খোঁড়া বাদশা বাংলাদেশে, অনুমান সিআইডি
সংগ্রামপুর বিষমদ কাণ্ডের মূল পাণ্ডা খোঁড়া বাদশা সম্ভবত বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। এমনটাই অনুমান করছেন সিআইডি অফিসাররা। ঘটনার দিনও খোঁড়া বাদশা বারুইপুরেই ছিল বলে জানতে পেরেছে তদন্তকারী দল।
সংগ্রামপুর বিষমদ কাণ্ডের মূল পাণ্ডা খোঁড়া বাদশা সম্ভবত বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। এমনটাই অনুমান করছেন সিআইডি অফিসাররা। ঘটনার দিনও খোঁড়া বাদশা বারুইপুরেই ছিল বলে জানতে পেরেছে তদন্তকারী দল। তারপরদিন থেকেই তাঁর সমস্ত মোবাইল ফোন সুইচ অফ করে দেয় খোঁড়া বাদশা। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ফোনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে খানিকটা হলেও বিপাকে পড়েছেন গোয়েন্দারা।
এই সংগ্রামপুর গ্রামে দশ থেকে বারোটা বেআইনি মদের ঠেক রয়েছে। সেখান থেকে বিষমদ বেচাকেনা হয়েছিল বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এই চোলাই মদ কারবারের মূল কারবারি খোঁড়া বাদশাকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিস।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিষমদের প্রধান ঘাঁটি গোচরন এলাকা। ব্যাঙের ছাতার মতোই এখানে গজিয়ে উঠেছে একের পর এক বেআইনী চোলাই মদের ভাটি। এখান থেকে চোলাই মদ পৌঁছে যায় মগরাহাটের নূর ইসলাম ফকির ওরফে খোঁড়া বাদশার কাছে। এই খোঁড়া বাদশাই জেলার চোলাই মদ সরবরাহের পূল পান্ডা।
সংগ্রামপুর কাণ্ডের পর থেকেই বিষমদ কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত খোঁড়া বাদশার খোঁজে তল্লাসি চালাচ্ছে পুলিস। কিন্তু এখনও ধরা পড়নি সে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিস জেনেছে, ঘটনার দিন বুধবার রাতে নিজের বাড়িতেই ছিলেন খোঁড়া বাদশা। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে পালিয়ে যায় সে। এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সহযোগিতায় পালিয়ে যায় সে। রাজনৈতিক মদতেই সেলিম, খোঁড়া বাদশারা চোলাই মদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে জিআরপি, আরপিএফ, আবগারি দফতর এবং পুলিসকে টাকা দিয়ে বোঝাপড়া করে এই কারবার চলে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মগরাহাট দুই নং ব্লকের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি খইরুল লস্কর এবং স্থানীয় বিধায়ক নমিতা সাহার ছত্রছায়াতেই চোলাই মদের এই কারবার গড়ে তুলেছে খোঁড়া বাদশা ও সেলিম।
বস্তুত দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার চোলাই-চক্রের কিং-পিন হিসেবে বারেবারেই আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসছে নূর ইসলাম ফকির ওরফে খোঁড়া বাদশার নাম। চোলাই মদ পাচার তো আছেই তার সঙ্গে চোলাই মদের ভাঁটি বানিয়ে ফেলেছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার এই চোলাই মদের কারবারি। নূর ইসলাম ফকিরের মতো চোলাই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হারু, কালো, ফিরোজ, বাবলু ওরফে কালো, হাকিলের মতো বেশ কয়েকজন পান্ডার নাম।
কিন্তু কী ভাবে এই চোলাই মদ পৌঁছে যাচ্ছে দক্ষিন চব্বিশ পরগনার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরের অলিগলিতে?
খবর মিলেছে, গোচরনে তৈরি হওয়া চোলাই মদ মিডলম্যান মারফত পৌঁছে যায় শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। আর পুলিসের চোখে ধুলো দিয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এই চোলাই মদ পৌঁছে দেওয়ায় মিডলম্যানের কাজ করে বখতার। বখতারের হাত ঘুরেই নিষিদ্ধ চোলাই মদ পৌঁছে যায় বারুইপুর সোনারপুর, ব্রেসব্রিজ, বালিগঞ্জ হয়ে বেহালা বা ঠাকুরপুকুরে। পৌঁছে দেওয়ার কাজে জড়িয়ে আছে সুদক্ষ পাচারকারিরা। দিনে বা রাতে অত্যন্ত সংগঠিত ভাবেই চলে এই বিষ-ব্যবসা।
চোলাই মদের একটি বড় প্যাকেট বিক্রি হয় কুড়ি টাকায়। ছোট প্যাকেটের দাম দশ টাকা। সরকার নিয়ন্ত্রিত মদের মূল্যবৃদ্ধি দিনআনা দিন খাওয়া মানুষগুলোকে ক্রমশই এগিয়ে নিয়ে যায় স্বল্প মূল্যের এই নেশার পথে। ঠেলে দেয় গভীর অন্ধকূপে। যেখানে লেখা থাকে শুধুই মৃত্যুর ঠিকানা।