দল-দীনেশ কোন্দল চরমে, পদত্যাগ নিশ্চিত
দল ও দলীয় নেত্রীর সঙ্গে বিরোধে গিয়ে পদ খোয়াতে চলেছেন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। বুধবার রেল বাজেটে ভাড়াবৃদ্ধির প্রস্তাব পেশের পর সাংসদদের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার নির্দেশ দেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের বিরোধিতায় দীনেশ নরম তো হনইনি, উল্টে বিকেলে এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, তিনি ভগবানকেও ভয় পান না।
দল ও দলীয় নেত্রীর সঙ্গে বিরোধে গিয়ে পদ খোয়াতে চলেছেন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। বুধবার রেল বাজেটে ভাড়াবৃদ্ধির প্রস্তাব পেশের পর সাংসদদের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার নির্দেশ দেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের বিরোধিতায় দীনেশ নরম তো হনইনি, উল্টে বিকেলে এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, তিনি ভগবানকেও ভয় পান না। দলনেত্রীর নাম না-করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, "গত ২ বছর রেল আইসিইউ-তে রয়েছে। রেলের স্বাস্থ্য উদ্ধারে যা করা উচিত, আমি তাই করেছি।" তাঁর প্রশ্ন, "আমি মহাকরণ থেকে রেলমন্ত্রক চালাব, না রেল ভবন থেকে?"
এর পরই রেলমন্ত্রীর পদ থেকে দীনেশ ত্রিবেদীর বিদায় কার্যত নিশ্চিত হয়ে যায়। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে ফ্যাক্স বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী রেলমন্ত্রী হিসাবে মুকুল রায়ের নাম প্রস্তাব করেন। ওদিকে মুকুল রায় ও দীনেশ ত্রিবেদী, দুজনকেই কলকাতায় ডেকে পাঠিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনে করা হচ্ছে, দীনেশ ত্রিবেদীকে পদত্যাগের নির্দেশ দেবেন দলনেত্রী।
চুপ থাকতে রাজি নন রেলমন্ত্রীও। অপসারণের আগে বৃহস্পতিবার সকালেই তিনি পদত্যাগ করতে পারেন বলে ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে।
ওদিকে গোটা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে রাতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠকে বসেন মনমোহন সিং, সনিয়া গান্ধী ও প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রণববাবু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন। বাজেট অধিবেশন পর্যন্ত দীনেশ ত্রিবেদীকে রেলমন্ত্রী পদে বহাল রাখার অনুরোধ করেন তিনি। যদিও তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। এর পর মুকুল রায়ের নামে সিলমোহর দেয় কংগ্রেস কোর কমিটি।
রেল বাজেটে যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের ঘরের কোন্দল এবার প্রকাশ্যে। অবিলম্বে রেলমন্ত্রীকে দায়িত্ব ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে দল। রেলবাজেটের বিরুদ্ধে ছাঁটাই প্রস্তাবও আনতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রেলমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার দেখা করতে যাচ্ছেন তৃণমূলের সাংসদরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, কোনওভাবেই তাঁরা এই ভাড়াবৃদ্ধি মানবেন না।
সংসদে রেলবাজেট পেশের সময় দীনেশ ত্রিবেদী ভাড়াবৃদ্ধির কথা ঘোষণা করতেই কলকাতা থেকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এসএমএস পাঠান তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই এসএমএস যায় দলের আরও বেশ কয়েকজন সাংসদের কাছেও। নির্দেশ একটাই। রেলে-ভাড়া বাড়ানোর বিরোধিতা করুন। নেত্রীর কাছ থেকে এই নির্দেশ পেয়ে রীতিমতো হতবাক তৃণমূলের সাংসদরাও। সংসদের অলিন্দে দাঁড়িয়েই চড়া সুরে বিরোধিতা করেন রেল বাজেটের।
সুদীপ বাবুর এই বিরোধিতার পর রীতিমতো নড়েচড়ে বসে রাজনৈতিক মহল। প্রধানমন্ত্রী ও প্রণব মুখোপাধ্যায়, দুজনেই স্বাগত জানিয়েছেন বাজেটকে। সকলে মিলে খোঁজ নিতে শুরু করেন কেন, এমনটা বললেন সুদীপ বাবু। জল্পনা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায় তৃণমূলের অপর মন্ত্রী সুলতান আহমেদের বক্তব্যে। তিনি বলেন, বাধ্য হয়েই ভাড়া বাড়ানোর সতর্ক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন রেলমন্ত্রী।
মমতা ঘনিষ্ঠ সুলতানের বক্তব্যে এবার বিভ্রান্তি তুঙ্গে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য নিজের অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যান সুলতান আহমেদ। একই নেতার ভিন্ন সুর। বলেন, আমার দলীয় নির্দেশ জানা ছিল না। দলের অবস্থানই আমার অবস্থান।
নিজের দলের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এভাবে সরাসরি জেহাদ ঘোষণা? দিল্লি থেকে কলকাতা, আলোড়ন তৈরি হয় রাজনৈতিক মহলে। এবার মুখ খোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। নন্দীগ্রামে কৃষক দিবসের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের না-জানিয়ে রেল বাজেটে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি। কিছুতেই ভাড়া বাড়তে দেব না।
কেন এমনটা হল ? সরকার অথবা দল যে কোনও ক্ষেত্রেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তো শেষ কথা। তিনি কি জানতেন না, ভাড়া বৃদ্ধি হচ্ছে ? একাই এতবড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন দীনেশ ত্রিবেদী! রেলমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন এই ভাড়া বাড়ার দায় এবং দায়িত্ব তাঁর নিজের। এত চাপেও নিজের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ দীনেশ ত্রিবেদী। জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও ভাবেই তিনি অবস্থান বদলাচ্ছেন না।
সবমিলিয়ে সংঘাত এখন চরমে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, দীনেশ ত্রিবেদীকে পদত্যাগের জন্য। তৃণমূল নজিরবিহীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদে রেল বাজেটের বিরুদ্ধে ছাঁটাই প্রস্তাব আনবেন তাঁরা। এই অবস্থায় শেষপর্যন্ত কি গদি বাঁচাতে পারবেন দীনেশ ত্রিবেদী? না কি মাঝপথেই সরতে হচ্ছে তাঁকে ? ঘটনা যাই-ই ঘটুক না কেন তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল যে এমন চেহারা নেবে তা বোধহয় ভাবতে পারেননি কেউই।