রেল বাজেটে রাজ্য কী পেল?
যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলার জন্য একগুচ্ছ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। বিশেষ করে কলকাতা মেট্রো রেল সম্প্রসারণের উপর জোর দিয়ে এদিন রেলমন্ত্রী জানান, জোকা-ডায়মণ্ডহারবার, ব্যারাকপুর-কল্যাণী ও জোকা-টালিগঞ্জ মেট্রো রেল চালু করা হবে।
যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলার জন্য একগুচ্ছ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। বিশেষ করে কলকাতা মেট্রো রেল সম্প্রসারণের উপর জোর দিয়ে এদিন রেলমন্ত্রী জানান, জোকা-ডায়মণ্ডহারবার, ব্যারাকপুর-কল্যাণী ও জোকা-টালিগঞ্জ মেট্রো রেল চালু করা হবে। ব্যারাকপুর-কল্যাণী মেট্রো রেলের সমীক্ষা শেষ হয়েছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া, জোকা-টালিগঞ্জ মেট্রো রুটের সমীক্ষা চলছে ও জোকা-মমিনপুর মেট্রো রেলের কাজ চলছে বলে জানান রেলমন্ত্রী।
এবারের রেল বাজেটে রাজ্যের জন্য বেশ কিছু রেল কারখানার় প্রস্তাবের কথাও শুনিয়েছেন রেলমন্ত্রী। তিনি জানান, শ্যামনগর ও ডানকুনিতে তৈরি হবে চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস-এর যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা। কেন্দ্র-রাজ্য আর্থিক সাহায্যে পশ্চিমবঙ্গে ৪টি প্রকল্পের প্রস্তাব রয়েছে। বজবজে বগির কাঠামো তৈরির কারখানা ও কুলটিতে ওয়াগন তৈরির কারখানা তৈরি করা হবে। উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে চলবে 'গ্রিন ট্রেন'। ডানকুনিতে নতুন কোচিং টার্মিনাল তৈরির সমীক্ষা চলছে। কলকাতায় ৪৪টি নতুন লোকাল ট্রেন চালু করা হবে। এছাড়া ৫০টি নতুন মেট্রো রেল পরিষেবা চালু করা হবে কলকাতায়। খড়গপুর ও ভদ্রকের মধ্যে থার্ড লাইন তৈরির সমীক্ষা শুরু হবে।
এবারের রেল বাজেটে ১০টি নতুন রুটে বৈদ্যুতিকরণের কথা জানিয়েছেন ত্রিবেদী। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে মালদহ থেকে সিঙ্গাবাদ ও অন্ডাল থেকে সীতারামপুর ভায়া জামুরিয়া রেলপথের বৈদ্যুতিকরণ করা হবে। বর্ধমান থেকে কাটোয়া নতুন রেলপথের কাজ শুরু করা হবে। রেল স্টেশনের আধুনিকীকরণের বিষয়ে রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৮৪টি আদর্শ স্টেশন তৈরি করা হবে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ডালটনগঞ্জ রয়েছে। এছাড়া, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মের ১৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে, বঙ্কিম স্মরণে নৈহাটিতে তৈরি হবে নতুন কোচিং টার্মিনাল। খড়গপুরে তৈরি করা হবে রেলের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। লুধিয়ানা থেকে ডানকুনি, ১০০০ কিলোমিটার পণ্যবাহী করিডোর তৈরি করা হবে বলেও জানান ত্রিবেদী। রেলমন্ত্রী বলেন, ''কলকাতা-ত্রিপুরা-বাংলাদেশ রেল যোগাযোগে বিশেষ জোর দেওয়া হবে।''
রাজ্যের জন্য বেশ কিছু নতুন এক্সপ্রেস ট্রেনও দেওয়া হয়েছে রেল বাজেটে। সে গুলি হল,
১. শালিমার থেকে সেকেন্দ্রাবাদ, ভায়া বিজয়ওয়াড়া নতুন বাতানুকূল এক্সপ্রেস (সাপ্তাহিক)।
২. হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি, ভায়া মালদা টাউন শতাব্দী এক্সপ্রেস (সপ্তাহে ৬ দিন)।
৩. নিউ জলপাইগুড়ি থেকে নিউ কোচবিহার ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস (সপ্তাহে ৫ দিন)।
৪. বিলাসপুর-পটনা এক্সপ্রেস চলবে ভায়া আসানসোল (সাপ্তাহিক)।
৫. হাওড়া-রক্সৌল, ভায়া আসানসোল, ঝাঝা, বারাউনি (এক সপ্তাহ অন্তর)।
৬. হাওড়া-লালকুয়ান এক্সপ্রেস, ভায়া মুঘলসরাই, বারাণসী, লখনউ (সাপ্তাহিক)।
৭. কলকাতা-জয়নগর এক্সপ্রেস (সাপ্তাহিক), ভায়া আসানসোল, ঝাঝা, বারাওনি।
৮. কলকাতা-ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস (সাপ্তাহিক)।
৯. শালিমার-চেন্নাই এক্সপ্রেস (সাপ্তাহিক)।
১০. আনন্দবিহার-হলদিয়া এক্সপ্রেস, ভায়া মুঘলসরাই, গোমো, পুরুলিয়া (সাপ্তাহিক)।
১১. ব্যারাকপুর-আজমগঢ় এক্সপ্রেস (সাপ্তাহিক) ভায়া ঝাঝা, বালিয়া।
১২. আসানসোল-চেন্নাই এক্সপ্রেস (সাপ্তাহিক), ভায়া পুরুলিয়া, সম্বলপুর, ভিজিয়ানাগারাম
১৩. শালিমার-ভুজ এক্সপ্রেস (সাপ্তাহিক), ভায়া বিলাসপুর, কাটনি, ভোপাল।
১৪. সাঁতরাগাছি-আজমের এক্সপ্রেস (সাপ্তাহিক), ভায়া খড়গপুর, চাণ্ডিল, কাটনি, কোটা
১৫. মালদা টাউন-সুরাট এক্সপ্রেস (সাপ্তাহিক) ভায়া রামপুরহাট, আসানসোল, নাগপুর।
বাংলার জন্য ৩টি এমইএমইউ ট্রেন দেওয়া হয়েছে রেল বাজেটে। সেগুলি হল,
১. আদ্রা-আসানসোল
২. আদ্রা-বিষ্ণুপুর, ভায়া বাঁকুড়া
৩. শিয়ালদহ-লালগোলা
রাজ্যের জন্য ৪টি ডিইএমইউ ট্রেনগুলি হল--
১. মসাগ্রাম-মতনাশিবপুর (প্রতিদিন)
২. শিলিগুড়ি-চাঙ্গড়াবাঁধা (প্রতিদিন)
৩. নিউ জলপাইগুড়ি-বামনহাট
রাজ্যের বেশ কয়েকটি ট্রেনের দিন বাড়ানো হয়েছে, সেগুলি হল
১. খড়গপুর-ভিল্লুপুরম এক্সপ্রেস একদিন থেকে বাড়িয়ে ২ দিন করা হচ্ছে।
২. নিউ জলপাইগুড়ি-আলুয়াবাড়ি-শিলিগুড়ি ডিইএমইউ ৬ দিন থেকে বাড়িয়ে ৭ দিন করা হচ্ছে।
৩. রাধিকাপুর-নিউ জলপাইগুড়ি ডিইএমইউ ৬ দিন থেকে বাড়িয়ে ৭ দিন করা হচ্ছে।
৪. বালুরঘাট-নিউ জলপাইগুড়ি ডিইএমইউ ৬ দিন থেকে বাড়িয়ে ৭ দিন করা হচ্ছে।
ডবল লাইন করা হচ্ছে যে সমস্ত রুটে, সেগুলি হল
১. ডানকুনি-বালি
২. কৃষ্ণনগর-ধুবুলিয়া
৩. ফুলিয়া-কালিনারায়ণপুর
৪. ভগবানগোলা-জিয়াগঞ্জ
৫. নলহাটি-টাকিপুর
৬. অম্বিকা কালনা-ধাত্রিগ্রাম
৭. দাঁইহাট-পাটুলিয়া
৮. অম্বরি ফালাকাটা-বেলাকোবা
৯. নিউ কোচবিহার-শামুকতলা রোড
১০. খড়গপুর-গোকুলপুর
তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে ১০০-র'ও বেশি প্রকল্পের প্রতিশ্রুতির মধ্যে এপর্যন্ত মাত্র ৮৭টি কারখানায় কাজ শুরু হয়েছে। ৩৮টি প্রকল্পের কাজ এক ইঞ্চিও এগোয়নি। অর্থাত্, তথ্য বলছে উদ্বোধনের ক্ষেত্রে রেল যতটা উদ্যোগী ছিল প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে সেই তত্পরতা চোখে পড়েনি। তাই এবারের রেল বাজেটে প্রকল্পের কাজগুলি কতদূর এগোবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।