সমাহিত `অলীক মানুষ`

মুর্শিদাবাদে খোশবাসপুরে সমাহিত করা হল সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজকে। লেখকের শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁর নিজের গ্রামে অন্তেষ্টির কাজ হবে বলে গতকালই তাঁর পরিবারের তরফে জানানো হয়েছিল। সেই মতো বুধবার সকালে পিসহাভেন থেকে সিরাজের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় মুর্শিদাবাদে।

Updated By: Sep 5, 2012, 08:08 PM IST

মুর্শিদাবাদে খোশবাসপুরে সমাহিত করা হল সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজকে। লেখকের শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁর নিজের গ্রামে অন্তেষ্টির কাজ হবে বলে গতকালই তাঁর পরিবারের তরফে জানানো হয়েছিল। সেই মতো বুধবার সকালে পিসহাভেন থেকে সিরাজের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় মুর্শিদাবাদে। খোশবাসপুরে লেখকের গ্রামে অন্তেষ্টিতে উপস্থিত হন বহু মানুষ। তাঁদের প্রিয় সিরাজ মাস্টারকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন গ্রামবাসীরা।
মঙ্গলবার মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়াত হন প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত সমস্যার পাশাপাশি বেশ কিছুদিন ধরে অন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। মাসখানেক আগে একবার অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। গত বৃহস্পতিবার ফের তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবশেষে মঙ্গলবার দুপুরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের জন্ম হয় কান্দী থানার খোশবাসপুর গ্রামে। মুর্শিদাবাদের প্রকৃতি, গ্রামীন জীবনের ছবি বারবার ফুটে উঠেছে তাঁর লেখায়। মুর্শিদাবাদের লোকশিল্প, আলকাপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। ভালোবেসে আলকাপ শিল্পীরা তাঁকে ডাকতেন ‌‌‌সিরাজ মাস্টার বলে। শুধু গান নয়, বাঁশিতে সুর তুলতেও সমান পারদর্শী ছিলেন মুর্শিদাবাদের ঘরের এই ছেলে। লেখক হিসেবে খ্যাতির চুড়োয় পৌঁছেও তিনি ভোলেননি তাঁর নিজের গ্রাম এবং সেখানকার মানুষদের। তাঁর প্রয়াণের খবরে শোকস্তব্ধ পরিজনেরা। বাকরুদ্ধ জেলার সাহিত্য-সংস্কৃতি মহলও।
তাঁর ৮২ বছরের দীর্ঘ জীবনে প্রায় দেড়শোরও বেশি উপন্যাসের পাশাপাশি রচনা করছেন ৩০০টি ছোটগল্পও। তাঁর লেখা ছোটগল্পগুলির মধ্যে বিখ্যাত `ইন্তি, পিসি ও ঘাটবাবু`, `রণভূমি`, `ভালবাসা ও ডাউন ট্রেন`, `রক্তের প্রত্যাশা`, `হিজল বিলের রাখালেরা`, `মাটি`, `তরঙ্গিনীর চোখ`, `গোঘ্ন`, `উড়ো পাখির ছায়া`, `মৃত্যুর ঘোড়া`, `মানুষের জন্ম` প্রভৃতি৷ তাঁর রচিত প্রথম উপন্যাস নীলঘরের নটী। পরবর্তী উপন্যাসগুলির মধ্যে তৃণভূমি, অলীক মানুষ, উত্তর জাহ্নবী বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে বাঙালি পাঠকদের মনে। তাঁর সৃষ্ট বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র গোয়েন্দা কর্নেলের মাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছিলেন কিশোর মনেও। তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ভূষিত হয়েছেন বহু পুরস্কারেও। আনন্দ পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার, সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার, নরসিংহদাস পুরস্কার তার মধ্যে অন্যতম। ২০১১ সালে ২৪ ঘণ্টা অনন্য সম্মানে ভূষিত করেছিল তাঁকে।

.