ফিরে গেলেন দ্বিজেন!
দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় (১৯২৭-২০১৮)
দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় (১৯২৭-২০১৮)
‘এক দিন ফিরে যাব চলে, এ ঘর শূন্য করে, বাঁধন ছিন্ন করে...।’ নিজের গানের এই কথাগুলোর মতো ঘর শূন্য করে, বাঁধন ছিন্ন করে চলে গেলেন গায়ক দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। বয়স হয়েছিল ৯১।
অগস্টেই ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এই প্রবীন শিল্পী। চিকিত্সকরা জানিয়েছিলেন, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তাঁর। এই অবস্থায় দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের চিকিত্সার জন্য মেডিক্যাল বোর্ডও গঠন করে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। এরপর দিনরাত তাঁকে পর্যবেক্ষণেও রাখা হয়। বাড়িও ফিরে আসেন তিনি। তবে গত সপ্তাহেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। সোমবার নিজের বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। তাঁর মৃত্যুতে শোকবার্তা জ্ঞাপন করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
I am at a loss for words. Dwijen Da (Mukherjee) is no more. End of an era. Huge loss for the music industry of #Bangla. This is also a personal loss. We had felicitated him with 'Banga Bibhushan' award in 2011. Condolences to his family and fans
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) December 24, 2018
আমি শোকস্তব্ধ। দ্বিজেন দা আর নেই। বাংলার সঙ্গীতজগতে ইন্দ্রপতন হল। দুঃখপ্রকাশ করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। স্বজন হারানোর বেদনা অনুভব করছি। ২০১১ সালে ওনাকে আমরা বঙ্গ বিভূষণ সম্মানে ভূষিত করেছিলাম। ওনার পরিবার ও অনুরাগীদের জানাই সমবেদনা
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) December 24, 2018
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে এই পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত হয়েছিলেন প্রবাদপ্রতীম এই শিল্পী। ২০১১ সালে সম্মানিত হয়েছিলেন বঙ্গবিভূষণেও। এছাড়াও সাত দশকেরও বেশি সময়ের সঙ্গীতময় জীবনে দেবব্রত বিশ্বাস মেমোরিয়াল পুরস্কার (১৯৮২), ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার (১৯৯১), রাজীব গান্ধী পুরস্কার (১৯৯২), উত্তম কুমার জীবনকৃতি সম্মান (২০০২)-সহ একাধিক পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়-কে সম্মানিত করেছিল বঙ্গবন্ধু সম্মানে। ওই বছরই কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট-ও পান তিনি।
আরও পড়ুন- দীর্ঘ রোগ ভোগের পর প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন
দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯২৭ সালের ১২ নভেম্বর। পেশাদার গায়ক হিসেবে তাঁর অভিষেক ১৯৪৪ সালে। তার পরের বছরই মেগাফোন রেকর্ড কোম্পানির হাত ধরে প্রথম রেকর্ডিং। এরপর কিংবদন্তী সলিল চৌধুরীর সঙ্গে জুটি বেঁধে একের পর এক অনবদ্য সৃষ্টি এবং গণনাট্য সংঘের হয়ে কাজ করেন তিনি। দিন যত এগিয়েছে বাঙালি মননে আরও প্রাসঙ্গিক হতে থেকেছেন দ্বিজেন বাবু।
আরও পড়ুন- চলে গেলেন জনপ্রিয় টেলি অভিনেতা গৌতম দে
সুশান্ত লাহিড়ী, পঙ্কজ মল্লিক, শান্তিদেব ঘোষের মতো ব্যক্তিত্বদের সান্নিধ্য তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে অন্য উচ্চতায়। রবীন্দ্র সঙ্গীত তো বটেই, বাংলা গানের জগতেও তিনি বরাবরই হয়ে থেকেছেন অনন্য হয়েই। মহালয়ের প্রভাতী অনুষ্ঠানেও কণ্ঠ রয়েছে তাঁর। তাছারাও হানিমুন (১৯৬০), মায়া (১৯৬১), মধুমতী-র মতো হিন্দি ছবিতেও লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে ডুয়েট গেয়েছেন দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। সেই সবই এখন অতীত, ইতিহাস আর কেবলই স্মৃতি। কারণ, সেই সব ফেলেই ‘ফিরে গেলেন’ দ্বিজেন।