কফিনে ক্রিটিক, শাহরুখ এক্সপ্রেসে টুরিস্ট দর্শক
ছবির নাম- চেন্নাই এক্সপ্রেস রেটিং- ***
শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম- চেন্নাই এক্সপ্রেস
রেটিং- ***
মর্নিং, ম্যাটিনি, প্রি-ম্যাটিনি, ইভনিং, পোস্ট-ইভনিং, লেট নাইট, সুপার লেট নাইট কোনও শোয়েরই টিকিট পাইনি শুক্র আর শনি। কী আপদ! রোববার মর্নিং শো ট্রাই নিলাম। খবর কাগজে রিভিউ দেখে মনে হল এইবার চেন্নাই এক্সপ্রেসের ডেঞ্জার চেন টেনে দিয়েছেন ক্রিটিকরা। এই ডি-রেলড হল বলে। এইবার টিকিট পেয়ে যাব। গিয়ে দেখি কী, বক্স অফিসের বাইরেই একটা গোটা চেন্নাই এক্সপ্রেস এ্যাঁকাবাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। পিলপিল করছে ছেলে-বুড়ো-ইয়ার-দোস্ত-মাসিমা-দিদিমারাও! লাইন পেরিয়ে বক্স অফিস পৌঁছতেই ভেতর থেকে ভদ্রমহিলা ইশারায় নোটিশ দেখালেন। নটা, নটা পঁয়তাল্লিশ। দশটা পনের। রিভিউ লেখা ডকে উঠল ভেবে বাড়ির দিকে হাঁটছি। অমনি এক বছরপঁচিশের ছোকরা এসে পাকড়াও করল, কটা টিকিট লাগবে দিদি? ব্ল্যাকারের গন্ধ পাই যেন! নাঃ, একটা চোদ্দ জনের গ্রুপে ভুল করে পনেরটা টিকিট কাটা হয়েছে। বাধ্য হয়ে এখন পনের নম্বর সদস্য খুঁজতে হচ্ছে। অতএব, টিকিটটা কিনে আশ্বস্ত হই।
আগে শুধু শুনেছি, এই প্রথমবার হলে ঢুকে উপলব্ধি করলাম ক্রিটিকের কলম কত ক্ষুদ্র ও স্থূলকায়। মানে, যা দ্বারা খোঁচা দিলেও কোনও ক্ষতিবৃদ্ধি হয় না। রমজান মাস জুড়ে জোর কদমে পাবলিসিটি করেছেন কিং খান। দেশে ও বিদেশে। ইদের রিলিজ আগে শুধুই সলমন খানের সম্পত্তি ছিল। এক থা টাইগার, বডিগার্ড, দাবাং, দাবাং টু। সব একশো কোটির হিট। কিন্তু শাহরুখের ছবি যে ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই একশো কোটির অ্যাডভান্স বুকিং হয়ে গেল! সবার ভাবনার নাগালের বাইরে। ক্রিটিকের তাসের দেশের আঁট বাঁধন খসে পড়ল! কাণ্ডটা ঘটল কী করে?
বললেন শাহরুখ। এলেন, দেখলেন, নাচলেন, গাইলেন এবং দক্ষতার সঙ্গে মন জয় করলেন শাহরুখ। বাকিটা বললেন দর্শক। প্রথমার্ধ শুরু থেকে শেষ দর্শককে হাসালেন। দুরন্ত কমিক টাইমিং। সচিনের সেঞ্চুরির খবরে দাদাজির পঞ্চত্বপ্রাপ্তি, অস্থি ভাসাতে রামেশ্বরমের নামে গোয়ায় যাওয়া, আর যাওয়ার আগেই প্ল্যান ভেস্তে যাওয়া, সুন্দরী মীনা লোচিনীকে দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে স্টাইলে ট্রেনে তুলে দেওয়া- সিচুয়েশনাল কমেডির একটা চূড়ান্ত অবস্থান অ্যাচিভ করেছেন পরিচালক রোহিত শেট্টি। গোলমাল ও তার সিকোয়েল কিংবা বোল বচন, হলের ভেতরে লাফিং গ্যাস ছড়িয়ে দিতে সিদ্ধহস্ত তিনি। এখানে যুক্ত হয়েছে শাহরুখের ম্যানারিজম। তিন তিনটে মুশকো চেহারার "অপহরণকারী"-দের সঙ্গে ট্রেনের দৃশ্যগুলো জাস্ট মিস করলে ভুল করবেন। আর সঙ্গে দীপিকার সঙ্গে শাহরুখের গানে গানে কথোপকথন! শাহরুখ এই বয়সেও নতুন ফ্যানক্লাব তৈরি করে ফেলবেন এটা শিয়োর। প্রিয়া মণির সঙ্গে আইটেম ডান্সের পরেও মিস করবেন না মদে চুর শাহরুখের দুর্ধর্ষ ডায়লগ সিকোয়েন্স। মায় সত্তর মিনিট নিয়ে কবীর খান যে অসামান্য বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তিনিও প্রাণভরে শুনবেন।
নাচে-গানে-ডায়লগে-টুইস্টে জমজমাট ছবির প্রথম অর্ধের পয়সা উশুল। আমার মত ক্ষুদ্র ক্রিটিকেরও। সেকেন্ড হাফটা দেখতেও পারেন। তামিল ছবি থেকে আকচার টোকাটুকি চলছে টালিগঞ্জে। এখানে কিন্তু তামিল ভাষাতেই কথা বললেন কলাকুশলীরা, এবং ভাষাটা না-জানার প্রবল মজা পেতে পারেন শাহরুখের সঙ্গে এক লাইনে এসে। মানে, দ্বিতীয়ার্ধে দর্শকের ভোট পুরোটাই শাহরুখের ইভিএম মেশিনে। স্ক্রিপ্ট একটু লম্বা বটে। শেষটা বড় সেকেলে। অধিকন্তু ন দোষায়! হাই-টাই তুলে প্রস্তুত হয়ে নিন শেষ লুঙ্গি ডান্সটার জন্য। রজনীকান্তের ইয়াব্বড় ছবির সামনে নাচছেন কিং খান। ভিকট্রি স্ট্যান্ডে উঠে দাঁড়ালেন শাহরুখ। দর্শকের হাততালি। এসএমএস, বিবিএম, ওয়াসসাপ, ফেসবুক-টুইটারে তখন মোবাইল টু মোবাইল "মাউথ পাবলিসিটি" শুরু হয়ে গিয়েছে। ক্রিটিকের উপরে কাঁটা, নীচে কাঁটা দিয়ে পুঁতে ফেলার অদৃশ্য ব্যাপারটা তখনই করা হয়ে গিয়েছে।