অশোক সেনের দেহ দ্রুত সৎকারে পুলিসের চাপ, তেহট্টের ঘটনায় নয়া বিতর্ক
বুধবারে তেহট্টে পুলিসের গুলি চালানো নিয়ে এখনও বিতর্ক ভীষণ ভাবে জীবিত। তার মধ্যেই আবার নতুন করে জন্ম নিল অন্য বিতর্ক। তেহট্টের হাউলিয়া মোড়ে পুলিসের গুলিতে নিহত অশোক সেনের দেহের দ্রুত সৎকারের জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠল পুলিসের বিরুদ্ধে।
বুধবারে তেহট্টে পুলিসের গুলি চালানো নিয়ে এখনও বিতর্ক ভীষণ ভাবে জীবিত। তার মধ্যেই আবার নতুন করে জন্ম নিল অন্য বিতর্ক। তেহট্টের হাউলিয়া মোড়ে পুলিসের গুলিতে নিহত অশোক সেনের দেহের দ্রুত সৎকারের জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠল পুলিসের বিরুদ্ধে। গতকাল রাতে দেহ বাড়িতে পৌঁছনোর পরই নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে পুলিস এই চাপ দেয় বলে অভিযোগ। এদিকে পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যের অকাল প্রয়াণে দিশেহারা গোটা সেন পরিবার।
জগদ্ধাত্রী পুজোর অনুমতি দেওয়াকে কেন্দ্র করে যে ঘটনার সূত্রপাত, তার সঙ্গে কোনও ভাবেই জড়িত ছিলেন না তেহট্টের পিডব্লুডি পাড়ার বাসিন্দা অশোক সেন। কাঠের কারবার করতেন। বুধবার সকালে হাউলিয়া মোড়ে বাজার করতে বেড়িয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। খুব কাছ থেকে করা পুলিসের গুলিতে মারাত্মক জখম অবস্থায় চিকিৎসার জন্য কৃষ্ণনগরে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। বুধবার দুপুর পর্যন্ত ঠিক ছিল, বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত হবে। তবে তৃণমূল নেতা মুকুল রায় ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরই তড়িঘড়ি ময়নাতদন্ত করে রাতেই বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় অশোক সেনের দেহ। বাড়িতে তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার।
সংসার বলতে দুই ছেলে, স্ত্রী ও বৃদ্ধা মা। ছেলের নিথর দেহের সামনে বারবার কেঁদে উঠছিলেন মা। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিলেন অশোক সেন। দুই ছেলেকে নিয়ে আগামীদিনের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে দিশেহারা নিহতের স্ত্রী। এর মধ্যেই রাতেই দেহ সৎকারের জন্য পুলিসের তরফে চাপ দেওয়া হয় নিহতের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ জানিয়েছেন।
গতকাল এই ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে পুলিস গুলি চালানোর ঘটনা অস্বীকার করে। তার কিছু পরেই ২৪ ঘণ্টার হাতে পুলিসের গুলি চালানোর ছবি এসে পৌঁছয়। ফলে দুবরাজপুরে সরকার গুলি চালানোর কথা অস্বীকার করলেও নদিয়ার তেহট্টে কিন্তু সরকারের কাছে মুখরক্ষার কোনও পথ থাকল না। কারণ সংবাদমাধ্যমের ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেছে বাড়ির ছাদ থেকে ক্ষুব্ধ জনতার ওপর বেপোরায়া গুলি চালিয়েছে পুলিস। এরপর তল্লাসির নামে বাড়ি বাড়ি ঢুকে পুলিসের বিরুদ্ধে নির্যাতন চালানোর অভিযোগও উঠেছে।
পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে পড়ে যে মহাকরণে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক বসে। যদিও এডিজি আইনশৃঙ্খলা সুরজিত কর পুরকায়স্থের দাবি, আত্মরক্ষার্থেই গুলি চালিয়েছে পুলিস।
জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে পুলিস প্রশাসনের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে অশান্তি চলছিল স্থানীয় মানুষের। অভিযোগ, একটি সংগঠনকে এ বছর পুজোর অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। যদিও গত দশ বছর ধরে তারা পুজো করে আসছে। প্রতিবাদে আজ সকালে তেহট্টের হাউলিয়া মোর অবরোধ করে তেহট্টের সমস্ত পুজো উদ্যোক্তারা। এর পরেই পুলিসের সঙ্গে তাঁদের বিরোধ বাধে। অভিযোগ, অবরোধে প্রথমে লাঠি ও পরে গুলি চালায় পুলিস।
স্বয়ং এসডিপিও শৈলেশ শাহের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ এনেছে উত্তেজিত জনতা। পরে মহাকরণে এডিজি আইনশৃঙ্খলা সুরজিত কর পুরকায়স্থ বলেন আত্মরক্ষার কারণেই তিনি গুলি চালাতে বাধ্য হয় পুলিস। পুলিসের গুলিতে জখম হন বেশ কয়েকজন। গুলিবিদ্ধ দুই ব্যক্তি হাসা ঘোষ ও অশোক সেনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিত্সার জন্য কৃষ্ণনগরে নিয়ে আসার পথে অশোক সেনের মৃত্যু হয়।
এই পুজো নিয়ে এর আগে সর্ব দলের বৈঠকও হয়। অভিযোগ, সেই বৈঠকের সুপারিশও মানেনি প্রশাসন। রবীন দেবের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে রওনা দিয়েছে বাম প্রতিনিধি দল।
ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতা বেশ কয়েকটি পুলিসের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।