মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন, প্রতিক্রিয়া সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষির
সরকারি সাহায্য নেবেন না সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকরা। শনিবার মিলনমেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য শেষ হতেই সমস্বরে সে কথা জানিয়ে দিলেন তাঁরা। তাঁদের পালটা দাবি, জমি গেলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভরসায় টাকা নেননি। তাই ক্ষতিপূরণ দিতে হলে সাত বছরে চাষের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে হবে।
সরকারি সাহায্য নেবেন না সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকরা। শনিবার মিলনমেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য শেষ হতেই সমস্বরে সে কথা জানিয়ে দিলেন তাঁরা। তাঁদের পালটা দাবি, জমি গেলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভরসায় টাকা নেননি। তাই ক্ষতিপূরণ দিতে হলে সাত বছরে চাষের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে হবে।
প্রাণ দেব, তবু জমি দেব না স্লোগান বুকে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়েছিলেন সিঙ্গুরের গোপালনগর ঘোষপাড়ার বাসিন্দা সুজয় ঘোষ। রাজ্যপাট বদলালে জমি ফেরত পাবেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাসে স্বপ্ন দেখেছিলেন সত্তরোর্ধ বৃদ্ধ। সিঙ্গুর আন্দোলনকে সিঁড়ি করে নেত্রীর স্বপ্ন সফল হলেও অথই জলে পড়ে আছেন এই বৃদ্ধ। সরকারের এক বছরপূর্তি অনুষ্ঠানে শনিবার মিলনমেলার মঞ্চ থেকে সিঙ্গুরের কৃষকদের জন্য মাসে হাজার টাকা অনুদান ও দু`টাকা কিলো দরে চাল দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বছরের পর বছর আধপেটা খেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আন্দোলনে শরিক থাকার পর এই ঘোষণায় প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কন্ঠ শক্ত হয়ে গিয়েছে তাঁর। শুধু তিনি নন, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা যেন সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে। তাঁদের হুঁশিয়ারি, ২০১৪ সালের মধ্যে জমি সমস্যার সমাধান না-হলে পালটা আন্দোলন দেখবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সরকারি সাহায্য নেবেন? প্রশ্ন করতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন সুজয়বাবু। বললেন, "জমি নিয়ে এখন চিনতে পারছে না। হাজার টাকায় কী হয়? সংসারের এক দিনের খরচ হাজার টাকা। আমার ছেলেটা এতদিন তৃণমূল করল, একটা চাকরি দিয়েছে? গরিব মানুষকে দেবে বলেছিল, কী দিয়েছে? ক্ষতিপূরণ যদি দিতেই হয় তবে সাত বছর চাষ করে যা লাভ হত তা মিটিয়ে দিক সরকার। হাজার টাকা দিয়ে কী করব?"
জমি ফেরত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন মুক্ত সাহানাও। জমির বদলে এখন টাকা পেলেই খুশি তিনি। বললেন, "মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা সিঙ্গুরের ক্ষুব্ধ চাষীদের মন ভোলানের উদ্যেশে। হাজার টাকায় চাষিদের কোনও লাভ হবে না।" তাঁর অভিযোগ, "উনি তো বলে বলেই শেষ করলেন। আজ আশেপাশে কত কারখানা তৈরি হচ্ছে। নারী পুরুষ নির্বিশেষে কাজ করছেন সেখানে। ভাল আয়ও করছে তাঁরা। সিঙ্গুরে তো চাষ ছাড়া আর কিছুই নেই।"
ক্ষোভ ঝরে পড়ল বৃদ্ধ পঞ্চানন ঘোষের গলাতেও। বললেন, "হাজার টাকার কটা পয়সা পঞ্চায়েতে এসে পৌঁছবে। কেউ ও টাকা পাবে না।" তাঁর অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের সঙ্গে মিথ্যাচার করেছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য নবকুমার ঘোষ। তাঁর কথায়, "চাষিদের মন পেতে এই সাহায্য ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।" বললেন, তাঁদের নিয়ে রাজনীতি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ক্ষমতায় আসার পর প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিনের মধ্যে জমি ফেরত দেওয়ার কথা বললেও এক বছরেও তা ফেরত দিতে পারেননি তিনি। আন্দোলনে নেমে আয়ের একমাত্র পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্রমশ ক্ষোভ জমেছে সিঙ্গুরের কৃষকদের মনে। শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা যেন সেই ঘায়ে নুনের ছিটে বাজেমেলিয়া, গোপালনগর, বেড়াবেড়ির চাষিদের কাছে।