লগ্নির আবেদনে কোচবিহারে জোড়হস্ত মুখ্যমন্ত্রীর
লগ্নির আশায় জোড়হস্ত মুখ্যমন্ত্রী। বড় শিল্প নয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে লগ্নির জন্যই করজোড়ে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
ওয়েব ডেস্ক: লগ্নির আশায় জোড়হস্ত মুখ্যমন্ত্রী। বড় শিল্প নয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে লগ্নির জন্যই করজোড়ে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
কোচবিহারের মাথাভাঙায় প্রশাসনিক সভা। লগ্নির প্রত্যাশায় করজোড়ে মুখ্যমন্ত্রী। সামনে বিধানসভা ভোট। বিরোধীদের অভিযোগ, গোটা রাজ্যেই শিল্প বেহাল। উত্তরবঙ্গে অবস্থাটা আরও খারাপ। উত্তরের জেলাগুলিতে তৃণমূলের শক্তিও দক্ষিণের তুলনায় কম। তাই, কোচবিহারের মাটিতে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী লগ্নির আহ্বান জানাবেন, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কিন্তু, তাই বলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য জোড়হস্ত রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান!
জমিনীতির জন্য রাজ্যে বড় শিল্প নেই। এ অভিযোগ নতুন নয়। তাই, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পই ভরসা। মুখ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী সবার গলাতেই গত সাড়ে চার বছরে বারবার শোনা গেছে, ক্ষুদ্র শিল্পে তড়তড় করে এগোচ্ছে রাজ্য। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে লগ্নি টানতে মিলনমেলায় ঢালাও আয়োজন, পরিকাঠামো উন্নয়নে ২৬ হাজার কোটি টাকার সরকারি লগ্নির প্রতিশ্রুতি। শোনা গেছে সবই।
মে মাসে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন,
বাম আমলের শেষ পাঁচ বছরে রাজ্যে ৪৯টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ইউনিটে লগ্নির পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার৭৬৪ কোটি টাকা। গত চার বছরে ১৮০টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ইউনিটে বিনিয়োগের পরিমাণ এখন ৫৫হাজার ৭৪০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর বাজেট বক্তৃতা আবার বলছে চার বছরে রাজ্যে লগ্নির পরিমাণ ৮৬ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।
সরকারের দেওয়া হিসেব ঠিক হলে গত চার বছরে রাজ্যে বিনিয়োগের সিংহভাগই এসেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে।
আর তাই যদি হয় তা হলে কেন মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষুদ্র শিল্পে লগ্নি টানতে হাতজোড় করতে হচ্ছে?
বিরোধীরা বলছেন, জমিনীতির জন্য বড় শিল্প আসছে না। তাই মুখ্যমন্ত্রীর ভরসা ছোট শিল্প। কিন্তু, সেই ছোট শিল্প টানতেও হাতজোড় কেন? এ রাজ্যের শিল্প মানচিত্রে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন বোধহয় এটাই। যাতায়াতেই এতটা সময়। এরপরও কোচবিহারে শিল্প হবে? শিল্প হবে কলকাতা থেকে দূরের জেলায়?
শিল্পপতিদের উত্সাহ দিতে মুখ্যমন্ত্রী ইনসেনটিভের কথা বলছেন। কিন্তু, শিল্পায়নের অন্য শর্তগুলি পূরণ না হলে শুধু এই দিয়ে চিঁড়ে ভিজবে কি? স্থায়ী সরকার লগ্নি
আনে। এই শর্ত পূরণে সফল পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু, বাকি শর্তগুলি?
কাঁচামাল আনা থেকে উত্পাদিত পণ্য দ্রুত বাজারে পৌছে দেওয়া। সড়ক যোগাযোগ উন্নত না হলে তা সম্ভব নয়। এ রাজ্যে জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়কগুলির বেহাল
দশার জন্য শিল্পপতিরা কলকাতা থেকে দূরে বিনিয়োগ করতে চান না। কলকাতার সঙ্গে অধিকাংশ জেলা শহরের বিমান যোগাযোগ নেই।
শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে অনড় রাজ্য সরকার। আর বিভিন্ন সরকারি শিল্পতালুকে নেই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো।
গতমাসেই কলকাতায় সিআইআই-এর ন্যাশনাল কাউন্সিলের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সরকারের জমিনীতি জানতে চান মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পবন গোয়েঙ্কা। জবাবে জমি ব্যাঙ্কের পুরনো কাসুন্দি ছাড়া অন্য কিছু শোনাতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী।
শিল্পপতিরা তাঁদের লগ্নির নিরাপত্তা চান। তাই, আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা থাকলে বিনিয়োগ আসে না। সিন্ডিকেটের জুলুম, তোলাবাজির রমরমা দেখে শিল্পমহল
এ রাজ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।
গত সেপ্টেম্বরে টাটা-হিটাচির কর্তা ইন্দু সিংহ অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে ঠিক এই কথাগুলিই মনে করিয়ে দেন। টাটা-হিটাচি কর্তার প্রশ্নের উত্তর অমিত মিত্রর কাছে ছিল না।