হিসেব কষেই কি হিন্দি! একুশের ভোটের আগে হিন্দি সেল তৈরি করল তৃণমূল
একুশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে হিন্দি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের এমন বার্তা নয়া মাত্রা যোগ দেবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল
নিজস্ব প্রতিবেদন: টুইটে হিন্দি দিবসের শুভেচ্ছা বার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, রবি ঠাকুরের 'বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের' ভাবনা নিয়েই বাংলা বরাবর অন্তর্ভুক্তিকরণের পথে হেঁটেছে। হিন্দি শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং কল্যাণমূলক কাজে তাঁর সরকারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । এর পাশাপাশি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের কাছে টুইটে আর্জি জানান, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-তে বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
একুশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে হিন্দি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের এমন বার্তা নয়া মাত্রা যোগ দেবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কারণ স্পষ্ট। শুধু টুইটেই সীমাবদ্ধ নেই সরকার। দলের তরফেও তত্পরতা দেখা গেল তুঙ্গে। হিন্দি দিবসের দিনে ফের আরও একবার হিন্দি সেল তৈরি করল তৃণমূল। এই সেলের চেয়ারম্য়ান করা হয়েছে প্রাক্তন সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীকে। সভাপতি হলেন বিবেক গুপ্ত। কিন্তু হঠাত্ করে হিন্দি নিয়ে তৃণমূলের তত্পরতায় 'রাজনীতির' গন্ধ পাচ্ছেন বিরোধীরা।
GoWB has constantly persevered to undertake inclusive development for all by giving recognition to Hindi, Urdu, Gurmukhi, Ol Chiki, Rajbanshi, Kamtapuri, Kurukh languages. I urge the Centre to follow suit by also including Bengali as a classical language in NEP 2020. (2/2)
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) September 14, 2020
লক্ষ্য, বাংলার পাশাপাশি হিন্দিকেও সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া। তবে, বড়বাজার-সহ কলকাতার হিন্দি বলয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না তৃণমূল। জেলায় জেলায় তৈরি হবে হিন্দি সেল। কিন্তু হঠাত্ হিন্দি নিয়ে এত হইচই কেন? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, হিন্দি বলয় মানেই বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক। পশ্চিমবঙ্গে ২৯৪ বিধানসভা আসনের মধ্যে কমপক্ষে ৭০ আসনে হিন্দি ভাষার আধিক্য রয়েছে। বিজেপির ১৮টি লোকসভা আসন জেতার পিছনে এই ফরমুলা কাজ করেছে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি। সেখানেই এবার আঘাত হানতে চাইছে তৃণমূল।
অন্যদিকে, ভোটের মুখে বাঙালিয়ানায় ফিরতে চাইছে বিজেপি। বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমের পাশাপাশি ঈশ্বরচন্দ্রও এখন বিজেপি মণীষীদের তালিকায় বিরাজ করছেন। বাংলায় অবাঙালি ভোটের অধিকাংশটাই তাদের দখলে বলে মনে করে বিজেপি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সেখানেই তৃণমূল চাইছে থাবা বসাতে। সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির পাশাপাশি, দুর্গাপুর, আসানসোল-সহ হিন্দি বলয়ে তত্পরতার সঙ্গে কাজ করতে চাইছে তৃণমূল।
হিন্দি ভাষায় গুরুত্ব দেওয়ার পিছনে কোনও রাজনীতি নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন হিন্দি সেলের চেয়ারম্যান দীনেশ ত্রিবেদী। তিনি মনে করেন, বাংলা সংস্কৃতির মধ্যেই রয়েছে হিন্দি। বাংলা এবং হিন্দিতে পরের বছর JEE-NEET হওয়ার দাবি জানান তিনি। ওই সেলের সভাপতি বিবেক গুপ্ত জানিয়েছেন, ভাষায় কোনো রাজনৈতিক দলের একচ্ছত্র আধিপত্য নেই । সব মানুষকে একসঙ্গে জুড়তেই এই সেলের লক্ষ্য।
আরও পড়ুন- সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল বিধায়কের ভিডিয়ো, গোষ্ঠী কোন্দলে সরগরম জেলা তৃণমূল
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসর পর পর হিন্দি সেল তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেভাবে দানা বাঁধেনি। এই মুহূর্তে বিজেপির ঝোলায় ১৮টি লোকসভা আসন। হিন্দি যে বিজেপি ভোটব্যাঙ্কের একটা ফ্যাক্টর সে কথা মেনে নিচ্ছেন তৃণমূল অন্দরে অনেকেই। এখনই ঝাঁপ না দিলে একুশের বৈতরণী পার করা যাবে না। সে কথা মাথায় রেখেই কি হিন্দি নিয়ে হইচই। এই জল্পনাই এখন ঘুরছে রাজনৈতিক মহলে।