#উৎসব: দু'শো বছরের গনুয়ার কালীপুজোয় আজও হয় ১০০০ ছাগবলি!
সন্ন্যাসী বললেন, এখানে যে পাথর রয়েছে তা কোনদিনও তোলা যাবে না, এর উপরই মূর্তি হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: মাত্র কয়েকবছর হল তৈরি হয়েছে মন্দির। এখনও মন্দিরের সব কাজ সম্পন্ন হয়নি। তার মধ্যেই চলছে পুজো। তার আগে এখানে খোলা আকাশের নীচেই পূজিতা হতেন দেবী।
এই দেবী ২০০ বছর ধরে পূজিতা হচ্ছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের ১৫ নম্বর কুসবশান অঞ্চলে। তিনি এখানে পরিচিত গনুয়ার মা শ্মশানকালী হিসেবে। বলা হয়, দেবী এখানে জাগ্রতা। তাঁর নানা দৈবী ঘটনা প্রচলিতও লোকমুখে।
আরও পড়ুন: #উৎসব: কালীপুজোর রাত আলোয় আলো! শ্যামাপুজো কেন দীপান্বিতা?
এই দেবী জমিদার পঞ্চানন সাহু, দেবেন্দ্রনাথ সাহু, রাজেন্দ্রনাথ সাহু পরিবারে আবির্ভূত। কথিত আছে, সাহু পরিবারের এক মেয়ে একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। যা ক্রমে দুরারোগ্য ব্যাধিতে পরিণত হয়েছিল। চিকিৎসার জন্য মেয়েকে কলকাতা নিয়ে যায় সাহু পরিবার। শুধু কলকাতাই নয়, রাজ্যের বহু জায়গাতেই আরোগ্যের আশায় মেয়েকে নিয়ে দৌড়ন তার বাবা-মা। কিন্তু কোনও লাভ হয় না। অবশেষে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথ ধরেন তাঁরা। ফেরার পথে ফের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে মেয়েটি। শোকে ভেঙে পড়ে পরিবারের নিরুপায় লোকজন। তখনই সাহু পরিারের কর্তা এক স্বপ্নাদেশ পান। সেই স্বপ্নাদেশে বলা হয়-- অসুস্থ মেয়েকে কোথাও নিয়ে গিয়ে লাভ হবে না তোদের। মেয়েকে যদি সুস্থ করতে হয় তা হলে গনুয়া যা। ওখানে তোদের জায়গায় মাটি চাপা আছি আমি। সেখান থেকে আমাকে বের কর। আমার পুজো শুরু কর। এই স্বপ্নাদেশ পেয়ে পরিবারের লোকজন তৎক্ষণাৎ আজ যে জায়গায় গনুয়ার মন্দির স্থাপিত সেখানে যান। সেই সময়ে সেখানে এক নাগা সন্ন্যাসী এসে শ্মশানের উপরে পাঁচটি মানুষের খুলি রেখে সাধনা করছিলেন। সাহু পরিবারের সদস্যরা তাঁকেই সব কথা বললেন। সেই সন্ন্যাসী তাঁদের শ্মশানে দৈনন্দিন পুজো করার নির্দেশ দেন। বাঘ, ভাল্লুকে ভরা গভীর জঙ্গল কেটে শুরু হয় খননকার্য। পাওয়া যায়-- দুটি কালো পাথর আর একটি ত্রিশূল। আর তাতেই ভক্তি ভরে মায়ের পুজো শুরু করেন সাহু পরিবারের লোকজন। সেই থেকে এখানে পাথরের উপর ত্রিশূল ও পরে কালীমায়ের ফোটো বসিয়ে পুজো শুরু হয়। আজও এখানে কালী মায়ের মূর্তি পূজা হয় না।
যাই হোক, পুজো শুরু হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই অসুস্থ মেয়েটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। এতজন ডাক্তার বৈদ্য যে মেয়েকে সুস্থ করতে পারেননি দুটি পাথরের পুজো করার পরেই সুস্থ হয়ে ওঠে সেই মেয়ে, জেনে সকলে আশ্চর্য হয়ে যান! আর এই খবর যখন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তখন মানুষ নিজেদের অসুবিধার কথা জানিয়ে মায়ের কাছে মানত করতে শুরু করেন। মনস্কামনা পূর্ণের লক্ষ্যে ছাগবলির মানত করেন মানুষ। এই রীতি মেনে আজও এখানে পুজোর দিন ১০০০-এর বেশি ছাগবলি হয়। কথিত আছে, যাঁরা মায়ের কাছে মানত করেন সকলেরই মনস্কামনা পূর্ণ করেন গনুয়ার মা কালী।
জমিদারবাড়ির বর্তমান সদস্য স্বপন সাহু বলেন-- এখানে এককালে শ্মশান ছিল। জঙ্গলে ঘেরা ছিল গোটা এলাকা। এখানে ছিলেন এক নাগা সন্ন্যাসী। তিনি এই জায়গায় এসে জপতপ শুরু করেছিলেন। তিনিই জমিদারকে বলেছিলেন, এখানে যে পাথর রয়েছে তা কোনদিনও তোলা যাবে না। পাথরের নীচে মায়ের অধিষ্ঠিত জাগ্রত মূর্তি আছে। ওপরের পাথর থাকবেই। তারই উপর মূর্তি হবে।
এ হেন ঐতিহ্যবাহী পুজো বিগত বেশ কয়েকবছরে সার্বজনীন পুজোয় পরিণত হয়েছে। এই পুজো সার্বজনীন রূপ পাওয়ার পর গ্রামের মানুষ এবং পুজো কমিটি প্রশাসনের কাছে একটি মন্দির তৈরির আবেদন জানান। প্রশাসন এবং গ্রামবাসীদের উদ্যোগে অবশেষে মায়ের সেই মন্দির নির্মিত হতে শুরু হয়। চার বছর ধরে নির্মীয়মাণ সেই মন্দিরেই পূজিতা হচ্ছেন গনুয়ার জাগ্রত শ্মশান কালীমা।
(Zee 24 Ghanta App: দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)