Murder : বদলানো বাংলায় খুন যেন জলভাত! হচ্ছেটা কী! অবক্ষয়?
বেশ কয়েকদিনে রাজ্যে ঘটে গিয়েছে একের পর এক খুন। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই খুনের ঘটনায় নিহত এবং অভিযুক্ত হিসাবে উঠে আসছে স্কুল কিংবা কলেজ পড়ুয়ার নাম। খুনের মোটিভ খতিয়ে দেখতে গিয়ে অনেকক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে টাকার কারণেই ঘটনাগুলি ঘটে গিয়েছে। বাগুইআটির জোড়া খুনের ঘটনা ইতিমধ্যেই রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। আর এবার বাগুইআটির ছায়া বীরভূমের ইলামবাজারে। ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রকে অপহরণ করে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার বন্ধু সলমন। রবিবার চৌপাহারি জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয় ছাত্রের দেহ। মৃত সৈয়দ সালাউদ্দিন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। অভিযোগ, গলার নলি কেটে খুন করা হয় তাঁর। ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে মৃতের পরিবার। পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে টাকার জন্য পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে বলে অনুমান পুলিসের। তবে এর পিছনে আরও কোনও কারণ রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Murder, জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বেশ কয়েকদিনে রাজ্যে ঘটে গিয়েছে একের পর এক খুন। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই খুনের ঘটনায় নিহত এবং অভিযুক্ত হিসাবে উঠে আসছে স্কুল কিংবা কলেজ পড়ুয়ার নাম। খুনের মোটিভ খতিয়ে দেখতে গিয়ে অনেকক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে টাকার কারণেই ঘটনাগুলি ঘটে গিয়েছে। বাগুইআটির জোড়া খুনের ঘটনা ইতিমধ্যেই রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। আর এবার বাগুইআটির ছায়া বীরভূমের ইলামবাজারে। ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রকে অপহরণ করে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে বন্ধু সলমন। রবিবার চৌপাহারি জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয় ছাত্রের দেহ। মৃত সৈয়দ সালাউদ্দিন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। অভিযোগ, গলার নলি কেটে খুন করা হয় তাঁর। ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে মৃতের পরিবার। পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে টাকার জন্য খুন করা হয়েছে বলে অনুমান পুলিসের। তবে এর পিছনে আরও কোনও কারণ রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে, মালদা মঙ্গলবাড়ি এলাকায় বৃদ্ধ খুনের ঘটনার কিনারা করে ফেলেছে পুলিস। দু'দিন আগে নিজের বাড়িতেই নৃশংসভাবে খুন হন বৃদ্ধ গুণমণি শীল। CID টিমের সহায়তায় এই খুনের তদন্ত শুরু করে পুলিস।তদন্তকারী পুলিশকর্তারা একপ্রকার নিশ্চিত ছিলেন খুনের ঘটনায় বাড়ির লোকই জড়িত রয়েছেন। তদন্তে উঠে আসে বৃদ্ধের নাতি প্রেমজিৎ-ই এই ঘটনার কালপিট। দাদুর সঙ্গে বচসা হওয়ায় হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে খুন করে সে। অভিযুক্ত নাতি প্রেমজিৎ আবার ইংরেজবাজারের নামি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। খুনের পর যাতে মনে হয় বাইরে থেকে কেউ এসে খুন করেছে, সেজন্য বাবা পার্থ সারথি শীলের পরামর্শে বাড়ির জিনিসপত্র লন্ডভন্ড করে রেখেছিল স্কুল পড়ুয়া প্রেমজিৎ।
আরও পড়ুন-গ্রেফতার ছেলের খুনি সত্যেন্দ্র! 'ওকে ফাঁসি দাও', কাঁদতে কাঁদতে বললেন অতনুর মা
আরও পড়ুন-খুনের আগে হোটেলে 'মিটিং' সতেন্দ্রর, কাজ হলে মোটা পারিশ্রমিকের প্রতিশ্রুতি
এদিকে বাগুইআটিতে দুই স্কুল পড়ুয়াকে অপহরণ করে খুনের ঘটনাও এখন প্রায় অনেকেরই জানা। এই খুনের ক্ষেত্রেও কারণ হিসাবে উঠে আসছে বাইক কেনার টাকা নিয়ে বিবাদের কথা। একইভাবে দু'দিন আগে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরেও এক মেধাবী ছাত্রের দেহ উদ্ধার হয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে এটি খুন নাকি আত্মহত্যা সেকথা এখনও স্পষ্ট নয়।
কিন্তু রাজ্যে একের পর এক খুন। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধী হিসাবে উঠে আসছে অল্পবয়সী স্কুল, কলেজ পড়ুয়ার নাম। কেন এমন ঘটছে? তা নিয়ে Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটালের তরফে যোগাযোগ করা হয় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সোনালি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সোনালি বলেন, 'সামাজিকভাবে কোনও ঘটনারই একটা কারণ হয় না, এর পিছনে অনেককিছু থাকে। আসলে আমাদের মধ্যে মূল্যবোধের ক্রমশই অবক্ষয় হচ্ছে। মানুষের মধ্যে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বাস ক্রমশই কমছে। আমরা যখন বড় হয়েছি, তখন বাড়ি কিংবা প্রতিবেশীদের মধ্যে কেউ, কিংবা স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা আদর্শ হিসাবে সামনে থাকতেন। এখন আর স্কুল পড়ুয়াদের সামনে সেটা থাকছে না। মানুষের মানবিক দিককে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি কম, কে কত টাকা রোজগার করতে পারছে, সেটাই গুরুত্ব পাচ্ছে। মূল্যবোধের জায়গাটা ক্রমশই নষ্ট হচ্ছে। আগে শুধু একজন নয়, আমাদের সামনে উদাহরণ হিসাবে অনেকেই থাকতেন। তাঁদের লক্ষ্য করেই আমরা এগিয়েছি। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, শ্রদ্ধা করা, সেই সমস্ত ট্রেনিং সমাজে আর সেভাবে থাকছে না। যেনতেন প্রকারে টাকা রোজগারই মূল লক্ষ্য হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে আমরা খারাপ পথেও টাকা রোজগারের পিছনে দৌড়াচ্ছি। চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। সেটা না পেলেই অধৈর্য হয়ে পড়ছি। আর সেই নেগেটিভ ইমোশানটাই মনের মধ্যে জমছে। কখনও সেটা আমাদের নিজেদেরকেই আহত করে, আবার কখনও সেটা আক্রমণাত্মক হয়ে বাইরে প্রকাশ পায়। যে কারণেই এধরনের ঘটনা ঘটছে বলে আমার মনে হয়।'
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সোনালি চট্টোপাধ্যায়ের কথায় 'সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে সামাজিক, রাজনৈতিক পরিবর্তন। সামাজিক ক্ষেত্রে ইন্টারনেট, ফোন ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা দেখছি মানুষ কীভাবে বিলাসিতার সঙ্গে জীবন কাটাচ্ছেন। ফলে আমরাও সেই দিকেই ছুটতে চাইছি। এটার প্রভাব অল্পবয়সীদের মধ্যে সবথেকে বেশি। আর কোভিড পিরিয়ডের পর অল্পবয়সীরা আরও অনেক বেশি মোবাইল, ইন্টারনেটমুখী হয়ে গিয়েছে। মোবাইল গেমে বুঁদ হয়ে থাকছে। হিংসাত্মক গেমই তারা বেশি খেলছে। যেখানে সেই মারপিট, খুনোখুনির খেলা। গুলি গালা চলছে। কোনটা যে বাস্তব, কোনটা ভার্চুয়াল জগত যেন গুলিয়ে ফেলছে পড়ুয়ারা। কোভিড পরিয়ডটা অন্যভাবেও সামলাতে পারতাম, একটু সচেতনভাবে। প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে, তবে সেটাকে কীভাবে ব্যবহার করা হবে সেই শিক্ষা এখনও তৈরি হয়নি। এটা এখন গোটা সমাজেরই একটা সমস্যা। প্রযুক্তিকে কীভাবে ব্য়বহার করব, একটা শিশুকে কীভাবে শিক্ষা দেব, এই জায়গাগুলোতে আমাদের আরও অনেক সচেতন হতে হবে।'