সোশ্যাল মিডিয়াই সচিনের সংসদ! 'ভাষণে' বললেন, 'খেলাই দেশ গড়ে'
আমার লক্ষ্য হল একটি সুস্থ ভারত গড়া। ২০২০ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের সেই দেশ হবে যার জনসংখ্যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে যুবরা। তবে যুবসমাজ মানেই আমরা সুস্থ, এটা ভাবলে ভুল হবে। আমাদের দেশ ডায়াবেটিস প্রবণ(বিশ্বে তৃতীয়)। এই রোগে প্রায় ৭ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ রোগাগ্রস্ত। এই রোগ ভারতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। যে কারণে আমাদের দেশ এগোতে পারছে না। আমার মনে হয় এই প্রতিকূলতা দূর করতে ভারতকে হতে হবে 'স্পোর্টিং নেশন'।
নিজস্ব প্রতিবেদন: ওয়াংখেড়ে দেশবাসী দেখেছিল সচিনের কান্না। সেদিন কিছুতেই লুকাতে পারেননি 'ক্রিকেটেশ্বর'। পানামা হ্যাট পরে হাতে স্টাম্প তুলে ফিরছেন সচিন। সেদিন তাঁর আবেগঘন বিদায় বক্তৃতায় চোখ ছলছল করে উঠেছিল গোটা দেশেরও। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় অভিষেকই সচিনকে স্তব্ধ করে দিল হট্টগোল। রাজনৈতিক ইস্যুতে সরগরম রাজ্যসভায় একটা শব্দও বলতে পারলেন না ভারতরত্ন। এই নিয়ে মনখারাপ ছিল গোটা দেশের। তবে তাঁর বলা থেমে থাকেনি...
হ্যাঁ, সচিন ফিরলেন নিজের স্বভাবসিদ্ধ মেজাজেই। সোশ্যাল মিডিয়ায়কে প্ল্যাটফর্ম বানিয়ে মনের কথা বললেন সচিন। শুক্রবার ১০১তম সেঞ্চুরিটা হাঁকিয়েই দিলেন মাস্টার ব্লাস্টার।
স্তব্ধ সচিন! গণতন্ত্রের মন্দিরে বাকরূদ্ধ ভারতরত্ন
১৫ মিনিটের ফেসবুক বার্তায় সচিন যা বললেন:
নমস্কার। আমার প্রিয় দেশবাসী, কাল যে কথাগুলি আপনাদের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলাম আজ সেগুলিই বলার চেষ্টা করছি। ক্রিকেটের ছোট ছোট পথ চলাই আজ আমাকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। জীবনের অনেক স্মৃতি আমি সংগ্রহ করেছি ক্রিকেট থেকেই। আমি সবসময় খেলতে ভালবাসি এবং ক্রিকেট আমার জীবন।
আমার বাবা, অধ্যাপক রমেশ তেন্ডুলকর একজন কবি ছিলেন। তিনি লিখতেন। আমার বাবা সবসময় আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। আমি যা করতে চাই তা করতে আমাকে সাহায্য করেছেন। বাবার থেকে পাওয়া আমার শ্রেষ্ঠ উপহার হল, খেলাধুলা করার স্বাধীনতা। সে জন্য আমি তাঁর কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ।
আমাদের দেশে এমন অনেক বিষয় আছে, যেগুলির ওপর আমাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। অর্থনৈতিক উন্নতি, দারিদ্র, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি সব বিষয়েই আমাদের নজর দেওয়া উচিত। একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমি খেলা, স্বাস্থ্য এবং ভারতের সুস্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলব।
আমার লক্ষ্য হল একটি সুস্থ ভারত গড়া। ২০২০ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের সেই দেশ হবে যার জনসংখ্যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে যুবরা। তবে যুবসমাজ মানেই আমরা সুস্থ, এটা ভাবলে ভুল হবে। আমাদের দেশ ডায়াবেটিস প্রবণ(বিশ্বে তৃতীয়)। এই রোগে প্রায় ৭ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ রোগাগ্রস্ত। এই রোগ ভারতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। যে কারণে আমাদের দেশ এগোতে পারছে না। আমার মনে হয় এই প্রতিকূলতা দূর করতে ভারতকে হতে হবে 'স্পোর্টিং নেশন'।
সুস্থ থাকার জন্য আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। একটি ক্রীড়াপ্রেমী দেশ থেকে ভারতকে হতে হবে 'খেলার দেশ'। সবাইকে আরও বেশি কর্মঠ হতে হবে। সবার অংশগ্রহণও অতিআবশ্যক। দেশের একটি স্বতন্ত্র ক্রীড়া সংস্কৃতি গড়ে তোলা দরকার।
(বাবা রমেশ তেন্ডুলকরের সঙ্গে সচিন)
ছোটবেলার দুষ্টুমি করা থেকে আমার ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন, এই লক্ষ্যে আমি প্রতিদিন আরও বেশি শৃঙ্খলাপরায়ন হয়েছি। অনেক বেশি মনোনিবেশ করেছি। লক্ষ্যে পৌঁছতে একটা একটা করে পরিকল্পনা করেছি এবং সেগুলির বাস্তবায়নে নজর দিয়েছি। যতবারই আমি অসফল হয়েছি ক্রিকেট আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে খেলোয়াড়োচিত ভঙ্গিতে ফিরতে হয়।
নিজের সংক্ষিপ্ত বার্তায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন সাংসদ সচিন রমেশ তেন্ডুলকর। বক্সার মেরি কম, ভারত্তোলনে সোনাজয়ী অ্যাথলিট মীরাবাই চানু, ত্রিপুরার জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকার, ফুটবলার ভাইচুং ভুটিয়া, সরিতা দেবী, সঞ্চিতা চানু প্রমুখদের নাম বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন তিনি। এছাড়া 'বেটি বাচাও-বেটি পড়াও' এর মতো প্রকল্পেরও উল্লেখ ছিল তাঁর বক্তব্যে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সচিন বলেন, "আমাদের ঘরে মেয়ের জন্ম হলে আমরা বলি লক্ষ্মী এসেছে। আমাদের উচিত সেই লক্ষ্মীকে লক্ষ্মীর মতোই রাখা। সিন্ধু, সাইনা, সাক্ষী, সানিয়া, মিতালিরা দেখিয়ে দিয়েছেন ভারতকন্যারা কী কী করতে পারেন। স্বপ্ন কখনো বিচ্ছিন্নতাবাদের জন্ম দেয় না।"
(২০০তম টেস্ট খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর)
বক্তৃতার শেষে নিজের স্বপ্ন নিয়ে ভারতরত্ন বলেন, "খেয়েছো? ঘুমিয়েছো? এই প্রশ্নগুলির সঙ্গে যেদিন বাবা-মা তাঁর সন্তানকে জিজ্ঞেস করবে, আজ তুমি খেলছো, সেদিন আমার স্বপ্ন সফল হবে।" দেশবাসীর কাছে সচিনের আবেদন, "আমার স্বপ্নকে সবার স্বপ্ন করুন, স্বপ্ন সত্যি হয়।"
সচিনের পরমার্শ :
- পড়ুয়াদের স্কুলে বেশি খেলায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া
- অনেক বেশি 'প্লে-গ্রাউন্ড' তৈরি করা
- স্মার্ট সিটির সঙ্গেই আমাদের উচিত স্মার্ট স্পোর্টিং সিটি বানানো
- খেলাধূলার পরিকাঠামোগত উন্নয়নে প্রয়োজন সরকারের সহায়তা
- নীতিগত বিষয়েও খেলাধূলাকে স্কুল পাঠক্রমে আনা উচিত (জেলা, রাজ্য, জাতীয় স্তরের পরীক্ষায় নম্বর যোগের মত বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত)
- প্রতিভা খুঁজে বার করার জন্য বিশেষ নজর
- বিভিন্ন খেলায় প্রশিক্ষকদের উপর বিশেষ গুরুত্ব
- ভারতের প্রতিটি অ্যাথলিটদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা
- পড়ুয়াদের ভারতের ক্রীড়া ইতিহাসের ধারণা প্রদান
- জানা উচিত কিংবদন্তি অ্যাথলিটরা কী কী অর্জন করেছেন
- 'খেলার অধিকার' আইন প্রণয়ন
- প্রত্যেক স্কুলে শিক্ষার্থীকে খেলার অধিকার দেওয়া হোক