ICC Women’s World Cup 2022, INDWvsPAKW : চারটি ক্যাচ, একটি স্টাম্পড আউট! দুরন্ত Richa; মেয়েকে নিয়ে গর্বিত বাবা
বিশ্ব মঞ্চে নজর কাড়লেন বঙ্গতনয়া রিচা।
সব্যসাচী বাগচী: একদিনের কেরিয়ারে মাত্র আটটি ম্যাচের অভিজ্ঞতা। এর মধ্যে বিশ্বকাপের মঞ্চে অভিষেক ম্যাচ। তাও আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বলে কথা। ব্যাট হাতে শাসন করতে পারেননি। মাত্র ১ রানে ফিরেছিলেন। তবুও মনের জোর হারিয়ে ফেলেননি এই বঙ্গতনয়া। চারটি ক্যাচ ও একটি স্টাম্প করে জাত চেনালেন ১৮ বছরের রিচা। তাই তো তাঁকে নিয়ে গর্বিত বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ।
রবিবার প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে সাত উইকেটে ২৪৪ রান তোলে ভারত। জবাবে শুরুটা মন্দ করেনি পাকিস্তান। ২৮ রানে পড়ে প্রথম উইকেট। তারপর ১৭.৪ ওভারে বাংলার দুই তারকার যুগলবন্দিতে আউট হন বিসমাহ মাহরুফ। দীপ্তির বলে সুইপ করতে যান পাক অধিনায়ক। সেই শট ব্যাটের কানায় লেগে নীচু হয়ে যায়। উইকেটের পিছনে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন রিচা। ক্যাচটা আরও দুর্দান্ত হয়ে ওঠে কারণ বল নীচের দিকে নামছিল। অসামান্য রিফ্লেক্সের কারণেই নীচু হয়ে যাওয়া বল অনায়াসে হাতে তালুবন্দি করে নিলেন রিচা।
Richa Ghosh's 'Howzatt owzee ouzee ouzee owzaeeee' is going to be my goto when i don't want to speak more. Like just in the middle of the conversation when I am tired I will go 'Howzatt owzee ouzee ouzee owzaeeee ' at the same pitch.Beware. #INDvPAK pic.twitter.com/VoNr7RJ72i
— Asli BCCI Women (@AsliBCCIWomen) March 6, 2022
তবে রিচার দুরন্ত কিপিং এখানেই থেমে ছিল না। ২৯.৬ ওভারে রাজেশ্বরী গায়কোয়াড়ের বলে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে এসে সুইপ মারতে যান আলিয়া রিয়াজ। সেই বল মিস করলে দারুণ ক্ষিপ্রতায় স্টাম্প করেন রিচা। ৩৬.৫ ওভারে নাশরা সান্ধুর দুর্দান্ত ক্যাচ নেন তিনি। স্নেহ রানার বলে মারতে গেলে সান্ধুর ব্যাটের কানায় বল লেগে শূন্যে উঠে গিয়েছিল। মুহূর্তের মধ্যে ব্যাটারকে টপকে যান বাংলার মেয়ে। তারপর পুরো শরীর শূন্যে ছুড়ে দিয়ে দুর্ধর্ষ ক্যাচ নেন।
মেয়ের এমন পারফরম্যান্স দেখে মুগ্ধ বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ। জি ২৪ ঘণ্টাকে টেলিফোনে তিনি বলেন, "একে তো বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চ, এরমধ্যে আবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথমবার মাঠে নামার অভিজ্ঞতা। চাপ থাকলেও সেটা বুঝতে দিল না রিচা। দুরন্ত কিপিং দেখলাম। আমরা সবাই মুগ্ধ। ব্যাটিং ব্যর্থতা দুরন্ত কিপিংয়ে পুষিয়ে দিল। এমন খেলা দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। শুধু পরিবার নয়, শিলিগুড়িকেও আমার মেয়ে দারুণ জয় উপহার দিল। তবে গত দু’বার খুব কাছে এসেও জিততে পারেনি ভারত। এ বার যেন সেই ভুল না হয়। মেয়ের হাতে কাপ দেখতে চাই। সেই সঙ্গে গোটা ভারতীয় দলকেও হাসিমুখে দেখতে চাই।"
অবশ্য এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে মহিলা বিগ ব্যাশ খেলা। রিচার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার একটা অদ্ভুত সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় মেলবোর্নে ২০২০ সালে। একদিনের ম্যাচেও অভিষেক অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাকেতে। এ বার সপ্তম ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটার হিসেবে মেয়েদের বিগ ব্যাশ লিগ খেলে ফেলেছিলেন। গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বরই ১৮তম জন্মদিন পালন করেছেন রিচা। ঠিক তিন দিনের পরেই এসেছিল সবচেয়ে বড় উপহার তাঁর জন্য। হোবার্ট হ্যারিকেন্সে সই করেছিলেন তিনি।
Shraddha (@SsoulImmortal) March 6, 2022
মানবেন্দ্র ঘোষকে বলেছিলেন, "অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা বেশ উন্নত, ওই দেশে বিগ ব্যাশ লিগকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়। তখন থেকেই বিগ ব্যাশে খেলার স্বপ্ন দেখা শুরু। তাই সেখানে খেলে তো রিচার ভালই হয়েছে।"
ঋদ্ধিমান সাহার শহর শিলিগুড়ি থেকেই উঠে আসা মেয়েটার। অল্প সময়ে প্রতিভার জোরে নজর কেড়ে নেন। মাত্র চার বছর বয়সে ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয় রিচার। আর পাঁচটা শিশুর মতো পাড়ায় বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে ক্রিকেট খেলত রিচা। খেলার প্রতি মেয়ের আগ্রহ দেখে বাঘাযতীন অ্যাথলেটিক ক্লাবে প্রশিক্ষণ দিতে নিয়ে যান বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ। পেশায় ব্যবসায়ী মানবেন্দ্রর দুই মেয়ে।
ছোট মেয়ে রিচা ছোট থেকেই বাবার হাত ধরে ক্রিকেট মাঠে যেত বলে জানাচ্ছেন পরিচিতেরা। মানবেন্দ্র নিজেও ক্লাব পর্যায়ে ক্রিকেট খেলতেন। তাই মেয়ের খেলার প্রতি প্রথম থেকেই যত্ন নিয়েছেন তিনি। আজ মহিলাদের আইসিসি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে নিজের স্বাভাবিক ব্যাটিং করতে পারেননি রিচা। মাত্র এক রান করে আউট হয়ে যান। কিন্তু উইকেটরক্ষক হিসেবে নজর কাড়েন বাংলার মেয়ে। সঙ্গে ছিল ঝুলন গোস্বামীর বলের দুটি ক্যাচ। তবে দীপ্তি শর্মার বলে বিসমা মারুফের ক্যাচটা দিনের সেরা। ১৮ বছরের রিচা বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি ভারতের মহিলা ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। মারকুটে ব্যাটিং এর পাশাপাশি উইকেটকিপার হিসেবেও তাঁর রিফ্লেক্স দুরন্ত।
ভারতের অধিনায়ক মিতালি এবং প্রাক্তন মহিলা ক্রিকেটার অঞ্জুম চোপড়া প্রশংসা করলেন রিচার। যদিও বাবা মানবেন্দ্র কিন্তু এখনই বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখাতে নারাজ। তিনি ফের বলেন, "আমার মতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাফল্য পাওয়ার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল সাফল্য ধরে রাখা। তাই প্রতিটা পদক্ষেপে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই রিচাকে সেটা বারবার বলেছি। রিচাও মাটিতে পা রেখে এগিয়ে যেতে জানে। সেইজন্য সাফল্য পাচ্ছে।"
WHAT A CATCH! RICHA GHOSH WOW! FABULOUS
We love to see that! #TeamIndia one wicket away now, Sneh Rana with the wicket.#CWC22 #INDvPAK #MithaliRaj #TeamPakistan #indvspak #WomensWorldCup #INDvSL #CricketTwitter #richaghosh #jadeja #MSDhoni #INDIA pic.twitter.com/t9Fc0LQj2W— Women's World Cup 2022 !! #Cheer4women's (@crossyhartlyfan) March 6, 2022
সাধারণত এমন হাই ভোল্টেজ ম্যাচ খেলতে নামার আগে ক্রীড়াবিদরা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। বিদেশে থাকলে আধুনিক যুগে ভরসা ভিডিও কল। কিন্তু পাক ম্যাচের আগে রিচার সঙ্গে ওঁর বাবা-মা যোগাযোগই করেননি। কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মানবেন্দ্র?
গর্বিত বাবা ফের যোগ করলেন, "এমনিতেই আমরা ক্রিকেট নিয়ে কথা বলিনা। বাড়িতে থাকলে সংসার ও খাওয়া দাওয়া নিয়ে সময় কেটে যায়। এরমধ্যে রিচা দেশের জন্য খেলতে গিয়েছে। এই মুহূর্তে সেটা নিয়ে ফোকাস করাই জরুরি। তাই পাকিস্তানের মতো চাপের ম্যাচের আগে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। দিন পাঁচেক আগে কয়েক মিনিটের জন্য কথা বলেছিলাম। পরে ইচ্ছা হলে ফোন করে নেব!"
রিচার বাবা-র শেষ কথাগুলো অবাক করলেও, এটাই বাস্তব। শিলিগুড়ি থেকে উঠে আসা ক্রিকেটাররা ভাবলেশহীন হন। অল্প সাফল্যে গা ভাসাতে তাঁরা রাজি নন। ঋদ্ধির পর এ বার রিচাকে দেখে তো সেটাই মনে হচ্ছে। দুজনেই যে আবার উইকেটের পিছনে থাকা নীরব যোদ্ধা। কিছু মিল তো থাকবেই।