নিহত পুলিসকর্মীকে বিশেষ শ্রদ্ধার উদ্যোগ প্রাক্তন অফিসারদের

সরেছেন নেতা। কেড়ে নেওয়া হয়েছে সহকর্মীর মৃত্যুর তদন্তের অধিকার। মুখ্যমন্ত্রীর জোড়া ধাক্কায় তলানিতে কলকাতা পুলিসের মনোবল। নগরপালের দায়িত্ব নিয়ে সেই ড্যামেজ কন্ট্রোলেই উদ্যোগী হলেন সুরজিত কর পুরকায়স্থ। যদিও সেই উদ্যোগে ঝিমিয়ে পড়া বাহিনী ঘুরে দাঁড়াবে কি না, তা নিয়ে সন্দীহান সবপক্ষই। আর এরমধ্যেই সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে আগামীকাল নিহত পুলিসকর্মীকে বিশেষ শ্রদ্ধা জানানোর উদ্যোগ নিয়েছেন প্রাক্তন অফিসাররা। 

Updated By: Feb 17, 2013, 11:09 AM IST

সরেছেন নেতা। কেড়ে নেওয়া হয়েছে সহকর্মীর মৃত্যুর তদন্তের অধিকার। মুখ্যমন্ত্রীর জোড়া ধাক্কায় তলানিতে কলকাতা পুলিসের মনোবল। নগরপালের দায়িত্ব নিয়ে সেই ড্যামেজ কন্ট্রোলেই উদ্যোগী হলেন সুরজিত কর পুরকায়স্থ। যদিও সেই উদ্যোগে ঝিমিয়ে পড়া বাহিনী ঘুরে দাঁড়াবে কি না, তা নিয়ে সন্দীহান সবপক্ষই। আর এরমধ্যেই সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে আগামীকাল নিহত পুলিসকর্মীকে বিশেষ শ্রদ্ধা জানানোর উদ্যোগ নিয়েছেন প্রাক্তন অফিসাররা। 
গার্ডেনরিচকাণ্ডে হামলার নেতৃত্বে বরো চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না। সবাই দেখেছেন সেই ফুটেজ। কিন্তু মানতে নারাজ পুরমন্ত্রী।
পুলিসকর্মী খুনে অভিযুক্তদের গ্রেফতার নিয়ে টালবাহানায় ক্ষোভ ছড়ায় পুলিস মহলে। প্রথমে হাসপাতালে, পরে গার্ডেনরিচ থানায় বিক্ষোভের মুখে পড়েন পুলিস কমিশনার। পুলিসের একাংশ সাফ বলে দেন, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা না হলে পুলিস গুলি চালিয়ে পরে বলবে ভুল হয়েছে। প্রমাদ গোনেন পুলিস কমিশনার। বুঝতে পারেন, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা না হলে বাহিনীর শৃঙ্খলা ধরে রাখা যাবে না। তৃণমূলের তরফে চাপ ছিল, দলের কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। কিন্তু পুলিস কমিশনারের নির্দেশে সেই রাতেই পুলিস গ্রেফতার করে মূল দুই অভিযুক্ত সহ ১২ জনকে। বাহিনীর মনোবল ধরে রাখতে মরিয়া পুলিস কমিশনার পুরমন্ত্রীকে বলেন, মুন্নাকেও গ্রেফতার করতে হবে। কিন্তু পুরমন্ত্রী নারাজ। এরপরেই বৃহস্পতিবার নিহত পুলিসকর্মীর বাড়িতে গিয়ে তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে পুলিসের সম্মাণ রক্ষায় সরকারের দায়িত্বের কথা বলেন রাজ্যপাল।
কিন্তু সেই রাতেই প্রথম ধাক্কা। সরিয়ে দেওয়া হল পুলিস কমিশনার রঞ্জিত পচনন্দাকে।
সহকর্মী খুনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযানে  সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন কমিশনার। তাতে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে বাহিনীও। কিন্তু পচনন্দা অপসারণের পরে ফের হতোদ্যাম কলকাতা পুলিস। সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব রাজ্যপালও। 
অপেক্ষা করছিল আরও বড় ধাক্কা। গার্ডেনরিচ কাণ্ডের তদন্তভারই কলকাতা পুলিসের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে সিআইডি-কে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিসমন্ত্রী। প্রশ্ন উঠতে শুরু করল, পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ডে কার্যত খড়ের গাদা থেকে সূচ বের করে আনা কলকাতা পুলিসের উপর কেন ভরসা রাখতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী?  তদন্তকে প্রভাবিত করতেই কি পছন্দের অফিসারের অধীনে থাকা সিআইডি-র হাতে মুখ্যমন্ত্রী তদন্তভার তুলে দিলেন, সেই প্রশ্নও উঠল।
নতুন পদে যোগ না দিয়ে রঞ্জিত পচনন্দা পাল্টা একটা ধাক্কা দিলেন। বুঝিয়ে দিলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত তাঁর না পসন্দ। এসব টানাপোড়েনে এক সময় দক্ষতায় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কলকাতা পুলিসের মনোবল তলানিতে এসে ঠেকেছে। এই কঠিন চ্যালেঞ্জ সামলাতেই শনিবার দুপুরে আলিপুর বডিগার্ড লাইনে জরুরি বৈঠকে বসলেন নতুন পুলিস কমিশনার সুরজিত কর পুরকায়স্থ।
সেখান থেকে গার্ডেনরিচ থানা, হরিমোহন ঘোষ কলেজ। তাতে কাজ কতটা হল সে প্রশ্নের জবাব দেবে ভবিষ্যত। 
তবে এরমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে, পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে কলকাতা পুলিসের কর্মদক্ষতা সাধারণ মানুষের বাহবা পেয়েছিল। কিন্তু তারপরেই সরানো হয় তদন্তকারী বাহিনীর প্রধান দময়ন্তী সেনকে। এখনও অধরা প্রধান অভিযুক্ত। গার্ডেনরিচেও পুলিসি তত্পরতায় দুঘণ্টার মধ্যে প্রধান দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তারপরেই কমিশনার অপসারণ। তদন্তভার হস্তান্তর। এবং এখনও অধরা অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত মুন্না। গার্ডেনরিচ কাণ্ডে অভিযুক্ত কংগ্রেস শিবিরের মোক্তার ঘনিষ্ঠ আবদুর রহমান ওরফে বিরিয়ানি সিরাজ শনিবার গ্রেফতার হয়েছে। তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিআইডি নয়, তাকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিসই। তবু কলকাতা পুলিসের উপর কেন ভরসা করছেন না মুখ্যমন্ত্রী?
কলকাতার পুলিস অফিসারের অনেকেরই দাবি, মুখ্যমন্ত্রী ভরসা রাখলে এতদিনে মুন্নাকেও ধরে ফেলতেন তাঁরা। ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। এর আগে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছিলেন একাধিক আইপিএস অফিসার। আর নজিরবিহীন ভাবে রবিবার ধর্মতলা মেট্রো চ্যানেলে নিহত পুলিসকর্মী তাপস চৌধুরীর স্মরণসভার আয়োজন করেছেন কলকাতা পুলিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। এটাও কি সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একটা চেহারা?  
 

.