ডানা ছাঁটলেও 'অপরিহার্য' ববির পাশেই দল

ঘরে-বাইরে চাপের মুখে শেষপর্যন্ত পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ডানা খানিকটা ছাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী। সরানো হল সরকারের মুখপাত্রের পদ থেকে। জারি হল মিডিয়ার সামনে মুখ খোলায় নিষেধাজ্ঞা। তবে অতিপ্রিয় ববিকে আড়াল করতে মুখ্যমন্ত্রী যে সচেষ্ট শনিবার তৃণমূল কংগ্রেস ভবনে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সাংবাদিক সম্মেলনেই তা স্পষ্ট।      

Updated By: Feb 17, 2013, 09:16 AM IST

ঘরে-বাইরে চাপের মুখে শেষপর্যন্ত পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ডানা খানিকটা ছাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী। সরানো হল সরকারের মুখপাত্রের পদ থেকে। জারি হল মিডিয়ার সামনে মুখ খোলায় নিষেধাজ্ঞা। তবে অতিপ্রিয় ববিকে আড়াল করতে মুখ্যমন্ত্রী যে সচেষ্ট শনিবার তৃণমূল কংগ্রেস ভবনে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সাংবাদিক সম্মেলনেই তা স্পষ্ট।      
চিড়িয়াখানার কর্মী বিক্ষোভ সামলাতে ভরসা ববি মানে ফিরহাদ হাকিম। নানা ইস্যুতে মিডিয়ার সামনে তিনিই সরকারের মুখ। বন্দর এলাকার নানা ঘটনার রিপোর্ট পুলিস কমিশনারের বদলে জানান ফিরহাদ হাকিমকে। সরকারি সভায় ডিসি বন্দরকে তেমন নির্দেশও নাকি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আবার মুখ্যমন্ত্রীর সততা নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুললেন। সেই গুরুতর ইস্যুতেও দলের মুখ সেই ববিই।
গার্ডেনরিচে পুলিসকর্মী খুনের পরেও নিশ্চিন্ত দিদি খেজুরির সভায় গান শুনে রওনা দিয়েছিলেন দিঘায় ছুটি কাটাতে। সে-ও তো ববি নিশ্চিন্ত করাতেই।
দিদির আশির্বাদে ববিও বেপরোয়া। গার্ডেনরিচকাণ্ডে তাঁর ঘনিষ্ঠদের ছবি দেখা গেছে ক্যামেরা ফুটেজে। এমনকী তাঁর অতি বিশ্বস্ত মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নাকে দেখা গেছে হামলায় নেতৃত্ব দিতে। কিন্তু ববি বললেন ``মুন্না ঘটনার সঙ্গে জড়িত মানি না``।
কথায় বলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। পুরমন্ত্রীর বিশ্বাস নিয়ে তর্ক জমল। নিন্দার ঝড় উঠল। আর সবচেয়ে বড় বিমারটা ছুড়লেন সরকারের সাংবিধানিক প্রধান। সরকারের দক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন রাজ্যপাল। 
দলের অন্দরেও সক্রিয় অনেক নেতাই, ববির দোর্দন্ডদাপটে যাঁরা অনেকটাই কোনঠাসা। তাঁদের দাবি, গ্রেফতার করা হোক ববি-ঘনিষ্ঠ মুন্নাকে। তাঁদের হিসেব, কান টানলে মাথাও আসবে। কিন্তু নেত্রীর কানে সে কথা বলার সাহস নেই ওই নেতাদের। রাজ্যপালের মন্তব্যের পরে হাত গুটিয়ে থাকতে পারেন না মুখ্যমন্ত্রীও। তাই শনিবার সরকারের মুখপাত্রের পদ থেকে সরানো হল পুরমন্ত্রীকে। মিডিয়ার সামনে তাঁকে মুখ খুলতেও বারণ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নির্বাচনী দায়িত্ব থেকেও সরানো হয়েছে ববিকে। কোনওটাই অবশ্য ফলাও করে বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। যেমনটা বলেছিলেন পুলিস কমিশনারকে সরিয়ে দিয়ে।
তৃণমূলের অনেক নেতাই ভাবছেন আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে ববির বিরুদ্ধে। যেমনটা হয়েছিল ভাঙড়ে আরাবুল ইসলামের ক্ষেত্রে। রেজ্জাক মোল্লার উপর হামলা আর বামনঘাটা কাণ্ডের পরে প্রকাশ্যেই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল দল। 
শেষ পর্যন্ত অবশ্য দল থাকেনি আরাবুলের পাশে। তাই ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়কের ঠিকানা এখন হাজত। সেখানে বসে আরাবুলের আক্ষেপ, তিনি সব কাজই করেছিলেন দলকে জানিয়ে। তৃণমূলের কিছু নেতার আশা, ববির ক্ষেত্রেও তেমন কিছু করবেন নেত্রী। কিন্তু তৃণমূলেরই আরেক অংশের মতে, আরাবুল আর ববির গুরুত্ব দলনেত্রীর কাছে এক নয়। পরিস্থিতির চাপে ডানা কিছুটা ছাঁটলেও অতি বিশ্বস্ত ববিকে কিছুতেই আরাবুল বানাবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার তৃণমূল ভবনে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সাংবাদিক সম্মেলনও যেন সেই মতকেই প্রতিষ্ঠিত করল।

.