সলমন সামনে এবার কোনও দিওয়ার থাকবে না, সেলিম খানই শোলেটা জ্বালালেন
![সলমন সামনে এবার কোনও দিওয়ার থাকবে না, সেলিম খানই শোলেটা জ্বালালেন সলমন সামনে এবার কোনও দিওয়ার থাকবে না, সেলিম খানই শোলেটা জ্বালালেন](https://bengali.cdn.zeenews.com/bengali/sites/default/files/2016/04/28/54338-salmankhan28-4-16.jpg)
স্বরূপ দত্ত
তিনি সেলিম খান। আমি অন্তত তাঁকে এভাবেই বুঝি - যিনি বলেন কম, লেখেন বেশি। যিনি তুলি নেন না হাতে। ছবি আঁকেন। তবে, ক্যানভাসে নন। মানুষের মনে। সমাজের পটভূমিতে। আমার আপনার চোখের 'হিরো' কে তিনি নিয়ে আসেন অবতার হয়ে। সেই সেলিম খানকে আজ বড় অসহায় লাগলো। প্রথমবার লাগলো। তাই কলম ধরা। কারণ, হেলেনের মতো সুন্দরী যে সাদা পাঞ্জাবীর কাঁধে ভরসায় চোখ বুজে শরীরে এলিয়ে দেন, তাঁর বুকের শোলে নেভার নয়। তিনি ভাঙছেন। তাঁর মানে সত্যিই কিছু ভেঙেছে। কী কারণে ভাঙলো সেলিমের মন? বলছি...
সলমন খান রিও অলিম্পকে ভারতের গুডউইল অ্যাম্বাসাডর নিযুক্ত হয়েছেন। এই খবর চাউর হতেই অসহিষ্ণুতায় ভরে উঠল দেশের মানুষের মন। অর্ধেক পক্ষ নিলেন 'ভাইজানের'। গত ২৬-২৭ বছর ধরে পাণ্ডেজির আর যাই হোক 'ফ্যান'-এর অভাব নেই। আর একদল তড়িঘড়ি নেমে পড়েছেন সলমনের 'মন'কে রক্তাক্ত করতে। স্বাভাবিক প্রশ্ন। অলিম্পিকের গুডউইল অ্যাম্বাসাডর সলমন খান কেন! তিনি কোন খেলার সঙ্গে যুক্ত? তিনি তো নিজে হিট অ্যান্ড রান কেস থেকে কৃষ্ণসার হরিণ শিকার, সবকিছুতেই অভিযুক্ত। সেই 'কালো' ছোপ লাগা মানুষটা অলিম্পিকের আসরে ভারতের মুখ! বিতর্ক বাড়ছিল।
এই পর্যন্ত পড়ে প্রশ্ন আসতে পারে, আমি কোন পক্ষে? বলছি। আসলে এই বিতর্ক নিয়ে কিছু লেখার কথা ভাবিইনি। লিখতামও না। কিন্তু সিদ্ধান্ত বদললাম, সলমনের বাবার জন্য। হ্যাঁ, সেলিম খানের জন্যই। আজ সেলিম খান বড় অসহায়ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন সলমনের। নিজের সন্তানের। মনে লাগলো তাঁর কথাগুলো। এক, সেলিম খান পর্দার হিরো নন, তবু, তাঁর ছেলে নয়, তিনিই আমার হিরো। দুই, বাবা নিরুপায় হয়ে সন্তানের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, সেখানে বাবাকে একটু সমর্থন করব না? বাবা তো বাবাই হয়। সলমনেরও। আমারও। আপনারও। আমাদের সন্তানের কাছে আমরাও। অসহায় মায়ের পাশে দাঁড়ানোটা যদি সামাজিক কর্তব্য হয়, তাহলে অসহায় বাবার পাশে দাঁড়ানোটাও অবশ্য কর্তব্য। আগে জেনে নিন, কী বলেছেন আজ সেলিম খান?
সেলিম খান আজ যা যা বললেন 'গত ২৫ বছর ধরে সলমন সবসময় বিতর্কের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। আমি একটিবারও ওকে সমর্থন করিনি। সেক্ষেত্রে নিজেকে সবসময় নিরপেক্ষ মনে হয়েছে। এই প্রথমবার আমি আমার ছেলেকে সমর্থন করছি। কারণ, আমি বিশ্বাস করি, সলমন এবার ভুল নয়। ও অ্যালকোহোলের কিংবা তামাকজাত পন্যের প্রচার করছে না। ও খেলাধুলোকে প্রচার করছে। আমি শুধু ঈশ্বরকে বলতে চাই, ঈশ্বর-ওদের ক্ষমা কোরো। ওরা জানে না, ওরা সলমনের সঙ্গে কী খারাপ করছে।'
এখানেই বক্তব্য আমার - এই যে সলমন অলিম্পিকের গুডউইল অ্যাম্বাসাডর নিযুক্ত হয়েছেন, এতে তাঁর দোষ কোথায়? তিনি তো আর নিজে হতে চাননি। তাঁকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তিনি শুধু সেই প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন। আমিও অনেকের সঙ্গেই একমত। অলিম্পিকের গুডউইল অ্যাম্বাসাডর হওয়ার জন্য সলমনের আগে অনেক অনেক নাম ছিল। সলমনের জায়গাই নেই। ঠিক। একমত। আবার এটাও মানি যে, সলমন আজ গুডউইল অ্যাম্বাসাডর, তার কারণ, তাঁকে এটা করা হয়েছে। এবার এই প্রশ্ন সলমনকে করা অমূলক যে, তিনি কেন এটা হলেন? সেটা সলমন খানকে না জিজ্ঞেস করে সর্বানন্দ সোনোয়ালদের জিজ্ঞেস করুন।
আবার এলাম সেলিম খানের কথায়। লোকটা ভালো লিখবেন না তো কে লিখবেন? বাকি জীবনের কথা ছেড়েই দিলাম। শুধু সন্তান সলমনের জন্য গত ২৫ টা বছর ধরে তিনি কম কথা শুনেছেন? ছেলে হয়তো সত্যিই খারাপ। খুব খারাপ। ধরে নিলাম। তবু, তাঁর বাবা তো। একই রক্ত তো দুজনের শরীরে বয়। তাহলে কাহাতক সহ্য করা যায়? এবার যে কলম গর্জে উঠবেই। আর সেলিম খানের কলম গর্জে উঠলে, আমার মতো অনেকেই খুশ। কারণ, একটা যুক্তি মনে গেঁথে আছে। এই সমাজের খারাপের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সেলিম খানের মস্তিষ্ক আর কলম একের পর এক প্রতিবাদী যুবকের জন্ম দিয়েছে পর্দায়। আজ যেন প্রথমবার তিনি নিজেই সেই ভূমিকায়। বাকি বিতর্ক যে পথে যাচ্ছে যাক। তা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নেই। কারণ, দোষটা কর্তাদের। সলমনের মতো স্টারদের নয়। সেলিম খানকেও মাঠে নামতে হল বলে খারাপ লাগছে..আবার ভালোও...। কারণ, এবার সলমনের সামনে কোনও দিওয়ার, কোনও জঞ্জির বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে হয় না। ক্রান্তি-টা সেলিম খান শুরু করলেন।