রাজ্য জুড়ে চলছে গুলি, ফাটছে বোমা, বেআইনি অস্ত্রের বাড়বাড়ন্ত, 'দর্শক' পুলিস, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ
চলছে গুলি। ফাটছে বোমা। কলকাতা থেকে জেলা। সব জায়গায় এক ছবি। দুষ্কৃতীদের হাতে মুড়ি-মুড়কির মতো ঘুরছে আগ্নেয়াস্ত্র। বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে কী করছে পুলিস? প্রশ্ন তুলছেন আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ।
ব্যুরো: চলছে গুলি। ফাটছে বোমা। কলকাতা থেকে জেলা। সব জায়গায় এক ছবি। দুষ্কৃতীদের হাতে মুড়ি-মুড়কির মতো ঘুরছে আগ্নেয়াস্ত্র। বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে কী করছে পুলিস? প্রশ্ন তুলছেন আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ।
সোমবার এ ছবি দেখে অনেকেই আঁতকে উঠেছিলেন। বঙ্গেই আছি তো! বিহার-উত্তরপ্রদেশে এসে পড়িনি তো!
শাসকদলের মিছিলেই উদ্দাম পিস্তল-নৃত্য! দুষ্কৃতীদের হাতে যে বোমা-গুলি-বন্দুকের ছড়াছড়ি হবে তাতে আশ্চর্য কী!
বৃহস্পতিবার সন্ধে থেকে শনিবার বিকেল, রাজ্যের ৫ জায়গায় গুলি-বোমা-বন্দুকের তাণ্ডব।
গ্যাঙ ওয়ার। মেজিয়া, বাঁকুড়া, বৃহস্পতিবার রাত আটটা।পাথর খাদানের দখল নেবে কে? মেজিয়ার জপমালি এলাকায়। রাজু দুবে গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলন কেশ গোষ্ঠীর সংঘর্ষ।
গুলি-বোমায় আহত মিলন কেশ ও তাঁর ভাই অরবিন্দ কেশ।
বাগদা, উত্তর ২৪ পরগনা, বৃহস্পতিবার সন্ধে সাতটা। মোটরবাইকে ছিলেন বাগদার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক দুলাল বর। বাগদা থেকে কিছু দূর এগোতেই ছুটে এল গুলি। দুলাল বরের অভিযোগ, তিনি দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার। স্থানীয় যুব তৃণমূল সভাপতি হিজবুলের লোকেরা গুলি চালিয়েছে।
বারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, শুক্রবার সকাল এগারোটা।স্থানীয় এম এম বাগচি রোডের এই পরিত্যক্ত বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরেই দুষ্কৃতীদের আড্ডা। শুক্রবার সকালে বাড়ির ভিতর আচমকা ফাটল বোমা। পুলিস ফাঁড়ির কাছেই বিস্ফোরণ। আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা।
সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বৃহস্পতিবার রাত দশটা। সিন্ডিকেটের লড়াই। চলল গুলি।
সোনারপুরের রেনিয়ায় গুলি খেলেন নান্টি গোষ্ঠীর সুমন। অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধ গোষ্ঠী বাবুসোনার ছেলেদের দিকে।
কাশীপুর, কলকাতা, শুক্রবার বিকেল তিনটে। কারখানার জঙ্গল পরিষ্কার করার সময় আচমকা বোমা বিস্ফোরণ। নিহত এক শ্রমিক। অন্যরা হাসপাতালে।
উদাহরণের শেষ নেই। গত রবিবার এন্টালিতে দুষ্কৃতীদের। গুলি ছিটকে এসে লাগে দশ বছরের রায়ান আলমের পায়ে।
মালদার কালিয়াচক, কল্যাণীর সগুনায় উদ্ধার হওয়া অস্ত্রভাণ্ডার দেখে পুলিসেরও চোখ কপালে উঠেছে। বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের বাড়বাড়ন্তে উদ্বিগ্ন কলকাতার পুলিস কমিশনার। নিয়মিত ক্রাইম কনফারেন্স করছেন তিনি। নির্দেশ দিচ্ছেন অস্ত্র উদ্ধারের।
গত বুধবারও কলকাতা পুলিসের ক্রাইম কনফারেন্সে অস্ত্র উদ্ধারের ওপর জোর দিয়েছেন পুলিস কমিশনার। কার্যত মেনে নিয়েছেন, এ শহর পরিণত হয়েছে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের
মুক্তাঞ্চলে।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে প্রতি একলাখ মানুষের জন্য রয়েছেন একশো জন পুলিসকর্মী।
কলকাতা শহরের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা সাড়ে চারশো।
তুলনায় বেশি ফোর্স নিয়েও কলকাতা পুলিস অস্ত্র উদ্ধারে হিমশিম খাচ্ছে। জেলায় জেলায় যে মজুত বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যাটা অনেক বেশি তা অনুমান করতে রকেট সায়েন্সের বুদ্ধি লাগে কি?