ছোট বলেই তুছ্ব নয়
২০১১ বিশ্বকাপের পর আইসিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল 'শর্ট অ্যান্ড কম্প্যাক্ট' কাপের লক্ষ্যে ১০টি দেশের বিশ্বকাপ হবে। অর্থাত্ অযথা একতরফা ম্যাচ না করে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার ম্যাচের জন্য ছোট দেশেদের বাদ দেওয়া। সিদ্ধান্ত হয়েছিল আইসিসি-র পূর্ণ সদস্য দশটি (ICC full member) দেশকেই নিয়েই বিশ্বকাপ হবে। কিন্তু হিসাবটা উল্টে দিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। ২০০৭, ২০১১ বিশ্বকাপে দারুণ পারফরম্যান্স দেখানো আয়ারল্যান্ড দাবি করেছিল সহযোগী দেশেদেরও (associate nations) বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ করে দিতে হবে না হলে ক্রিকেটের প্রসার ঘটানোর স্বপ্ন মাঠেই মারা যাবে। শেষ অবধি চাপে পড়ে অ্যাসোসিয়েট দেশগুলিকে বিশ্বকাপে খেলার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। যোগ্যতাঅর্জন পর্বের ম্যাচ খেলে চারটি দেশ বিশ্বকাপের মূলপর্বে ওঠে। আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান, সংযুক্ত আরবআমিরশাহি আর স্কটল্যান্ড এই আইসিসি-র এই চারটি অ্যাসোসিয়েট সদস্য দেশ এবারের বিশ্বকাপে খেলবে।
কিন্তু অংশগ্রহণ করা নয় এই চারটি দেশের দায়িত্ব অনেক, কারণ এবার ভাল কিছু করে না দেখাতে পারলে পরেরবার হয়তো ক্রিকেট বিশ্বের আর কোনও ছোট দেশদের (পরিভাষায় যাদের বলে 'minnows') খেলতে দেখা যাবে না। কারণ স্পন্সর আর বড় দেশগুলির চাপে আইসিসি চাইছে একতরফা ম্যাচ বাদ দেওয়ার লক্ষ্যে ছোট দেশগুলিকে না খেলানোর। তাই অনেকটা ডু অর ডাই অবস্থা এই চার দেশের।
এক নজরে দেখে এই চারটি দেশের কে কোথায় দাঁড়িয়ে-
আয়ারল্যান্ড- এই চারটি দেশের মধ্যে সেরা বাজি উইলিয়াম পটারফিল্ডের নেতৃত্বে খেলা আয়ারল্যান্ড। ২০০৭ বিশ্বকাপে পাকিস্তান আর ২০১১ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ড। পরপর দুটো বিশ্বকাপে দুটো অঘটন ঘটিয়েছে আয়ারল্যান্ড। ইংল্যান্ডের মূল ভরসা ইয়ন মর্গ্যান আসলে আয়ারল্যান্ড নাগরিক। ক্রিকেট পরিকাঠামো সেভাবে না থাকায় পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার স্বার্থে মর্গ্যানের মত আইরিশ খেলোয়াড়রা দেশ ছেড়ে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেন। ২০০৭ বিশ্বকাপে ইয়ন মর্গ্যান খেলেছিলেন আয়ারল্যান্ডের জার্সিতে। মজার কথা এবারের বিশ্বকাপে খেলা আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে আয়ারল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের মোট সেঞ্চুরি সংখ্যা ইংল্যান্ডের থেকে বেশী। ব্যাটিং বেশ মজবুত, বোলিংও আঁটোসাটো। তবে কী ধারাবাহিকতার অভাব দারুণভাবে রয়েছে। বড় দেশের বিরুদ্ধে ব্যাটিং, বোলিং একসঙ্গে ক্লিক করা নিয়ে একটা সংশয় রয়েছে। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচেও খুব খারাপভাবে হেরেছে আয়ারল্যান্ড। তবু কেভিন ও ব্র্যায়েনস, জনি মনি, ইডি জয়েশের মত ক্রিকেটারদের দেখে মনে হচ্ছে দু একটা অঘটন ঘটাতে পারে আইরিশরা। জিম্বাবোয়ে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেও চমকে দিতে পারে। আর হ্যাঁ ২০০৭ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানো আয়ারল্যান্ড এবারও গ্রুপে আফ্রিদিদের সঙ্গে আছে। তাই নজর রাখুন আইরিশ ডিশে...
আফগানিস্তান- যুদ্ধ, বোমা, হত্যা। সব হেরে গিয়েছে আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের মনোবলের কাছে। সব প্রতিকূলতাকে জয় করে এবারই প্রথম একেবারে বিশ্বকাপে খেলতে নামবে আফগানরা। পরিকাঠামো বলতে শূন্যতা, পেশাদারিত্ব নেই, শুধু আছে মনোবল আর অদম্য ইচ্ছা। দলের অধিনায়ক মহম্মদ নবির জীবন যুদ্ধের গল্পটা সিনেমাকে হার মানায়। সেই অদম্য মনোভাবের প্রভাব দেখা যাবে এবারের বিশ্বকাপে। মজার কথা নিউজিল্যান্ডের এক রোবট ভবিষ্যতবানী করেছে আফগানিস্তান এবারের বিশ্বকাপ জিতবে। তবে ক্রিকেটীয় যুক্তিতে আফগানদের নক আউটে ওঠার সম্ভাবনা কম। স্কটল্যান্ড,বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অগ্নিপরীক্ষা আফগানদের। প্রথম বিশ্বকাপে একটা ম্যাচ জিততে পারলে ইতিহাস গড়বে নবির দল।
স্কটল্যান্ড- অনেকটা আয়ারল্যান্ডের মত অবস্থা। ক্রিকেট পরিকাঠামোর দিক থেকে আয়ারল্যান্ডের থেকে কিছুটা এগিয়ে। স্কটিশ ক্রিকেটাররা ইংল্যান্ডের বিভিন্ন কাউন্টির হয়ে খেলেন। এবার নিয়ে তৃতীয় বিশ্বকাপে খেলবে স্কটরা। ১৯৯৯ ও ২০০৭ বিশ্বকাপে খেললেও একটা ম্যাচেও জিততে পারেনি তারা। তবে এবার স্কটদের জয়ের খাতা খুলবে বলে বিশেষজ্ঞমহলের মত। প্রস্তুতি ম্যাচ আয়ারল্যান্ডকে যেভাবে উড়িয়ে দিয়েছে তাতে অনেকে ছোট দেশগুলির মধ্যে স্কটল্যান্ডকে এগিয়ে রাখছেন। দলের মূল ভরসা প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ম্যাট মাচান।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহি- এর আগে মাত্র একবারই বিশ্বকাপে খেলেছিল সংযুক্ত আরবআমিরশাহি। ১৯৯৬ সালে ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কায় আয়োজিত বিশ্বকাপে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি একটা ম্যাচে জিতেওছিল। কিন্তু এরপর আর বিশ্বকাপ খেলা হয়নি। তবে শেষ তিন চার বছরে ক্রিকেটে পরিকাঠামো মন দেওয়ার পর তার ফল পেতে শুরু করেছে শারজার দেশ। দলের অধিনায়ক মহম্মদ তকিরের বয়স ৪৩। বিশ্বকাপের সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার। বড় কোনও অঘটন না ঘটাতে পারলেও অন্তত একটা ম্যাচ জিততেই পারে।