মমতাকে তোপ দেগে রেলে পরিবর্তনের পথে অধীর

প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত বেশ কিছু সিদ্ধান্তের রদবদলে এবার উদ্যোগী অধীর চৌধুরী। মনীষিদের নামে মেট্রো স্টেশনের নামকরণ থেকে শুরু করে অতিথি তালিকা, সবকিছুতেই পরিবর্তনের ছোঁয়া। এমনকী, রেলের অনুষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচের রীতিরও পরিবর্তন হল নতুন রেলপ্রতিমন্ত্রীর হাত ধরেই। পরিবর্তনের স্লোগানে কখনই গলা মেলাননি তিনি। কিন্তু তিনিও যে পরিবর্তনে বিশ্বাসী তা রেলমন্ত্রক হাতে পেয়েই বুঝিয়ে দিলেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী।

Updated By: Nov 26, 2012, 06:13 PM IST

প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত বেশ কিছু সিদ্ধান্তের রদবদলে এবার উদ্যোগী অধীর চৌধুরী। মনীষিদের নামে মেট্রো স্টেশনের নামকরণ থেকে শুরু করে অতিথি তালিকা, সবকিছুতেই পরিবর্তনের ছোঁয়া। এমনকী, রেলের অনুষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচের রীতিরও পরিবর্তন হল নতুন রেলপ্রতিমন্ত্রীর হাত ধরেই। পরিবর্তনের স্লোগানে কখনই গলা মেলাননি তিনি। কিন্তু তিনিও যে পরিবর্তনে বিশ্বাসী তা রেলমন্ত্রক হাতে পেয়েই বুঝিয়ে দিলেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী। উপলক্ষ, মেট্রো রেলের নিউ গড়িয়া হল্ট স্টেশনের উদ্বোধন। রেলের অনুষ্ঠান মানেই যে জাঁকজমকের চেহারা উঠে আসত, এখন তা উধাও। ছোট্ট মঞ্চ। নেই তারকা এবং দলীয় নেতাদের ভিড়। নেই অনুষ্ঠানকে ঘিরে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচের চমকও। পরিবর্তন শুধু অনুষ্ঠানের আঙ্গিকেই নয়। পরিবর্তন অতিথি তালিকাতেও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় দলের জনপ্রতিনিধিরা ছাড়া রেলের অনুষ্ঠানে ডাক পেতেন না কেউই।  অধীর রঞ্জন চৌধুরীর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কবীর সুমন এবং সিপিআইএমের প্রাক্তন সাংসদ সুজন চক্রবর্তীকেও। কেন মঞ্চে হঠাত্‍ সুজন চক্রবর্তী! ব্যাখ্যা দিয়েছেন, মন্ত্রী নিজেই।
শুধু সৌজন্যের রাজনীতিই নয়। রেলপ্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে,  ছিল পরিবর্তনের ঘোষণা। মেট্রো স্টেশনের নামকরণ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তের রদবদল করলেন অধীর চৌধুরী। রেলের অনুষ্ঠানে কলকাতায় এসেই বেশ কিছু পরিবর্তনের কথা শুনিয়ে গেলেন অধীর চৌধুরী। একইসঙ্গে তৈরি হল বিতর্ক। জমির বদলে চাকরি, এই নীতিই রেলের উন্নয়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোমবার কাঁচরাপাড়ায় রেলের একটি অনুষ্ঠানে একথা বলেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। অবিলম্বে এই নীতির পূনর্বিবেচনার প্রয়োজন আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রেল প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, এনিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে কথা বলবেন।
রেলের প্রকল্পের জন্য জমি দিলে চাকরি পাওয়া যাবে। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই নীতি ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে শুরু থেকেই এই নীতির পক্ষে তেমন সাড়া মেলেনি। চাকরির প্রতিশ্রুতি সত্বেও জমির অভাবেই থমকে গেছে অনেক প্রকল্প। এবার এই নীতির কার্যকারিতা নিয়ে সরব হলেন নতুন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। তাঁর মতে এই নীতি রেলের উন্নয়নেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কাউকে চাকরি দেওয়া যেতে পারে ঠিকই, কিন্তু এটা কোনও সাধারণ নিয়ম হতে পারে না বলে দাবি তাঁর।
এই নীতির সংশোধনের পক্ষেও এদিন জোর সওয়াল করেন তিনি।  এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন অধীর। প্রাক্তন রেলমন্ত্রীর নীতির বিরোধীতার মধ্যে দিয়ে নিজের মমতা বিরোধী ভাবমুর্তিকে আরও জোরালো করে তুললেন মুর্শিদাবাদের সাংসদ।শিল্পায়নের বড় কাঁটা সরকারের জমি নীতি। এই জমি নীতি নিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে কটাক্ষ করলেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। কাঁচরাপাড়ায় রেলের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,  সরকারের জমি নীতির কারণেই আটকে যাচ্ছে রাজ্যে রেল প্রকল্পগুলির ভবিষ্যত। রাজ্যের শিল্পায়নে সরকারের জমি নীতিই বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিল্পায়নের সঙ্গে পরিকাঠামোর উন্নয়নও থমকে গেছে জমি জটের গেরোয়। জমির অভাবে রাজ্যজুড়ে বন্ধ একাধিক জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়ক তৈরির কাজ। একই অবস্থা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত প্রকল্পগুলিরও।
তালিকায় রয়েছে আদ্রায় তাপবিদ্যুত্‍ কেন্দ্র নির্মান। কুলটিতে ওয়াগন কারখানা। বুনিয়াদপুরে একসেল নির্মান কারখানা। বর্ধমানের বোয়াইচন্ডী থেকে খানা, ডানকুনি ফুরফুরা শরিফ,গঙ্গা সাগর রেলপথ প্রকল্প  জমির অভাবে বিশবাঁও জলে। সেই বিতর্কই আরও একবার উস্কে দিলেন নতুন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। তাঁর সাফ বক্তব্য রাজ্য সরকার জমির ব্যবস্থা করতে না পারলে এই প্রকল্পগুলির ভবিষ্যত অনিশ্চিত। রেলপ্রকল্পগুলির বাস্তবায়নে পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চনার কোনও প্রশ্নই ওঠে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। রেলের সাধ্য অনুযায়ী অগ্রিধিকারের ভিত্তিতে এই বন্ধ থাকা প্রকল্পগুলির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। রেলের আর্থিক দুরবস্থা, জমি নিয়ে রাজ্য সরকারের অনড় অবস্থান এসবের বাধা কাটিয়ে এই প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নই নতুন মন্ত্রী হিসাবে অধীর চৌধুরীর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

.