Hardik Pandya, IND vsPAK : ধোনির মতোই ঠান্ডা মাথা, অন্ধকার কাটিয়ে রাজকীয় কামব্যাক করলেন তারকা অলরাউন্ডার
Hardik Pandya, IND vsPAK : মহিন্দর অমরনাথ, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, যুবরাজ সিং, বীরেন্দ্র শেহওয়াগের মতো প্রাক্তনদের কামব্যাক নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এ বার সেই তালিকায় নাম তুলে নিলেন হার্দিক। দেখিয়ে দিলেন চ্যাম্পিয়নরা মরে না। ফিরে আসেন। বারবার।
সব্যসাচী বাগচী
কালের নিয়মে জীবনের চাকা এ ভাবেই ঘোরে। ঠিক যেমন হার্দিক পান্ডিয়ার (Hardik Pandya) ক্ষেত্রে হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। ভেন্যু দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান (Pakistan)। প্রতিযোগিতা এশিয়া কাপ (Asia Cup)। সে দিন টিম ইন্ডিয়া (Team India) জিতলেও, হার্দিক পিঠের চোটের জন্য ম্যাচের মাঝ থেকেই সরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। স্ট্রেচারে শুয়ে তাঁকে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। কাট টু ২০২২ সালের ২৮ অগস্ট। ভেন্যু, প্রতিপক্ষ ও প্রতিযোগিতা সবই এক। শুধু বদলে গিয়েছেন হার্দিক। একেবারেই বদলে গিয়েছেন।
জীবনযাপন, চলন-বলন, পোশাক-পরিচ্ছদে একটা ক্যারিবিয়ান ছাপ রয়েছে। ওই যাকে বলে 'লিভ লাইফ কিং সাইজ' দর্শনে বিশ্বাসী। তবে ক্রিকেটীয় মস্তিষ্কটা একেবারে মহেন্দ্র সিং ধোনির (Mahendra Singh Dhoni) মতো। যেন মাথায় বরফ বসানো আছে। এই হার্দিক অন্য ধাতু দিয়ে গড়া। কোনও কিছুতেই তাঁকে টলানো যাবে না। প্রবল চাপে চুপসে যাওয়ার বদলে এই হার্দিক পালটা মারে বিশ্বাসী। ব্যাট-বলের টাইমিং করতে একেবারে ওস্তাদ। দরকারে বল ওড়াতেও পিছপা হয় না। তবে মাথাটা একেবারে কম্পিউটারের মতো। ঠিক যেমন তাঁর 'আইডল' ধোনির।
The comeback is greater than the setback pic.twitter.com/KlnD4GZ4ZO
— hardik pandya (@hardikpandya7) August 29, 2022
গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (T20 World Cup 2021)। সে বারও ভেন্যু দুবাই, প্রতিপক্ষ সেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। ২৪ অক্টোবর ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেই মহারণে 'আন ফিট' হার্দিকের ব্যাট থেকে এসেছিল ৮ বলে ১১ রান। 'হাফ ফিট' হার্দিক বল করেননি। পিঠের চোটের জন্য। তাঁর দলে থাকা নিয়ে হয়েছিল প্রচুর সমালোচনা। এ বার শুধু বদলে গিয়েছে দিনক্ষণ। দেখা গেল হার্দিকের দ্বিতীয় সংস্করণ। একেবারেই বদলে গিয়েছেন হার্দিক।
— BCCI (@BCCI) August 29, 2022
আরও পড়ুন: Virat Kohli, IND vs PAK : একমাস ব্যাট হাতে না তুলেও ফেরার মরিয়া চেষ্টা করলেন বিরাট
বদলে যাওয়া হার্দিককে আগেই দেখেছিল পঞ্চদশ আইপিএল (IPL 2022)। আবির্ভাবেই গুজরাত টাইটান্সের (Gujarat Titans) হাতে ট্রফি এনে দিয়েছেন। ১৫ ম্যাচে ১৩১.২৭ স্ট্রাইক রেট রেখে ৪৮৭ রান করেছিলেন। সঙ্গে ছিল ৮ উইকেট। সেই ধারা বজায় রেখে হার্দিক এ বার বদলার ম্যাচটাই পুরোপুরি বদলে দিলেন! তাও আবার দুই বল বাকি থাকতে!ওঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজে একটা মস্তানি আছে। সেটা ফের দেখা গেল। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে ২৮ অগস্ট ২০২২ অমর হয়ে থাকবে। শুধু হার্দিকের জন্য। তাই তো বদলে যাওয়া হার্দিকের পাশে এ বার লেখা ১৭ বলে অপরাজিত ৩৩। এবং ২৫ রানে ৩ উইকেট।
সেই পিঠের চোটের জন্য অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছিলেন হার্দিক। স্বীকার করে নিলেন। একইসঙ্গে গত দুই পাকিস্তান ম্যাচের প্রসঙ্গ উঠলেই আবেগপ্রবণ হয়ে উঠছেন এই অলরাউন্ডার। পঞ্চম উইকেটে রবীন্দ্র জাদেজার (Ravindra Jadeja) সঙ্গে ৫২ রানের পার্টনারশিপ ছিল মহা মূল্যবান। পার্টনার জাদেজার সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে হার্দিক বলছিলেন, 'তোমার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে চার বছর আগে আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সবকিছু মনে পড়ে যাচ্ছে। এক মাঠ, সেই প্রতিপক্ষ পাকিস্তান, একই ড্রেসিংরুম। শুধু বদলে গিয়েছে সময়। তাই সেই কঠিন সময়ের থেকে এই কামব্যাক আমার কাছে আরও প্রিয়। চার বছর অনেক উত্থান-পতন দেখেছি। সেখান থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।'
আগেই লিখেছিলাম রান চেজ করার সময় তিনি যেন আরও বেশি ধোনিকে 'ফলো' করেন। তাঁর কাছে টার্গেট ফ্যাক্টর নয়। বিপক্ষের বোলারকে পাত্তা দেন না। বরং বিপক্ষের বিরুদ্ধে শেষ দিকে 'মাইন্ড গেম' খেলতে শুরু করেন। তাই তো হার্দিকের কথাগুলো অনেকটা 'ক্যাপ্টেন কুল'-এর মতো শোনায়। তাই এহেন হার্দিক জুড়ে দিলেন, 'পরিস্থিতি বুঝে অস্ত্র ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। বল করার সময় সঠিক লেংথে বল করা জরুরি। ব্যাট করার সময় সুযোগ কাজে লাগাতে হয়। ঠিক মতো প্রয়োগ করতে হয়। ওভার ধরে ধরে পরিকল্পনা করেছি। মাথা ঠান্ডা রেখে খেলার চেষ্টা করেছি। জানতাম শেষ ওভারের জন্য পাকিস্তান নাওয়াজকে রেখে দিয়েছে। সাত রান দরকার ছিল শেষ ওভারে। সত্যি বলতে সাত রান নিয়ে চাপেই ছিলাম না। ১৫ রান দরকার থাকলেও আমি সুযোগ খুঁজে নিতাম। আমাদের থেকে ওদের বোলারদের উপর বেশিই চাপ ছিল। শেষ ওভারে একটা ছয় দরকার ছিল। তাই বাড়তি কিছু করার চেষ্টাই করিনি।'
— Chennai Super Kings (@ChennaiIPL) August 29, 2022
হার্দিক বহুবার জানিয়েছেন যে, তিনি ধোনির থেকে অনেক কিছু শিখেছেন। একজন অন্ধ ভক্ত যেমন প্রিয় নায়কের স্টাইল থেকে শুরু করে মুখের সংলাপ পর্যন্ত নকল করতে শুরু করেন, হার্দিকও ঠান্ডা মাথা প্রয়োগ করে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়ছেন। অনেকটা 'ফিনিশার' ধোনির মতো। তাই তো পান্ডিয়াকে সেই দুবাইতে, সেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ধোনির মতোই হুবহু একই ভাষায় কথা বলতে শোনা গেল।
মহিন্দর অমরনাথ, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, যুবরাজ সিং, বীরেন্দ্র শেহওয়াগের মতো প্রাক্তনদের কামব্যাক নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এ বার সেই তালিকায় নাম তুলে নিলেন হার্দিক। কারণ এটাও যে মনে রাখার মতো ফিরে আসা। হার্দিক দেখিয়ে দিলেন চ্যাম্পিয়নরা মরে না। ফিরে আসেন। বারবার।