Ranji Trophy Final 2023, BEN vs SAU: ১৭৪ রানে অল আউট হওয়ার পরেও দুই উইকেট নিয়ে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছে মনোজের বাংলা
বাংলার ব্যাটিং প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হলেও, খেলার এখন অনেক সময় বাকি ছিল। তবে তিন বঙ্গ পেসারের মধ্যে সেই আগুনে মেজাজ দেখাই গেল না।
সব্যসাচী বাগচী
ভুল শুধরে নেওয়ার উপায় আছে। কিন্তু বাংলা চলতি মরসুমের বাকি ম্যাচগুলোর মতো বাংলা (Bengal) কামব্যাক করতে পারবে তো! এক বুক আশার মধ্যেও আশঙ্কার সবচেয়ে বড় কারণ হল, পুঁজি মাত্র ১৭৪ রান। বাংলা ক্রিকেটে লড়াই আছে। আছে অসহায় আত্মসমর্পণের গল্প। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে এটা তো রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল (Ranji Trophy Final)। এমন ম্যাচে না লড়াই করলে, আর লড়বে কোথায়! সিএবি-র (CAB) বড়, ছোট কর্তাদের মুখে এই কথাটাই ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু স্বপ্ন এবং বাস্তবের মধ্যে যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। তাই ইডেন গার্ডেন্সের (Eden Gardens) গ্যালারিতে থাকা প্রায় হাজার পাঁচেক ক্রিকেট পাগল যতই 'জয় বাংলা' বলে স্লোগান তুলুক, বিরাট মিরাকল না হলে এবারও কামব্যাক করা স্বপ্নই বটে। কারণ প্রথমদিনের শেষে সৌরাষ্ট্র মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে যে ৮১ রান তুলে ফেলেছে। ফলে আর ৯৩ রান তুলে দিতে পারলেই মানসিক ভাবে অনেকটাই এগিয়ে যাবে ২০১৯-২০ মরসুমের রঞ্জিজয়ী দল।
মেগা ফাইনালের দু'দিন আগে মনোজ তিওয়ারি (Manoj Tiwary) ড্রেসিংরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে বীরদর্পে ঘোষণা করেছিলেন যে, "এই ম্যাচটা ওয়ান সাইডেড হবে। আর আমার মন বলছে ফাইনালটা আমরাই জিতব।" বঙ্গ অধিনায়কের দাবি যে একেবারে দিবাস্বপ্ন দেখার মত সেটা টস জিতে, বল হাতে বুঝিয়ে দিলেন সৌরাষ্ট্রের (Saurashtra) অধিনায়ক জয়দেব উনাদাকাট (Jaydev Unadkat) । এবং তাঁর পেস ব্রিগেড। ফলে শাহবাজ আহেমদ (Shahbaz Ahmed) ও অভিষেক পোড়েলের (Avishek Porel) লড়াইয়ের পরেও মাত্র ১৭৪ রানে গুটিয়ে গেল বাংলার প্রথম ইনিংস।
সকাল ন'টায় প্রাক্তন রঞ্জি জয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় 'ইডেন বেল' বাজিয়ে মেগা ফাইনালের সূচনা করলেন। তখনও বোঝা যায়নি বাংলার জন্য এমন ভরাডুবি অপেক্ষা করছে। সকাল ৯:২০ মিনিটের মধ্যেই চলে গেল বঙ্গ ব্রিগেডের চার উইকেট। জয়দেব ও তাঁর জুনিয়র চেতন সাকারিয়ার পেস ও বিষাক্ত সুইং দেখে মনে হচ্ছিল, যেন মিচেল স্টার্ক ও মিচেল জনসন দাপট দেখাচ্ছেন! দুই বাঁহাতির দাপটে তখন দিশেহারা বাংলা।
উনাদকাট প্রথম থেকেই বলে আসছিলেন বলেছিলেন, ইডেনের পিচে প্রাণ আছে। এবং সেই পিচ থেকেই একের পর এক উইকেট আদায় করে, বিপক্ষ ব্যাটারদের প্রাণ কেড়ে নিতে শুরু করলেন। প্রথম ওভারেই অভিমন্যু ঈশ্বরনকে ফেরান উনাদকাট। তাঁর ইনসুইংকে সামনের পায়ে খেলতে গিয়ে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে আউট হন বঙ্গ ওপেনার। তাও আবার খাতা না খুলেই নিলেন বিদায়। এরপর বঙ্গ ব্যাটিং যেন 'সাইকেল স্ট্যান্ড!' ফলে প্রথম ৪৫ মিনিটেই পিছিয়ে যায় বাংলা।
ইডেনের চারটি ব্লক ভরে ওঠার আগেই এবার বাংলাকে আঘাত দিলেন চেতন সাকারিয়া। ৩৩ বছর আগের রনজি ফাইনালে অভিষেক ঘটেছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। এবারের ফাইনালে অভিষেক ঘটে সুমন্ত গুপ্তর। কিন্তু ওপেনার সুমন্ত বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। চেতনের বলে শেলডন জ্যাকসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সুমন্ত। ১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলা তখন চাপে কাঁপছে!
এবার চেতনের শিকার সুদীপ ঘরামি। চলতি মরসুমে দারুণ ছন্দে রয়েছেন সুদীপ। তবে এবার বড় ভুল করলেন। চেতনের স্টাম্পে থাকা ডেলিভারি ছাড়তে গিয়েছিলেন সুদীপ। কিন্তু ওই বাঁক খাওয়া ডেলিভারিটা যে মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে হাজির হবে তাঁর সামনে, তা কল্পনাও করেননি সুদীপ। চেতনের বলটা অফ স্টাম্প নাড়িয়ে দিল সুদীপের। তখন স্কোরবোর্ডে লেখা মাত্র ২ রানে ৩ উইকেট।
মনোজ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের মাইলস্টোনের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ম্যাচের আগে তাঁর দাবি ছিল, তিনি ব্যক্তিগত মাইলস্টোন নয় বরং দলের জন্য পিচে টিকে থাকবেন। কিন্তু আসল সময় অধিনায়ক পারলেন না। অভিজ্ঞ মনোজও উনাদকাটের শিকার। অফ স্টাম্পের বাইরে থাকা বলে অহেতুক খোঁচা দিলেন। বলে চলে গেল গালিতে থাকা বিশ্বরাজ জাদেজার হাতে। দলের চাপ বাড়িয়ে ফিরলেন মনোজ। ১৭ রানে চলে গেল ৪ উইকেট!
তবে বড় ধাক্কা খাওয়া এখনও শেষ হয়নি। 'ক্রাইসিস ম্যান' অনুষ্টুপ বছরের পর বছর ধরে বাংলাকে বাঁচিয়েছেন। যদিও এবার বাকি চারজনের মতোই ভুল করলেন 'রুকু'। উইকেটকিপার হার্ভিক দেশাইয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১৬ রানে হাঁটা লাগালেন অনুষ্টুপ।
আরও পড়ুন: BCCI vs Chetan Sharma Controversy: তৃতীয় টেস্টের দল নির্বাচনে থাকবেন চেতন? আলোচনা তুঙ্গে
৩৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দল ব্যাকফুটে চলে যাওয়ার পর কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন আকাশ ঘটক। তবে তাঁর লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হল না। ৪৮ রানে ১৭ রানে চেতনের শর্ট বলকে হুক করতে গিয়ে উনাদকাটের হাতে ক্যাচ দিলেন। ৬৮ রানে ৬ উইকেট হারাল বাংলা। লাঞ্চের বিরতিতে মাত্র ৭৮ রান তুলতে গিয়ে বাংলার ৬ উইকেট চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে লড়াই শুরু করেন শাহবাজ আহমেদ ও অভিষেক পোড়েল। সপ্তম উইকেটে দু'জন তোলেন ১০৮ রান। তবে শাহবাজ ১১২ বলে ৬৯ রানে ফিরতেই চা পানের বিরতির কিছুক্ষণ পর আউট হতেই, লোয়ার অর্ডারের বাকিরা একের পর একজন ফিরতে থাকেন। ফলে মাত্র ১৭৪ রানে গুটিয়ে গেল বাংলার প্রথম ইনিংস। ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন চেতন। জয়দেবের ঝুলিতে এসেছে ৪৪ রানে ৩ উইকেট। ১৯ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার ধর্মেন্দ্র জাদেজা।
বাংলার ব্যাটিং প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হলেও, খেলার এখন অনেক সময় বাকি ছিল। তবে তিন বঙ্গ পেসারের মধ্যে সেই আগুনে মেজাজ দেখাই গেল না। আকাশ দীপ বিপক্ষের ওপেনার জয় গোহিলের উইকেট উড়িয়ে দিলেও, উনাদকাটের ব্যাটাররা বুক চিতিয়ে চালিয়ে রান তুলে গেল। একেবারে একদিনের ক্রিকেটের মেজাজে। ঈশান পোড়েল সম্পর্কে যত কম লেখা যায় ততই ভালো। গতবারের মত এবারের ফাইনালের তিনি দলকে ডোবালেন। এরমধ্যে আবার বিশ্বরাজের ক্যাচ ফেলে দেন অভিষেক পোড়েল। তিনি অবশ্য ৩৬ বলে ২৫ রানে ক্রিজে আছেন। ৫১ বলে ৩৮ রানে ক্রিজে রয়েছেন আর ওপেনার হার্ভিক দেশাই।
তাই আবার লিখতে বাধ্য হলাম, বিরাট কিছু মিরাকল না ঘটলে সৌরাষ্ট্র ফের একবার রঞ্জি ট্রফি হাতে তুলছে। বাংলাকে হারিয়ে। সেবার রাজকোটে হারিয়েছিল। আর এবারের ভেন্যু ইডেন গার্ডেন্স। পরিকল্পনাহীন ব্যাটিংয়ের জন্য ঘরের মাঠে ফের ডুবল বঙ্গব্রিগেড।