নিজের Cross পিঠে নিয়ে অমৃতের দিকে হেঁটে গেলেন এক দেবতার ছেলে
গড'স ফ্রাইডে-ই কি গুড ফ্রাইডে-তে পরিণত হল? তর্ক জারি পণ্ডিতমহলে।
সৌমিত্র সেন
কাঁটার মুকুট তাঁর মাথায়, বয়ে নিয়ে চলেছেন ভারী ক্রুশকাঠ। ওতেই ক্রুশবিদ্ধ করা হবে তাঁকে। রাজদ্রোহের অভিযোগে তাঁকে বন্দি করা হয়েছে। তিনি নাজারেথের যিশু। তিনি ঈশ্বরপুত্র। তিনি দু'হাত ভরে শুধু প্রেম এনেছিলেন মানুষের জন্য। প্রেমের মধ্যে দিয়েই তাঁর সাধন। কিন্তু সেই সময়ের শাসক বোঝেনি তাঁর মহিমা। তাঁকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করেছিল। তাই ঠিক করেছিল, প্রতিদ্বন্দ্বীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
সরিয়ে তিনি দিলেন। কিন্তু এরপর থেকে যিশু (JESUS) বিশ্ব জুড়ে মানুষের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলেন। রক্তক্ষরণের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা যিশুর সংক্ষিপ্ত জীবনটুকু যেন এক আলোকবর্তিকা।
আরও পড়ুন: সঙ্ঘজননী সারদাদেবী, এক শাশ্বত মাতৃমূর্তি
প্রতি ইস্টারের আগের শুক্রবার হল গুড ফ্রাইডে (Good Friday)। গোটা বিশ্বের খ্রিস্ট-প্রাণিত মানবগোষ্ঠার মধ্য়ে এই দিনটি যথোচিত মর্যাদা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হয়। এদিন অনেকেই উপবাস করেন।
দিনটিকে 'গুড' বলা হয়, কিন্তু দিনটি আসলে রক্তাক্ত। সালটি নিয়ে দ্বিমত আছে। তবে তা হয় ৩৩, না হয় ৩৪ খ্রিস্টাব্দ। মাসটি এপ্রিলই। আদি তারিখ ছিল ৩। কী ভাবে রক্তাক্ত দিনটি 'গুড' হল, তা নিয়ে ব্যাখ্যা আছে। বলা হয়, God’s Friday-ই কথায়-কথায় Good Friday হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যরা বলেন, দিনটি আসলে পবিত্র ,'holy'। সেই পবিত্র দিনটিই প্রকারান্তরে 'good'হয়ে উঠেছে। প্রসঙ্গত, এদিনটিকে Black Fridayবা Sorrowful Friday-ও বলা হয়।
গুড ফ্রাইডে-তে যিশু ক্রুশবিদ্ধ হন এবং রবিবার তাঁর রেজারেকশান বা পুনরুত্থান ঘটে। যিশুর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগেই তাঁকে ধরা হয়। শাস্তি দেওয়া হয়। শাস্তির দিন যিশুকে নিজেকেই নিজের ক্রুশটি পাহাড়ে বয়ে নিয়ে যেতে হয়েছিল। তাঁকে ক্রুশ বহনে সাহায্য করেছিলেন সিমন। বিদ্ধ হওয়ার পরে ছ'ঘণ্টা যিশু ক্রুশে যন্ত্রণা ভোগ করেন। তৃতীয়দিন, রবিবার তিনি পুনরুত্থিত হন।
জীবনানন্দ দাশ তাঁর একটি কবিতায় লিখেছিলেন-- 'আর ওই দেবতার ছেলে এক ক্রুশ তার বুকে,/ সে শুধু জেনেছে ব্যথা, ক্রুশে শুধু যেই ব্যথা আছে!/...এ হৃদয়ে নাই কোন ক্রুশ কাঠ ধরিবার সখ,/ ..... শীতল করিতে পার, ক্রুশ, তুমি আমার উত্তাপ'
ক্রুশের ব্যথা সাধারণের বোঝার কথা নয়। তার যন্ত্রণা অসীম। 'দেবতার ছেলে' যিশু নিজের সেই যন্ত্রণার অমেয় গরল পান করে মানবজাতিকে শুধু অপরিমেয় অমৃতই দিয়ে গেলেন। তপ্ত ক্ষুব্ধ মানবজীবনের উপর ছড়িয়ে দিলেন অপার শান্তি।
আরও পড়ুন: তাঁর নিবিড় সাধনতন্ত্রে মিশে থাকত গণ-তন্ত্রের নিভৃত ধারাও