লেস্টার সিটির এই জয়টায় দুঃখ পাচ্ছি খুব, যে ৩ টে কারণে

স্বরূপ দত্ত
ইতিহাস গড়েছে লেস্টার সিটি। ৫০০০-১ থেকে প্রিমিয়র লিগ জিতে আসল 'বাজি'টা দেখিয়েছে লেস্টার সিটি। বিশেষণ দিলে তো, ভরে যাবে পাতার পর পাতা। কারণ, ঘটনাটা এমন ঘটেছে যে, এটা নিয়ে বলার অনেক কথা। এটা নিয়ে ভাবার অনেক কথা। এটা নিয়ে লেখার অনেক কথা। কিন্তু গুনগানগুলো অনেক পড়েছেন। নিজে করছেন। করুন। ওরা এটার যোগ্য। আমার অবশ্য খারাপ লাগা আছে। সেটাই শেয়ার করা আপনাদের সঙ্গে। যদি আপনাদেরও মনে পড়ে সেদিনের সেই কথাগুলো। ওদের আনন্দে মিথ্যে গর্ব না করে নিজেদের দিকে এবার সত্যিই তাকানোর সময় এসেছে এবার। কেন? মাত্র তিনটে কারণই তো বলতে চাওয়া...
১) গত ১২ বছরে লেস্টার কোথায় আর ইস্টবেঙ্গল কোথায়! তখন কলকাতা শহরেরই অন্য একটি কাগজের অফিসে চাকরি করি। সেই কাগজটির আবার খেলার উপর অনেক দখল বেশি। ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে লেস্টারের চুক্তি হল। লেস্টার সিটির ওয়েবসাইটে ক্লিক করলে খুলে যাচ্ছে আমাদের ইস্টবেঙ্গলের ওয়েবসাইট! দেখে গর্বে ভরে উঠেছিল মনটা। পরের দিন সেই কাগজের পেজ ওয়ান অ্যাঙ্কর স্টোরি হয়েছিল ওই খবরটা। এ শহরের একমাত্র কাগজে। লিখেছিলাম আমিই। বাড়িতে এখনও রয়েছে এক যুগ আগের সেই কাগজটা। সঙ্গে ছিল লেস্টার সিটির ওয়েবসাইটে কীভাবে আরও উজ্জ্বল লাগছে ইস্টবেঙ্গলের লাল-হলুদ জার্সিটা, সেই ছবিও! তখন ওদের ক্যাপ্টেন ছিলেন ইয়ান ওয়াকার। গোলকিপার। আজ সেই ১২ বছর আগের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে হতাশ লাগছে খুব। ইস্টবেঙ্গল পিছিয়েই যাচ্ছে। লাল-হলুদের রঙের উজ্জ্বলতা তো আর কমে না। কিন্তু এই পারফরম্যান্স দিয়ে আর বিশ্বফুটবল মানচিত্রে খুঁজে পাওয়া যাবে না! সত্যি এটাই।
২) লেস্টার সিটির জন্ম ১৮৮৪ সালে। মানে ইস্টবেঙ্গলের জন্ম তারও ৩৬ বছর বা তিন যুগ পরে। আর মোহনবাগানের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল মাত্র ৫ বছর পরে। লেস্টার সিটি এবার শুধু প্রিমিয়র লিগ জিতল তাই নয়, সামনের বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগও তো খেলবে। আর আমাদের মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল যে তিমিরে পড়ে থাকার, সেখানেই আছে। আগে আমার বাবারা মাঠে যেতেন। পরে আমরা মাঠে যেতাম। আরও পরে আমার ছেলেরা মাঠে যাবে। কিন্তু আমাদের এই ক্লাবগুলোর কোথাও যাওয়ার নেই। এরা এক জায়গাতেই পড়ে থাকবে। এটা পিথাগোরাসের উপপাদ্যের মতোই প্রমাণিত। শালগ্রাম শিলা আর কী!
৩) বেঁচে থাকতে গেলে টাকা লাগবে। মানুষের ক্ষেত্রে। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও। আর প্রতিষ্ঠান যদি ফুটবল ক্লাব হয় তবে, অবশ্যই টাকার জোগান দেবে স্পনসররা। প্রিমিয়র লিগ চ্যাম্পিয়ন লেস্টার সিটির এবারের স্পনসর কারা বলুন তো? পিউমা, ওয়াকার্স, সিংহ, বেটফেয়ার, ফুটবল ম্যানেজার, ট্রু, অ্যামেজিং থাইল্যান্ড, ডি মন্টেফোর্ট ইউনিভার্সিটি, কিং পাওয়ার, এসসিবি, বেট ৩৬৫ এতেই শেষ নয়। আরও আছে! আর গতবারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান কিনা দিব্যি সারা বছর খেলে গেল স্পনসর ছাড়া! ইস্টবেঙ্গলও বা কৌন সা ভালো জায়গায়? এমন নয়, আমাদের শহরের ক্লাব কর্তাদের এতটাই জাত্যাভিমান যে, তাঁরা ক্লাবের জার্সিতে কোনও কোম্পানির নাম ব্যবহার করতে রাজি নন। এঁরা একসময় মদের কোম্পানির নাম ক্লাবের সামনে জুড়ে দিতেও পিছপা হননি! তাঁদের এবার ভাবার সময় এসেছে যে, বিজয় মালিয়াকে ধরেছিলেন, সেই বিজয় মালিয়া এখন দেশ ছাড়া! সুদীপ্ত সেনদের ধরেছিলেন, তাঁর কী অবস্থা সকলেই জানেন। তাই এবার যদি অনেক কষ্টে কয়েক যুগ পর একটা স্পনসর ধরতে পারেন, তাহলে একটু দেখে নেবেন শুধু। যাতে আর পচা শামুকে পা না কাটে। একটা জিনিস বুঝতে পারছি, সমর্থকরা তো বড় ভালোবাসে, তাঁরা গালগাল করতে পারে না। লেস্টার অন্তত একটা বড়সড় থাপ্পড় মেরে দিল ভারতীয় ফুটবলকে। ইস্টবেঙ্গলের সেই স্মৃতির দিনগুলোর মাধ্যমে। আজ তাই লেস্টার সিটিকে অভিনন্দন। ওদের দেখে এই পৃথিবীর অনেকেই প্রেরণা পাবেন। শুধু পাবে না আমাদের ফুটবল, আমাদের ক্লাবগুলো! যতই ওদের আনন্দে নাচুন, সত্যি এটাই। বলে না শেয়ালরা খুব চালাক হয়। তা লেস্টার সিটির ডাকনামও যে শেয়াল। ধুর্ত তারা কতটা সেটা দেখিয়ে দিল। ১-৫০০০ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে।