Bangladesh: ইতিহাসের ঢাকা! শহরের স্থাপত্য-সঙ্গমে এক স্রোতে এসে মিশেছে বৌদ্ধ ও ইসলামি ধারা...
Bangladesh: প্রায় ধ্বংস্তূপে পরিণত বাড়িগুলো গল্প বলে চলছে সেইসব দিনগুলোর।
সেলিম রেজা, ঢাকা: ঢাকা শহরের ইতিহাস বেশ পুরানো। সঙ্গে এখানকার জনবসতি গড়ে ওঠার আখ্যানও। ফলে প্রাচীন বাংলার বৌদ্ধ নির্দশনের যেমন দেখা মেলে, তেমনি শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পাকিস্তান আমলের নানা স্থাপত্য। ঐতিহাসিক সেসব নির্দশনের অন্যতম জমিদার বাড়ি।
আরও পড়ুন: Earthquakes: আঘাত হানল শক্তিশালী ভূমিকম্প! কীরকম ক্ষয়ক্ষতি? কত মৃত্যু? আফটার শক ক'টি? জেনে নিন সব...
ঢাকা শহরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ওয়াইজঘাটের পাশে আহসান মঞ্জিল। ১৮৭২ সালে এই প্রসাদটি তৈরি করেছিলেন নবাব আবদুল গণি। প্রসাদটি নামকরণ করেন ছেলে আহসানুল্লাহ বাহাদুরের নামে। এরপর ১৮৮৮ সালে টর্নেজোয় মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আহসান মঞ্জিল। দ্রুত অবশ্য প্রাসাদটি সংস্থারও করা হয়। এখন ঢাকা জাদুঘরে সংরক্ষিত পুরনো প্রাসাদের সেই ছবি।
প্রাসাদের দোতলা ভবনের ঠিক মাঝখানে মিনার। নিচতলায় পশ্চিম দিকে দরবার হল, পূর্বে ডাইনিং। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর সলিমুল্লাহ বাহাদুরের অতিথি হিসেবে এই প্রসাদেই বেশ কিছুদিন ছিলেন লর্ড কার্জন। স্রেফ আহসান মঞ্জিলই নয়, ঢাকার জেলায় রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি জমিদার বাড়ি। যেমন, সূত্রাপুর জমিদারবাড়ি, বক্তারনগর জমিদারবাড়ি, কলাকোপা জমিদারবাড়ি, জয়কৃষ্ণপুর জমিদারবাড়ি, আগলা জমিদারবাড়ি, বিরুলিয়া জমিদারবাড়ি, সাভার দেওয়ানবাড়ি, আড়াপাড়া জমিদারবাড়ি, সাভার জমিদারবাড়ি, বালিয়া জমিদারবাড়ি, রোয়াইল জমিদারবাড়ি, বেলিশ্বর জমিদারবাড়ি, গাঙ্গুটিয়া জমিদারবাড়ি, কেরানীগঞ্জ জমিদারবাড়ি। প্রতিটি জমিদার বাড়ি স্থাপত্যশৈলী নিজস্বতা নজর কাড়বে।
ঢাকার অদূরেই অবস্থিত গাজীপুর। এখানকার ভাওয়াল জমিদারবাড়িই সবচেয়ে বিখ্য়াত। ১৭৩৮ সালে গাজী বংশের জমিদারি আত্মসাতের মধ্য দিয়ে তিনটি নতুন জমিদারির সূচনা ঘটে। ভাওয়াল জমিদারবাড়ি, পলাসোনা জমিদারবাড়ি আর গাছা জমিদারবাড়ি। জয়দেবপুর মহল্লায় অবস্থিত জমিদারবাড়িটি বর্তমানে স্থানীয়দের কাছে রাজবাড়ি হিসেবেও পরিচিত। উনিশ শতকের শেষভাগে প্রাসাদটি নির্মিত হয়।
বর্তমান রাজবাড়ির নির্মাণকাজ শেষ করেন রাজা কালী নারায়ণ রায় চৌধুরী। মূল প্রাসাদ অবস্থিত ১৫ একর জমির ওপর। ছোট ও বড় মিলিয়ে ৩৬০টি কক্ষ রয়েছে প্রাসাদে। সঙ্গে বড় দালান, রাজবিলাস, পুরনো বাড়ি, নাট মন্দির, হাওয়া মহল, পদ্মনাভ। বর্তমানে গাজীপুরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ছিল ম্যানেজারের অফিস, রানী বিলাসমণি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ছিল দেওয়ানখানা। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অন্তর্গত পলাসোনা মহল্লায় অবস্থিত পলাসেনা জমিদারবাড়ি। তবে তৃতীয় জমিদার বাড়ি অর্থাত্ গাছা জমিদারবাড়ির অস্তিত্ব এখন নেই বললেই চলে ।
ঢাকার আর একটি প্রাচীন জনপদ নারায়ণগঞ্জ। মুঘল আমলে বিখ্যাত বারোভূঁইয়া নেতা ঈসা খাঁর রাজধানী ছিল এখানে। তার নিদর্শন এখনও দেখতে পাওয়া যায়। নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে পরিচিত জমিদারবাড়ি বড় সর্দারবাড়ি। সোনারগাঁ পৌরসভায় অবস্থিত জমিদারবাড়িটি ঈসা খাঁর বাড়ি নামেও পরিচিত। মূল ভবনটি নির্মিত হয়েছে বারোভূঁইয়ার আমলে। দোতলা বাড়িটি দুই ভাগে গড়ে উঠেছে। মধ্যভাগে লাল রঙের বর্গাকৃতির ভবন। মোট ২৭ হাজার ৪০০ বর্গফুট ভবনের নিচতলায় ৪৭টি ও দোতলায় ৩৮টি কক্ষ রয়েছে। এত শতাব্দী পরে এসেও বাড়ির নির্মাণশৈলী ও নির্মাণ উপাদান তখনকার আভিজাত্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়।
বাংলার অধিকাংশ জমিদারবাড়ির মতোই ঢাকা বিভাগের জমিদারবাড়িগুলোও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আঠারো-উনিশ শতকের শেষ দিকে, অর্থাৎ ঔপনিবেশিক আমলে। জমিদারি পতনের পর পরবর্তী বংশধররা নিজেদের মতো করে নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। তবে প্রায় ধ্বংস্তূপে পরিণত বাড়িগুলো গল্প বলে চলছে সেইসব দিনগুলোর।
আরও পড়ুন: Bangladesh | Mahafuz Alam: বদলের বাংলাদেশে ফের বদল! হাসিনা পতনের মুখ্য কারিগর হঠাত্ই মুজিবের পক্ষে
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)