ঢাকায় ধরা পড়ল ভারতীয় জাল নোট তৈরির কারখানা, গ্রেফতার ৩

প্রশ্ন উঠছে, এই বিপুল পরিমাণ ভারতীয় নোটে ব্যবহৃত বিশেষ স্ট্যাম্প-যুক্ত ফয়েল পেপার কী করে পৌঁছল বাংলাদেশের জাল নোট কারবারিদের হাতে!

Edited By: সুদীপ দে | Updated By: Jul 16, 2019, 04:52 PM IST
ঢাকায় ধরা পড়ল ভারতীয় জাল নোট তৈরির কারখানা, গ্রেফতার ৩
ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব প্রতিবেদন: কড়কড়ে নতুন পাঁচশো-দু’হাজার টাকার নোট। ফ্ল্যাট ভর্তি থরে থরে টাকা। পুরোটাই জাল ভারতীয় নোট। খোদ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেই চলত ভারতীয় জাল নোট তৈরির কারখানা। সোমবার ঢাকার রামপুরায় একটি ফ্ল্যাট থেকে ২১ লাখ টাকার জাল ভারতীয় নোটসহ চক্রটির তিন সদস্যকে গ্রেফতার করল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিস।

সূত্রপাত ৯ জুলাই। ওই দিন রামপুরার উলন রোডের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিস। সেখানে ভারতীয় নোট বানাতে ব্যবহৃত ফয়েল উদ্ধার হয়। সেই ফয়েল পেপারের সূত্র ধরে জাল ভারতীয় নোট বানানোর কারখানাটির সন্ধান পায় পুলিস। খবর আসে, ঢাকার রামপুরার একটি আবাসিক বাড়ির আট তলার ফ্ল্যাটে রমরমিয়ে চলছে জাল নোট তৈরির কারখানা। পরিকল্পনামাফিক সোমবার সকালে সেখানে অভিযান চালায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) উত্তর বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিম। হাতে-নাতে পাকড়াও করা হয় জাল নোট চক্রের তিন সদস্যকে। ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় প্রায় ২১ লাখ টাকার জাল নোট। পুরোটাই ৫০০ ও ২০০০ টাকার নোট। ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি ল্যাপটপ, একটি কালার প্রিন্টার এবং একটি লেমিনেটিং মেশিন। তা ছাড়া জাল নোট তৈরির বিপুল পরিমাণ কাগজ, বিশেষ কালি, সিকিউরিটি সিল-যুক্ত স্ক্রিন বোর্ড, গাম ও জাল রুপি তৈরির জন্য ব্যবহৃত সিল মারা ফয়েল পেপার উদ্ধার করা হয়।

চকচকে নতুন সব নোট। বাংলাদেশি কোনো টাকার নোট নয়, সবই ভারতীয় রুপি। নিখুঁত এর কারুকাজ। খালি চোখে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে, এগুলো ভারতীয় জাল রুপির নোট। এসব জাল নোট তৈরির করা হতো রাজধানী ঢাকার রামপুরা এলাকার একটি বাড়িতে। রীতিমতো কারখানা করে এখানে জাল রুপি তৈরি করত একটি চক্র।

এই কারখানা থেকে ২১ লাখ জাল রুপির নোটসহ চক্রটির তিন সদস্যকে আজ সোমবার গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) উত্তর বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিম। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন রফিকুল ইসলাম খসরু, মো. আব্দুর রহিম ও জনি ডি কস্তা। এদের কাছ থেকে পাওয়া ২১ লাখ রুপির সবই ৫০০ ও ২০০০ রুটির নোট। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে জাল রুপি তৈরির কাজে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, একটি কালার প্রিন্টার, একটি লেমিনেটিং মেশিন, জাল রুপি তৈরির বিপুল পরিমাণ কাগজ, প্রিন্টারে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কালি, সিকিউরিটি সিল সংবলিত স্ক্রিন বোর্ড, গাম ও জাল রুপি তৈরির জন্য ব্যবহৃত সিল মারা ফয়েল পেপার উদ্ধার করা হয়।

ডিবির উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, গত ৯ জুলাই রামপুরার উলন রোডের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে জাল বাংলাদেশি টাকা তৈরির একটি কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে উদ্ধার হওয়া ভারতীয় রুপি তৈরিতে ব্যবহৃত বিশেষ ফয়েল পেপারের সূত্র ধরে জাল ভারতীয় রুপি তৈরির কারখানাটির সন্ধান পায় ডিবি। রামপুরার পলাশবাগ মোড়ের একটি আবাসিক ভবনের অষ্টম তলার একটি ফ্ল্যাটে কারখানাটি ছিল। সেখানে আজ সকালে অভিযান চালিয়ে ২১ লাখ জাল রুপির নোটসহ এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আরও পড়ুন: লেভেল ক্রসিং-এ গাড়িতে ট্রেনের ধাক্কা, নিহত বর-কনে-সহ ১১

প্রশ্ন উঠছে, এই বিপুল পরিমাণ ভারতীয় নোটে ব্যবহৃত বিশেষ স্ট্যাম্প-যুক্ত ফয়েল পেপার কী করে পৌঁছল বাংলাদেশের জাল নোট কারবারিদের হাতে। কী ভাবে নোট তৈরির বিশেষ কাগজ তাদের হাতে এল, তাই নিয়ে ঘনাচ্ছে রহস্য।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি মশিউর রহমান জানান, ইদ উপলক্ষে ভারত থেকে পোশাক ও কোরবানির গরু আমদানি করা হয়। সুযোগ বুঝে চক্রটি জাল রুপি তৈরি করে সীমান্ত এলাকায় পাচারের চেষ্টা করছিল। ঢাকায় জাল ভারতীয় নোট তৈরি করে তা সরবরাহ করা হত সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর ইত্যাদি জায়গায়। মূলত অসাধু ব্যবসায়ীরা এই নোট কিনত বলে জানায় গ্রেফতার হওয়া চক্রের সদস্যরা। জাল নোট ব্যবহার করে ভারত থেকে দ্রব্য আমদানি করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এর আগেও একাধিক বার জাল নোট তৈরির অভিযোগে গ্রেফতার করার হয়েছিল এই তিনজনকে। তবে প্রতিবারই জামিনে বের হয়ে জাল নোটের কারবারে ফিরে আসে তারা।

.