খুনের অভিযোগ ভিত্তিহীন, আত্মহত্যাই করেছে লেক থানার দশ বছরের নাবালক সানি!

তার মধ্যে কেন হতাশা দানা বাঁধতে শুরু করেছিল ? পুলিসের তদন্তে যে তথ্যগুলো উঠে এসেছে সেগুলো হল ----

Reported By: অয়ন ঘোষাল | Edited By: অধীর রায় | Updated By: Jun 19, 2020, 03:37 PM IST
খুনের অভিযোগ ভিত্তিহীন, আত্মহত্যাই করেছে লেক থানার দশ বছরের নাবালক সানি!

নিজস্ব প্রতিবেদন: ২৫বাই বি ঢাকুরিয়া স্টেশন রোডে দশ বছরের বালক সানি মণ্ডলের মৃত্যুর কিনারা করল লেক থানার পুলিশ । পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে খুন নয় , দশ বছরের সানি মন্ডল অবসাদে আত্মহত্যা করেছে । ছোট্ট এই ছেলেটি যাকে নাতি স্নেহে ন বছর ধরে বড় করে তুলেছেন তপতী বিশ্বাস  । তার মধ্যে কেন হতাশা দানা বাঁধতে শুরু করেছিল ? পুলিসের তদন্তে যে তথ্যগুলো উঠে এসেছে সেগুলো হল ----

*  সানি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মারাত্মক দুরন্ত ও অবাধ্য হয়ে উঠেছিল। ছাদের চিলেকোঠার ঘর ইদানীং তার গোটা দুনিয়া হয়ে উঠেছিল । সেখানে গত প্রায় আড়াই তিন মাস দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাত চিলেকোঠার ঘরে । একা থাকতে পছন্দ করত। মাঝে মাঝে ছাদের কার্নিশ বেয়ে হাঁটত ।

*  এই সব আচরণের জন্য ইদানীং তপতী বিশ্বাস সানিকে প্রায়শই বকাঝকা করতেন। সানি চিৎকার করত। প্রতিবেশীরাও পুলিসকে এমনটা জানিয়েছেন।

*  তপতীর একমাত্র সন্তান সঞ্জীব। ২০১৭ সালে তার বিয়ে হয়।  সঞ্জীবের দুটি সন্তান হয়। সানি এই দুই শিশুকে সহ্য করতে পারত না বলেই দিনের বেশিরভাগ সময় তাদের এবং তপতীকে এড়িয়ে চিলেকোঠায় বসে থাকত একা একা। তার মনে হয়েছিল, তার আদরের ভাগ কমে গিয়েছে। তাই তাকে অবহেলা করেন ও বকাঝকা করা হচ্ছে। আবার নিজের আসল মা বাবাকে সেই অর্থে পাত্তাই দিত না সানি। ফলে তার শিশুমনে এক ভয়ঙ্কর শূন্যতা তৈরি হয়েছিল।

*  তপতী বিশ্বাসের  বাড়ির পরিচারিকার নাতি হয়ে এ বাড়িতে সানির প্রথম প্রবেশ। ইদানীং তাকে দিয়ে বাড়ির টুকটাক কাজ করানো হচ্ছিল। যেমন মোড়ে মাথার দোকান থেকে পাউরুটি আনা বা ছাদ থেকে শুকনো কাপড় তুলে আনা বা ভিজে কাপড় মেলে দিয়ে আসা। তপতী বিশ্বাসের এই আচরণ সানিকে এমনটাও ভাবতে বাধ্য করেছিল খুব সম্ভবত, যে আদতে সে এই বাড়ির পরিচারিকার আত্মীয় এবং তার আসল ভূমিকা আস্তে আস্তে তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন বাড়ির মালকিন যাকে সে এতদিন নিজের দিদা ভেবে এসেছে।

*  ঘটনার দিন অর্থাৎ বুধবার বেলা  ১টা নাগাদ সানিকে তপতীদেবী ছাদ থেকে শুকনো কাপড় তুলতে পাঠান। দীর্ঘক্ষণ সে নিচে নামেনি। প্রথমে সবাই ভেবেছিল, সে চিলেকোঠায় সময় কাটাচ্ছে। আড়াইটে নাগাদ মধ্যাহ্নভোজ দেওয়ার সময় তাকে ছাদে ডাকতে যান তপতীদেবী। গিয়ে দেখেন, সানি কাপড় মেলার লোহার সরু তার গলায় পেঁচিয়ে চিলেকোঠার মেঝেতে পড়ে আছে।

প্রাথমিকভাবে খুনের অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্তের পর সানির দেহ নিয়ে আসার পর তার পরিবার এবং প্রতিবেশীরা পথ অবরোধ করে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানায় । উত্তেজিত মারমুখী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিসকে লাঠিচার্জ করতে হয়েছিল । ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর সানির আসল বাবা মা খুনের যে অভিযোগ করছিল তা ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে দিয়েছে পুলিস। 

ডিসি কমব্যাটকে নিগ্রহকাণ্ড, পুলিস ট্রেনিং স্কুল থেকে বদলি আরও ২৫ জন
২৫বাই বি ঢাকুরিয়া স্টেশন রোড সংলগ্ন পঞ্চানন বস্তি সানির আসল বাড়ি হলেও  ওর বড় হয়ে ওঠা এক ভিন্ন পরিবেশে । তাই পালিত দিদা তপতী বিশ্বাসের কাছে একাকিত্ব বোধ করলেও সানির পক্ষে বস্তির পরিবেশ মানিয়ে নিয়ে সেখানে  সম্ভব ছিল না । তাই সানি একাকিত্ব বোধ করার পাশাপাশি অবসাদে ভুগতে শুরু করে । এমনটাই দাবি করছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা ।

.