শববাহী গাড়ি না পেয়ে মায়ের মৃতদেহ কাঁধে তুলে হাঁটা দিল ছেলে, করুণ দৃশ্যের সাক্ষী জলপাইগুড়ির হাসপাতাল
জলপাইগুড়ি জেলা অ্যাম্বুলেন্স চালক ইউনিয়ন এবং তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত আইএনটিটিইউসি তরফ থেকে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। সংগঠনকে বদনাম করতে চক্রান্ত করার অভিযোগ করল অ্যাম্বুলেন্স ইউনিয়ন
প্রদ্যুত্ দাস: স্ত্রী মারা গিয়েছেন। সেই শবদেহ নিয়ে যেতে হবে সুদূর কান্তি। অনেক চেষ্টা করেও মেলেনি শববাহী গাড়ি কিংবা অ্যাম্বুল্যান্স। শেষপর্যন্ত ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রী মৃতদেহ কাঁধে তুলে নিলেন স্বামী। বৃহস্পতিবার করুণ এই দৃশ্যের সাক্ষী রইল জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ।
আরও পড়ুন-গাড়ির চাকা পিষে দিচ্ছে অঞ্জলিকে! নিজের চোখে দেখেই বাড়ি ফেরেন নিধি
মৃতার ছেলে রামপ্রসাদ দেওয়ান বলেন, নশো টাকায় মা লক্ষ্মীরানী দেওয়ানকে হাসপাতালে এনেছিলাম। এখন অ্যাম্বুল্যান্সকে বললাম ১২০০ টাকা নিন। ওরা রাজী হয়নি। এখন দেহ ঘাড়ে করে বাড়ি নিয়ে যাব। হাসপাতালে বলেছিলাম। ওদের কোনও ব্যবস্থা নেই। অ্যাম্বুল্যান্স ৩০০০ টাকার কমে যেতে চাইছে না।
এদিকে, ওই খবর পেয়ে তড়িঘড়ি শববাহী অ্য়াম্বুল্যান্স নিয়ে ছুটে আসে গ্রীন জলপাইগুড়ি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সম্পাদক অঙ্কুর দাস ও তার কর্মীরা। এরপর বিনা পয়সায় সেই অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। অঙ্কুর দাস দাস বলেন, পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী হিসেব প্রায়ই হাসপাতালে আসি। আজ এসে দেখলাম একজন সন্তান তার মায়ের দেহ কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছে। সে অ্যাম্বুল্যান্স পায়নি। শুনেছিলাম মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন এরকম ক্ষেত্রে সরকার পরিষেবা দেবে। খুবই অমানবিক ঘটনা ঘটে গেল। কেন অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া গেল না তা নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।
জলপাইগুড়ি জেলা অ্যাম্বুলেন্স চালক ইউনিয়ন এবং তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত আইএনটিটিইউসি তরফ থেকে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। সংগঠনকে বদনাম করতে চক্রান্ত করার অভিযোগ করল অ্যাম্বুলেন্স ইউনিয়ন। অ্যাম্বুল্যান্স ইউনিয়নের প্রধান দিলীপ দাস বলেন, কারও কাছে টাকা না থাকলে আমরা ফ্রিতে মরদহে বাড়িতে পৌঁছে দিই। আমাদের কাছে এলে আমরা বডি পৌঁছে দিতাম।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, স্বাস্থ্যদপ্তর শববাহী গাড়ি যোগাড় করে না। সাধারণত পরিবারের তরফে অথবা স্থানীয় প্রশাসন, পুরসভা ব্যবস্থা করে।
এমন এক মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, এই দৃশ্য একেবারেই বাঞ্চনীয় নয়। এটা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। শববাহী শকট কেন অত টাকা চেয়েছে তা খোঁজ নেওয়ার বিষয়। আপাতদৃষ্টিতে নিশ্চিতভাবে এটি একটি অমানবিক ছবি। কিন্তু কেন ঘটেছে তাও নিশ্চিতভাবে প্রশাসন খোঁজ নেবে।
অন্যদিকে, আইএনটিটিইউসি টাউন ব্লক প্রেসিডেন্ট পুণ্যব্রত মিত্র বলেন, সংবাদমাধ্যম ও অ্যাম্বুল্যান্স ইউনিয়ন থেকে খবর পেলাম একটি পেশেন্ট পার্টি একটি মৃতদেহ ঘাড়ে করে নিয়ে যাচ্ছে। ওই খবর পেয়েই ছুটে আসি। আসার পর শুনলাম পেশেন্ট পার্টি হাসপাতালের চারতলা বা পাঁচতলা থেকে মৃতদেহ নামিয়েছে। তারপর তা কাঁধে করে এখান থেকে কিছুটা দূরে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ মোড়ে একটি অ্যাম্বুল্য়ান্সে উঠল। সংবাদমাধ্যও ছিল। এই ব্যাপারটার মধ্যে কিছু একটা চক্রান্ত রয়েছে। জেলার মানুষ জানেন যে কোনও ক্রাইসিসে আমরা এগিয়ে আসি। যে কোনও বিপর্যয়ে বিনামূল্যে আমরা পরিষেবা দিয়ে থাকি। যে পেশেন্ট পার্টি এসেছিলেন তারা যদি একটু সময় নিয়ে চেষ্টা করেতেন তাহলে তারা অ্য়াম্বুল্যান্স পেয়ে যেতেন।