আবিষ্কারের প্রায় ১০০ বছর পর, মহাকাশে প্রথম বোস-আইনস্টাইন ঘনীভূত অবস্থা তৈরি করল নাসা
গোটা বিশ্বের পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত বলা যেতে পারে।
নিজস্ব প্রতিবেদন : ১৯২৪ সালে অতিকূল পরিস্থিতিতে পদার্থের পঞ্চম অবস্থার কথা গবেষণায় তুলে ধরেছিলেন দুই পদার্থবিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু। প্রায় ১০০ বছর পর বৃহস্পতিবার প্রথমবার মহাকাশে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পদার্থের পঞ্চম অবস্থা- 'বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট' সৃষ্টি করলেন নাসার বিজ্ঞানীরা। বাঙালি তো বটেই, গোটা বিশ্বের পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত বলা যেতে পারে।
পদার্থের সাধারণভাবে চারটি অবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়- কঠিন, তরল, গ্যাসীয় এবং প্লাজমা। আমরা যে চেয়ারে বসি, তা কঠিন পদার্থ। যে জল পান করি তা তরল। আর যে বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাস নিই তা গ্যাসীয়। এ ছাড়াও উচ্চ তাপমাত্রায় পদার্থের গ্যাসীয় অবস্থাকে বলা হয় প্লাজমা।
তবে ১৯২৪ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রথম পদার্থের পঞ্চম একটি অবস্থার কথা গবেষণায় উল্লেখ করেন। পদার্থের এই অবস্থা কঠিনও নয় আবার তরলও নয়। গ্যাসীয় নয় আবার প্লাজমাও নয়। যখন পরমাণুর পরম শুন্য তাপমাত্রার (-২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) কাছাকাছি বা সমান কোয়ান্টাম লেভেল থাকে তখন এমন অবস্থায় পৌঁছয় পদার্থ। অর্থাত্ চরম শৈত্যের ফলে এরকমটা হতে পারে।
তবে, পৃথিবীতে স্বাভাবিক পরিবেশে যে এটা অসম্ভব তা বলাই বাহুল্য। কারণ এত শীতল তাপমাত্রা পৃথিবীর কোথাও নেই। ফলে বহু বছর ধরে কেবল তত্ত্বের পর্যায়ে ছিল বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট বা বোস-আইনস্টাইন ঘনীভূত অবস্থা।
১৯৯৫ সালে কলোরাডো ইউনিভার্সিটির গবেষক এরিক কর্নেল ও কার্ল ওয়েইম্যানের নেতৃত্বে গবেষকদের একটি দল প্রথম বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেটের পরীক্ষামূলক প্রমাণ করেন। সেই পরীক্ষায় রুবিডিয়াম-৮৭ পরমাণুর অতি লঘু গ্যাসকে ১৭০ ন্যানো কেলভিন তাপমাত্রায় শীতল করে বোস-আইনস্টাইন ঘনীভূত স্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্বে পদার্থবিজ্ঞানের বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট কেন্দ্র করে গবেষণার জোয়ার আসে।
বোস-আইনস্টাইন ঘনীভূত অবস্থায় সামান্য নড়াচড়াতেই পদার্থের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে আবার কঠিন স্তরে ফিরে যেতে পারে। পৃথিবীতে তাই ম্যাগনেটিক ফিল্ডের মধ্যে স্থির অবস্থায় পদার্থ এই অবস্থায় মাত্র কয়েক মিলিসেকেন্ড থাকতে পারে।
পৃথিবীতে সে ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণের সময়ে বড়সড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় মধ্যাকর্ষণ শক্তি। মহাকাশে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে স্বাভাবিকভাবেই সেই সমস্যা নেই। তাই সেখানে প্রায় কয়েক সেকেন্ড বোস-আইনস্টাইন ঘনীভূত অবস্থা স্থায়ী করা গিয়েছে। ফলে পর্যবেক্ষণের আরও বেশি সুযোগ মেলায় উচ্ছসিত নাসার পদার্থবিজ্ঞানীরা।
মহাকাশে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে কোল্ড অ্যাটোম ল্যাবরেটরিতে (CAL) ২০১৮ সাল থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা শুরু হয়। বোস-আইনস্টাইন ঘনীভূত অবস্থার গবেষণায় কাজ করেছেন রবার্ট টমসন ও একদল গবেষকের টিম। রবার্ট এটিকে বড় প্রযুক্তিগত সাফল্য বলে উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন : ৫০ হাজার বছরের পুরনো লেকের জল হয়ে গেল গোলাপী! বিশেষজ্ঞরাও অবাক