সাতকাণ্ড 'গণশক্তি' পড়ে পুরভোটে জোট নিয়ে নিচুতলার মত জানতে চাইলেন সোমেনরা
২০১৪ সালে জোট হয়েছিল বাম-কংগ্রেসের। তবে ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছিল, 'সমঝোতা'।

মৌমিতা চক্রবর্তী
লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পর সিপিএম নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা বেড়েছে কংগ্রেসের। ভাটপাড়ায় একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল দুই দলের নেতাদের। নানা উপলক্ষে হরিহরআত্মা হয়েছেন এককালের রাজনৈতিক বৈরীরা। উপনির্বাচনে জোটে লড়াই করেছেন। কিন্তু লাভ হয়নি! আসন্ন পুরভোটে লাভ-ক্ষতির হিসাব করতে এবার কর্মীদের মত নেওয়া আবশ্যক বলে মনে করছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। জেলার নেতারা নিজেদের 'অমূল্য' মতামত পাঠাবেন সোমেন মিত্রের ইমেলে।
২০১৪ সালে জোট হয়েছিল বাম-কংগ্রেসের। তবে ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছিল, 'সমঝোতা'। সেই 'সমঝোতা' এক্সপ্রেস গন্তব্যে পৌঁছনো তো দূর, রীতিমতো বেলাইন হয়েছিল। তারপর আর 'সমঝোতা'র কারবারিদের একসঙ্গে দেখা যায়নি। সিপিএমের অন্দরেই প্রশ্ন উঠছিল, বাম ক্যাডাররা কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেসের ভোট তাদের ইভিএমে আসেনি। আর দুই দলের নেতাদের কাছাকাছি দেখা যায়নি। বিধানসভায় পাশাপাশি হয়েছেন বটে। আবার এল ২০১৯। বিজেপি ও তৃণমূল রুখতে শুরু হল নতুন করে জোটের উদ্যম। আসন নিয়ে এমন কাড়াকাড়ি শুরু হল যেন দুই দলই ৪২-এ ৪২ করে ফেলবে! যাই হোক ভোটের ফলেই স্পষ্ট, পশ্চিমবঙ্গে প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে বাম-কংগ্রেস। বাস্তব বুঝেই শুরু হল জোটকথা। বিমান বসু ও সোমেন মিত্রের হাত ধরাধরি করার বিরল ছবিও উঠল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছোড়দা-র ভাইরাল ছবি, গণশক্তি পড়ছেন। পড়াচ্ছেনও সম্ভবত।
কিন্তু, উপনির্বাচনে জোট করে লাভ হল না দুই দলের। বরং ভোট আগের চেয়েও কমেছে। কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার জানালেন, যৌথ মিটিং হল না কোথাও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের গলাতেও একই সুর। তাঁর উপলব্ধি, একটা ভাটপাড়া ছাড়া আর যৌথ কর্মসূচি কোথায় হল? মানুষ কেন আমাদের বিশ্বাস করবে? ভোটের সময় জোট করলে মানুষের ভরসা আসবে কেন?''
উপনির্বাচনে ভরাডুবির পর জেলা কংগ্রেস সভাপতিদের উদ্দেশে প্রদেশ কংগ্রেস দফতর থেকে জারি হল নির্দেশিকা। সেখানে বলা হয়েছে, জেলায় কতগুলি পুরসভা আছে, তা জানাতে হবে। নির্বাচন বাকি হয়েছে কোথায়? জেলা প্রশাসনের কাছে কী খবর? পুরভোটের প্রস্তুত থাকতে হবে নেতা-কর্মীদের। শেষ নির্বাচনের ফলাফল জানাতে হবে। এমন মামুলি তথ্য কর্মীদের থেকে চাওয়া হচ্ছে? ঠিক ৬ নম্বরে পয়েন্টে আসলেই স্পষ্ট হবে আসল কারণ। কী লেখা? জোটের বিষয়ে জেলায় কী অবস্থান হবে? নীচে লেখা সোমেন মিত্রের ইমেল আইডি।
সাতকাণ্ড 'গণশক্তি' পড়ে এবার কংগ্রেস নেতাদের হুঁশ ফিরেছে, আচ্ছা জোট করে লাভ হল তো? ২০২১ সাল পর্যন্ত জোট থাকবে বলে সম্মত হয়েছেন সোমেন-সূর্যকান্ত মিশ্ররা। তাহলে পুরভোটের আগে কেন আচমকা জেলা নেতৃত্বের মতামত জানতে চাওয়া হল? কেউ যদি জোট না চান, তখন কী অবস্থা হবে প্রদেশ নেতৃত্বের? কী সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা? একবার জোট, একবার 'একলা চলো'- এমন করলে একটা বড়জোর 'তু তু ম্যায় ম্যায়' কমেডি হতে পারে, কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। সিপিএম-ও কি এভাবে জোটে থাকবে? প্রশ্ন কিন্তু উঠবে।
আরও পড়ুন- জয়ের আনন্দে গা ভাসানো নয়, বরং একুশের লক্ষ্যে রণনীতি সাজালেন নেত্রী