বিনোদন যুদ্ধের দুই সিপাই--আইপিএল VS বলিউড

সালটা ২০০৮। ১৮ এপ্রিল। ভারতের বিনোদন আকাশে এল নতুন তারা। অশনিসংকেত দেখল বলিউড। আইপিএল চলাকালীন মুক্তি পাওয়া ছবি বক্সঅফিসে মুখ থুবড়ে পড়ল। এমনিতেই বলিউডের ইতিহাস বলে বছরের শুরুর দিকে মুক্তি পাওয়া ছবির থেকে শেষের দিকে মুক্তি পাওয়া ছবি অনেক বেশি ব্যবসা করে বক্সঅফিসে। এবার মরার ওপর খাঁড়ার ঘা এসে জুটল আইপিএল। ঝাঁ চকচকে সিনেমাটোগ্রাফি, তারকা সমাহার কিছুই হলমুখী করতে পারল না দর্শকদের। টানা দেড় মাস শুনসান রইল দেশের মাল্টিপ্লেক্সগুলি। আসল বিনোদনতো তখন চলছে খেলার মাঠে।

Updated By: Mar 30, 2013, 08:35 PM IST

প্রমা মিত্র সালটা ২০০৮। ১৮ এপ্রিল। ভারতের বিনোদন আকাশে এল নতুন তারা। অশনিসংকেত দেখল বলিউড। আইপিএল চলাকালীন মুক্তি পাওয়া ছবি বক্সঅফিসে মুখ থুবড়ে পড়ল। এমনিতেই বলিউডের ইতিহাস বলে বছরের শুরুর দিকে মুক্তি পাওয়া ছবির থেকে শেষের দিকে মুক্তি পাওয়া ছবি অনেক বেশি ব্যবসা করে বক্সঅফিসে। এবার মরার ওপর খাঁড়ার ঘা এসে জুটল আইপিএল। ঝাঁ চকচকে সিনেমাটোগ্রাফি, তারকা সমাহার কিছুই হলমুখী করতে পারল না দর্শকদের। টানা দেড় মাস শুনসান রইল দেশের মাল্টিপ্লেক্সগুলি। আসল বিনোদনতো তখন চলছে খেলার মাঠে। একদিকে ক্রিকেটের উন্মাদনা, নামী-বেনামী খেলোয়াড়রা চার-ছয় হাঁকানোর পর চিয়ার লিডার্সদের উল্লাস নৃত্য, প্রচুর লগ্নি, সঙ্গে গোটা বলিউডের সব গ্ল্যাম কোশেন্টই প্রায় মাঠে। মন্ত্রমুগ্ধ হওয়ার সব উপকরণই মজুত এক থালায়। প্রথম আইপিএল চলাকালীন বলিউডে মুক্তি পায় মোট ৯টি ছবি। তার মধ্যে তিনটি ছবি থেকে বক্সঅফিসের প্রত্যাশা ছিল প্রচুর। অনিল কপূর, অক্ষয় কুমার, সইফ আলি খান, করিনা কপূর অভিনীত টশন, অমিতাভ বচ্চনের ভূতনাথ ও ভট ক্যাম্পের জন্নত। কিন্তু তারকা সমাহার, বিগ বি বা ভট ক্যাম্প, বলিউডের তিনটি বিগ কোশেন্টই ফেল। হলে দর্শক টানতে পারল না কোনও ছবিই। বিপুল ক্ষতির বোঝা চাপল বলিউডের ঘাড়ে। বলিউড বুঝে গেল, পরের বছর থেকে চেপে খেলতে হবে।

২০০৯। দ্বিতীয় আইপিএল। বলিউড এখন আগের থেকে অনেক বেশি সাবধান। ১৮ এপ্রিল থেকে ২৪ মে। বলিউডে মুক্তি পেয়েছিল মাত্র দুটি ছবি। সিকন্দর ও সনম তেরি কসম। দুটোই ছিল স্বল্প বাজেটের ছবি। তারকাখচিত রাশি রাশি লগ্নির ছবি রিলিজ করতে ভয় পেয়েছিল বলিউড। ইতিহাস বলে যেকোনও নতুন কিছুই উন্মাদনা জাগায়। আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই উন্মাদনার পারদ নেমেও যায়।
আইপিএলের ভাগ্যও যে তার ব্যতিক্রম নয়, তা বোঝা গেল তৃতীয় বছর থেকেই। ২০১০ সালে আইপিএল চলে ১২ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। বড় বাজেটের ছবি মুক্তি না পেলেও এইসময় মুক্তি পায় স্বল্প বাজেটের বেশ কিছু ছবি। একতা কপূরের প্রযোজনায় লভ, সেক্স অওর ধোঁকা, মিত্তল ভার্সেস মিত্তল, ওয়েল ডান আব্বা, দ্য জাপানিজ ওয়াইফ ও রামগোপাল ভার্মার ফুঁক টু। বক্সঅফিস রেকর্ড বলছে, এরমধ্যে বেশিরভাগ ছবিই প্রত্যাশার থেকে বেশি ব্যবসা করেছিল বক্সঅফিসে। তবে কি আইপিএলের বাজার পড়ছে? বড় তারকা, বিগ বাজেট ছাড়াই আইপিএল চলাকালীন দর্শক টানছে মাল্টিপ্লেক্স? আসলে তখন থেকেই আইপিএলের আকাশে ঘনিয়ে আসছিল কালো মেঘ। গুরুতর বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন আইপিএল সর্বেসর্বা লোলিত মোদী। অনিশ্চিত হয়ে পড়ল আইপিএলের ভাগ্য। তবে কি তিনবারেই থেমে যেতে হবে? না। অতটা খারাপ ভাগ্য হয়নি আইপিএলের।

পরের বছর যথাসময় ফিরে এসেছে আইপিএল ফোর। তবে কোথায় সেই আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা? বলিউডও যেন অনেকটা স্বস্তিতে! আইপিএল চলাকালীন প্রতিটা শুক্রাবার মুক্তি পায় বেশ কিছু ছবি। তার মধ্যে দম মারো দমের মত বিগ বাজেটের ছবিও ছিল। থ্যাঙ্ক ইউ, তিন থে ভাই, শোর ইন দ্য সিটি, চলো দিল্লি, আই অ্যাম, হন্টেড থ্রিডি, রাগিনী এমএমএস ও স্ট্যানলি কা ডাব্বা। প্রতিটা ছবির ট্র্যাক রেকর্ডই ছিল ভাল।
বোঝা গেল আসলে আইপিএল ফিরে কামব্যাক করেনি, স্বমহিমায় কামব্যাক করেছে বলিউড। আইপিএল ২০১২। শুরু থেকেই ঢিমে তালে চলছিল আইপিএল। ছিনে জোঁকের মত সারাক্ষণ পায়ের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল বিতর্ক। বিতর্ক ছুঁয়ে গিয়েছিল কিং খানকেও। আর বক্সঅফিস সেইসময় দেখেছিল বলিউডি ছক্কা। হাউজফুল টু, ভিকি ডোনর, হেট স্টোরি, জন্নত টু, ইশাকজাদে ও ডিপার্টেমন্ট। পরপর ছটি হিট দিয়ে আইপিএলের স্পিনে ছক্কা হাঁকালো বলিউড। সেইসঙ্গে বুঝিয়ে দিল বলিউড রয়েছে বলিউডেই। আইপিএলের চোখ রাঙানিকে আর ডরায় না সে।

আইপিএল সিক্স শুরু হচ্ছে ৩ এপ্রিল ২০১৩। চলবে ২৬ মে পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে বলিউডে মুক্তি পেতে চলেছে ডেভিড ধাওয়ানের চসমে বদ্দুর রিমেক, রোহন সিপ্পির নটঙ্কি সালা, ইমরান হাশমি অভিনীত বহু প্রত্যাশিত এক থি ডায়ান, বিগ বাজেটের শুটআউট অ্যাট ওয়াডালা, তারকাখচিত জঞ্জির রিমেক, সইফ আলি খানের গো গোয়া গন ছাড়াও আরও ৯টি ছবি।
ছবির তালিকা থেকেই বোঝা যাচ্ছে আইপিএলকে আর পোছে না বলিউড। তবে উল্টোদিকে? আইপিএল কর্তারা কি নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছেন? নাকি ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলছে বলিউডি ভূত! বলিউডের কামব্যাকে এবার অশনিসংকেতের আশঙ্কা খুব একটা উড়িয়ে দিতে বোধহয় পারছেন না আইপিএল কর্তারা। তার ওপর জনপ্রিয়তাও এসে ঠেকেছে তলানিতে। এবারের আইপিএলকে কি তবে বলা যায় `রেড অ্যালার্ট আইপিএল?` উত্তর সময়ই দেবে। আমরা অবশ্য আশা করব পাশাপাশি সুখের ঘরে বসত করুক আইপিএল আর বলিউড।

.