১১৫ জনকে হত্যা করেছিলেন সে দিন, এই অলিম্পিক্সে কী করবেন কিম?
পিয়ংইয়াং ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী কিমের হঠাত্ ডাক পড়ে অধ্যক্ষের অফিসে। সেন্ট্রাল পার্টি থেকে আসা এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় করে দেন অধ্যক্ষ। দেশের জন্য কাজ করতে হবে তাঁকে এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদন: শীতকালীন অলিম্পিক্স আর এক সপ্তাহ বাকি। এখন দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচ্যাং-এ সাজো সাজো রব। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে সেখানে। তবে, অলিম্পিক্সের উদ্বোধনী দিন যত এগিয়ে আসছে, দক্ষিণ কোরিয়ার এক মহিলার হৃদস্পন্দনও তত দ্রুত গতিতেই বাড়ছে। ছিঁড়ে যাচ্ছে নার্ভগুলো। মস্তিষ্কের ভিতর কিলবিলিয়ে উঠছে ৩০ বছরের পুরনো স্মৃতি। কুরে কুরে খাচ্ছে বিবেক যন্ত্রণা। বলছে, 'আমার এই পাপ ক্ষমার যোগ্য? তারা হয়ত কোনও দিন ক্ষমা করবে না...।'
আরও পড়ুন- হাই প্রোফাইল প্রাইভেট পার্টিতে যেতে অস্বীকার, গুলিতে ঝাঁঝরা পাক অভিনেত্রী
আজ দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক কিম হিয়ন-হুই। কিন্তু বছর ৩০ আগে তিনি ছিলেন প্রতিবেশী 'শত্রু' দেশের আদি বাসিন্দা। উত্তর কোরিয়ার গুপ্তচর হিসাবে কাজ করতেন কিম। সেই গুপ্তচরই একদিন এমন কাণ্ড ঘটালেন যা দেখে বিশ্ব হতবাক! কয়েক সেকেন্ডে ১১৫ জনকে হত্যা করলেন তিনি। মাঝ আকাশে বিমান উড়িয়ে দিলেন ওই মহিলা।
কেন? কারণ একটাই ১৯৮৮ সালে সিওলের অলিম্পিক্স ভেস্তে দিতে চেয়েছিল উত্তর কোরিয়া। যদিও তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
কিম এখন দু'সন্তানের মা। রোজ নিয়ম করে গির্জায় যান। সেদিনের বিভীষিকাময় স্মৃতিকে মুছে ফেলতে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন কিম। কিন্তু ক্ষত এতটাই দগদগে যে প্রতি মুহূর্তে তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়। এবারের শীতকালীন অলিম্পিক্স তাই নুনের ছিটে মতো জ্বলছে। বারবার ফিরে যাচ্ছেন সেই ৩০ বছর আগের ঘটনায়...!
পিয়ংইয়াং ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী কিমের হঠাত্ ডাক পড়ে অধ্যক্ষের অফিসে। সেন্ট্রাল পার্টি থেকে আসা এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় করে দেন অধ্যক্ষ। দেশের জন্য কাজ করতে হবে তাঁকে এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে কিম পৌঁছন একেবারে ফাইনাল স্টেজে। সেখানেও পাশ করেন কিম। সেন্ট্রাল পার্টির এক ব্যক্তি জানান, "পার্টি তোমায় নির্বাচিত করেছে।" ১৯৯১ সালে প্রকাশিত একটি বইতে তিনি লিখছিলেন, সম্মতি না থাকলে বাধ্য হয়েই পরিবারকে সেদিন চিরতরে গুডবাই জানিয়ে ছিলাম।
আরও পড়ুন- ফের ফসকে গেল! মেলানিয়ার হাত ধরতে পারলেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প
সেদিনও জানতেন না কী কাজ দেওয়া হচ্ছে কিমকে। উত্তর কোরিয়ার সেনা বাহিনীতে যোগ দেন কিম। চলে আরও কঠোর অনুশীলন। শিখতে হয় জাপানি ভাষা। তাঁর জন্য জাল পাসপোর্টও তৈরি হয়। একটি ভুয়ো নামও পেলেন- মায়ুমি হাচিয়া। আর এক জন ব্যক্তিকে তাঁর সঙ্গে নিযুক্ত করা হয়। কিমের বাবা হিসাবে দেখানো হয় তাঁকে। এরপর একদিন গোটা মিশন সম্পর্কে জানানো হয় কিমকে। কিম তাঁর বইতে লিখছেন- এক উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা তাঁকে বলেন, "উড়িয়ে দিতে হবে বিমান। সিওলে হতে চলা অলিম্পিক্স বন্ধ করাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।" এই নির্দেশ স্বয়ং পাঠিয়েছিলেন উত্তর কোরিয়ার তত্কালীন রাষ্ট্রপতি কিম ইল সাং-র পুত্র কিম জং ইল। যিনি পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপতি হন।
কিম কিন্তু তখনও বুঝতে পারেননি এত মানুষকে হত্যা করতে হবে তাঁকে। মিশন শুরুর আগে দু'জনকে সায়ানাইড-সিগারেট দেওয়া হয়। নির্দেশ ছিল ধরার পড়ার আগেই এই সিগারেট খেয়ে আত্মঘাতী হতে হবে। কোনও তথ্য যেন ফাঁস না হয়। জাপানি পর্যটক সেজে বাগদাদ থেকে কোরিয়ার বিমানে ওঠেন তাঁরা। সঙ্গে ছিল টাইম বোমার সরঞ্জাম। বাগদাদ থেকে বিমান ছাড়তেই টাইম বোমা সক্রিয় করে দেন কিম। আবু ধাবিতে বিমান একবার অবতরণ হয়। সেখানে বেশির ভাগ দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকই ওঠেন। তবে, আবু ধাবিতে কিম এবং তাঁর সহকর্মী নেমে পড়েন। সিওলের দিকে রওনা দেয় এয়ার ফ্লাইট ৮৫৮। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। আন্দামান সাগরের উপর মাঝ আকাশে ভেঙে পড়ে বিমানটি। মারা যান ১১৫ জন।
আরও পড়ুন- গ্রেফতার প্রধান দেশের বিচারপতি; জারি জরুরি অবস্থা, তীব্র রাজনৈতিক সংকটে মালদ্বীপ
বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই প্রত্যেক বিমানবন্দরেই জারি হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আবু ধাবি থেকে বেরনোর সময় কিম ধরা পড়ে যান। কিমের সহকর্মী গ্রেফতার হওয়ার আগেই সায়ানাইড-সিগারেট খেয়ে আত্মঘাতী হন। কিম চেষ্টা করলেও পারেননি। এরপর কিমকে নিয়ে আসা হয় দক্ষিণ কোরিয়ায়। চলে রাতভর জেরা। কিম যাতে দাঁতে জিভ না কেটে ফেলে তার জন্য চোয়াল ফাঁক করে রাখা হত সবসময়। এক সপ্তাহ পর দোষ স্বীকার করেন কিম। এরপর কারাবাস।
জেলমুক্তির পর কিম দক্ষিণ কোরিয়ায় থেকে গিয়েছেন। তিনি বলেন, "উত্তর কোরিয়া কিম ইল সাং-এর রোবট ছিলাম। কিন্তু এখানে আমি নতুন জীবন পেয়েছি।"
আরও পড়ুন- সিপেকে বড়সড় আঘাত হানার পরিকল্পনা ভারতের! শঙ্কায় পাকিস্তান
প্রসঙ্গত, এবারের শীতকালীন অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করছে উত্তর কোরিয়া। তাই কিমের মন বলছে, লেগেছে বিষম চোট, কী জানি কী হয়...