই গুড়েই আমবাঙালির রসনাতৃপ্তি হচ্ছে। ভেজাল গুড়ের এই দাপটে কাটোয়া মহকুমার কয়েকশো শিউলি কার্যত কোণঠাসা অবস্থায়।
শীতকাল মানেই পিঠে-পুলি, সঙ্গে অপূর্ব স্বাদ-গন্ধের খেজুর গুড় বা নলেন গুড় বা পাটালি। শীত-আমোদী বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে খেজুর গুড়ের গুরুত্ব অনেকটা জায়গা জুড়ে বিদ্যমান। খেজুর গুড়ের পায়েস, রসগোল্লা সন্দেশ বাঙালির খুবই প্রিয় পদ।
কিন্তু হালে কী ভাবে তৈরি হচ্ছে বাঙালির প্রাণপ্রিয় সেই খেজুর গুড়?
হাল আমলের সেই নতুন গুড় তৈরি হচ্ছে খেজুর গাছের গেঁজে যাওয়া রসে অনেকটা চিনি ও চুন মিশিয়ে। হিসেবটা মোটামুটি এরকম-- ১ কেজি রসে ১০ কেজি চিনি ২০০ গ্রাম খাবার চুন; গুড়ের লালচে রঙটা আনার জন্য সঙ্গে মেশানো হচ্ছে চিনি পুড়িয়ে তা মিশিয়ে তৈরি করা লাল জল। শুধু তাই নয়, রস কম পড়লে রসের বদলে কলের জলই মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে অবলীলায়।
খাঁটি খেজুড় গুড়ের ব্যবসায়ীদের দাবি, চল্লিশ বছর আগেও এভাবে বিকোত না ভেজাল খেজুর গুড়। এখন দাম কম হওয়ার জন্য সাধারণ মানুষও না জেনে-বুঝেই ভেজাল গুড়ের প্রতিই ঝুঁকছেন!আর ভেজাল গুড়ের দাপটে কাটোয়ার আসল স্বাদগন্ধের খেজুর গুড় তার অস্তিত্ব সংকটে।
অবশ্য একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীদের কাঁধেই শুধু বন্দুক রাখছেন না শিউলিরা। এক অংশের শিউলির দাবি, আবহাওয়াও খেজুর গুড়ের স্বাদ ও গন্ধের এই খামতির একটা বড় কারণ। তাঁদের মতে, উৎকৃষ্ট মানের খেজুর গুড় পেতে গেলে গাছকে কয়েকদিন অবসর দেওয়ার নিয়ম। তা ইদানীং দেওয়া হচ্ছে না। খেজুর গাছে রস সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনও নিয়মই ইদানীং মানা হয় না। সেই কারণে রসের মান কমেছে, পাল্লা দিয়ে গুড়েরও মান নেমেছে।
আরও পড়ুন: Jalpaiguri: ভরা শীতেই শুরু হয়ে গেল প্রায় ২৫০ বছরের দুর্গাপুজো!
গ্রামবাংলার প্রায় সমস্ত অঞ্চলে খেজুর গুড়ের 'মেকিং' মোটামুটি একই। সর্বত্র স্থানীয়ভাবেই এই গুড় তৈরি হয়। তা হলেও নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকায় গুড়ে একটা স্বকীয়তা থেকে যায়। স্বাদগন্ধের ফারাক গড়ে দেয় সেটাই। কাটোয়া অঞ্চলের গুড় তেমনই। কাটোয়ায় নদীর নদীতীরবর্তী এলাকার খেজুর গাছে উৎকৃষ্ট মানের রস জন্মায়। এটা প্রকৃতিরই দান। এর উপর কারও হাত নেই। রসের মান ভালো হওয়ায় গুড়ের মানও ভাল হয়। কিন্তু ইদানীং আবহাওয়ার দিক থেকেও নানা ছন্দপতন ঘটছে। ফলে এ অঞ্চলের রসের মান আর আগের মতো নেই। আর সেই ছিদ্রপথেই ঢুকে পড়ছেন অসৎ ব্যবসায়ীরা। তাঁদের উপদ্রবে বাঙালি উৎকৃষ্ট খেজুর গুড় থেকে বঞ্চিত হতে বসেছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)