জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: দিকে-দিকে জলশূল্যতার বার্তা, খরার আভাস, নদীর মৃত্যুসংবাদ, জলের উৎস শুকিয়ে যাওয়ার মন-খারাপ করা খবর। সম্প্রতি তেমনই খবর মিলেছে ভুটান থেকে। জানা গিয়েছে, ভুটান জুড়ে শুকিয়ে যাচ্ছে শতাধিক নদী, হ্রদ, খালবিল, সেচ ক্যানাল। এজন্য ভুটানের বিভিন্ন প্রান্তে পানীয় জলের সংকটও দেখা দিচ্ছে। শুধু ছোট নদী নয়, জল কমছে বড় নদীগুলিতেও। তাই ধীরে ধীরে বড় মাপের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে ভুটান। সম্প্রতি ভুটানের ওয়াটারশেড ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের গোপন এক রিপোর্টের কিছু অংশ প্রকাশিত হয়েছে।
কী বলছে ওই রিপোর্ট?
ওই রিপোর্ট বলছে, ভুটানের ডাগানা জেলায় অস্তিত্ব-সংকটে ২৮৪ টি জলের উৎস। যার মধ্যে রয়েছে ১৫০ টিরও বেশি ছোট-বড় নদী। এছাড়া রয়েছে হ্রদ, ঝোরা, সেচখাল। ১৬টি নদী পুরোপুরি শুকিয়ে গিয়েছে। যেটা সব থেকে ভয়ের, তা হল, গত কয়েক বছরে বর্ষার মরসুমেও সেগুলি থেকে তেমন জল পাওয়া যাচ্ছে না! ডাগানা জেলার তাশিডিংয়ে সব থেকে বেশি নদী শুকিয়ে যাওয়ার মুখে-- ৭৬টি! এছাড়া গোজি এলাকায় ৩৭টি, কানা এলাকায় ৫টি এবং লারজাব এলাকায় ৪টি নদী কার্যত শুকিয়ে গিয়েছে। ডাগানার চিচিবি ও জোরপোখরিতে ৪টি বড় হ্রদ শুকিয়ে গিয়েছে।
ভুটানের সরকারি রিপোর্ট বলছে, ভুটানে মোট ৭৩৯৯টি নদী, ঝোরা ও হ্রদ রয়েছে। এর মধ্যে ৬৯টি পুরোপুরি শুকিয়ে গিয়েছে এবং ১৮৫৬টি ক্রমশই শুকিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, শুধু ডাগানা জেলাতেই নদী, ঝোরা ও হ্রদ মিলিয়ে জলের উৎস রয়েছে মোট ৭১৯টি। এর পিছনে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন একটা বড় কারণ। তবে রিপোর্টে এমনও স্বীকার করা হয়েছে, পাশাপাশি বনভূমি ধ্বংস, বনভূমিতে আগুন ও অতিরিক্ত হারে জলাভূমি দূষণের কারণে ভুটানে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আর এর ফলে প্রমাদ গুনছে পশ্চিমবঙ্গও। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ। কেননা ভুটানে জলের উৎসে সংকট দেখা দিলে সরাসরি বিপদে পড়বে উত্তরবঙ্গ ও অসম। কারণ তোর্সা, রায়ডাক, সঙ্কোশ, মানস-সহ অসংখ্য নদী ভুটান থেকে উত্তরবঙ্গ ও অসমের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। ভুটান থেকে নেমে আসা এই নদীগুলিই উত্তরবঙ্গ ও অসমের লক্ষ লক্ষ কৃষিজমিতে সেচের জলের জোগান দেয়। পাশাপাশি, ওইসব নদীর বালি-পাথরের উপর ভিত্তি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন উত্তরবঙ্গ ও অসমের অসংখ্য মানুষও।