মালোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজি

মালোজুলা কোটেশ্বর রাও। কিষেণজি নামেই তিনি অনেক বেশি পরিচিত। কাপড়ে ঢাকা মুখ , কাঁধে ঝুলছে এ কে ফর্টি সেভেন। সংবাদমাধ্যমে কিষেণজির এই চেহারা বহুবার দেখা গেছে। কিন্তু কে এই কিষেণজি? অন্ধ্রের কোটেশ্বর রাও থেকে বেলপাহাড়ির বিমলদা এবং সেখান থেকে দেশের প্রথম সারির মাওবাদী নেতা হয়ে ওঠেন কিষেণজি।

Updated By: Nov 24, 2011, 10:12 PM IST

মালোজুলা কোটেশ্বর রাও। কিষেণজি নামেই তিনি অনেক বেশি পরিচিত। কাপড়ে ঢাকা মুখ , কাঁধে  ঝুলছে এ কে ফর্টি সেভেন। সংবাদমাধ্যমে কিষেণজির এই চেহারা বহুবার দেখা গেছে। কিন্তু কে এই কিষেণজি? অন্ধ্রের কোটেশ্বর রাও থেকে বেলপাহাড়ির বিমলদা এবং সেখান থেকে দেশের প্রথম সারির মাওবাদী নেতা  হয়ে ওঠেন কিষেণজি। আজ বুড়িশোলের জঙ্গলে যৌথবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত হন এই শীর্ষ মাওবাদী নেতা।

সাতের দশকে ছাত্র আন্দোলন দিয়ে মালোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজির রাজনৈতিক জীবনের শুরু। আইন পড়ার সময় নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ছাত্র আন্দোলনের জেরেই প্রথম সাতাত্তর সালে গ্রেফতার হন তিনি। এরপর আটের দশকের গোড়ায় পিপলস ওয়ার গ্রুপে যোগ দেন কিষেণজি। দলের তরফ থেকে তেলেঙ্গানা ও দণ্ডকারণ্যের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। নয়ের দশকের শেষের দিকে প্রথম জঙ্গলমহলে আসেন । বেলপাহাড়ির  পুকুরিয়া গ্রামে প্রথম শুরু করেন সংগঠন তৈরির কাজ। শুরুর দিকে নাশকতার পথে না গিয়ে জনসংযোগ বাড়ানো কাজেই গুরুত্ব দিয়েছিলেন এই মাওবাদী নেতা। সেসময় গ্রামবাসীদের কাছে তার পরিচয় ছিল বিমলদা। সিপিআই মাওয়িস্টের পলিটব্যুরো এবং সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের সদস্য কিষেণজির নেতৃত্বেই মুলত জঙ্গলমহলে একের পর এক স্কোয়াড তৈরি করে মাওবাদীরা। দলদলির জঙ্গলে আটজন জওয়ানকে হত্যা, দুহাজার আট সালে শালবনিতে তত্‍কালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য়ের উপর মাওবাদীদের আক্রমণের ঘটনার পর শুরু হয়ে যায় লালগড়ের আন্দোলন। সেসময় কিষেণজির পরামর্শেই গড়ে তোলা হয় মাওবাদীদের প্রকাশ্যে সংগঠন পুলিসি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটি। এই কমিটির নেতৃত্বেই রামগড় পুলিস ফাঁড়িতে আগুন, অনুজ পাণ্ডেদের বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। এই নাশকতার নেতৃত্বে ছিল কিষেণজির হাতে তৈরি মনসারাম মুর্মু ওরফে বিকাশ। সাঁকরাইল থানার ওসিকে অপহরণ, শিলদা ক্যাম্প আক্রমণ সবই হয়েছে কিষেণজির পরিকল্পনা মাফিক।

এর আগে যৌথবাহিনীর হাত থেকে অন্তত চারবার নিজেকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন কিষেণজি। দুহাজার নয়ের অক্টোবরে অতীন্দ্র নাথ দত্ত অপহরণের সময় লক্ষ্মণপুরের জঙ্গলে যৌথবাহিনীর টার্গেটের মধ্যে এসে গিয়েছিলেন কিষেণজি। কিন্তু  সেযাত্রায় বেঁচে গেলেও দুহাজার দশের মার্চ মাসে হাতিলোটের জঙ্গলে যৌথবাহিনীর গুলির মুখে পড়েন কিষেণজি। সেসময় তাঁর পায়ে গুলি লাগে। তারপর থেকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন তিনি। আত্মগোপন করেই সংগঠনের কাজ চালাচ্ছিলেন কিষেণজি। অবশেষে দুহাজার এগারোর বাইশে নভেম্বর। জামবনির কাছে কুশবনির জঙ্গলে কিষেণজির উপস্থিতির খবর পায় যৌথবাহিনী। টানা তিনদিনের দফায় দফায় গুলির লড়াইয়ে নিহত হন কিষেণজি ওরফে কোটেশ্বর রাও।  

.