বাঙালির আসল দুর্গাপুজো এই বাসন্তী পুজোই
শরৎ নবরাত্রিতে দুর্গাপুজো আর এই বসন্ত নবরাত্রিতে বাসন্তী পুজো।

সৌমিত্র সেন
কাল কী আশ্চর্য শক্তিশালী এক জিনিস! সে একটা জাতির পুজোর ইতিহাসটাকেই হুবহু বদলে দিল! না হলে বাঙালির দুর্গাপুজোর দিনক্ষণ এভাবে আমূল বদলে যায়!
ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষের বাসন্তী পুজোই প্রকৃত দুর্গাপুজো (durga puja)। যদিও একালে আশ্বিন শুক্লপক্ষের দুর্গাপুজোই অন্যতম প্রধান পুজোর স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছে।
অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য সব কালেই মানুষ আদ্যাশক্তির আরাধনা করে। পুরাণ অনুযায়ী, সমাধি নামক বৈশ্যের সঙ্গে মিলে রাজ্য-হারানো রাজা সুরথ বসন্তকালে ঋষি মেধসের আশ্রমে মূর্তি গড়ে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। যা পরে বাসন্তী পুজো নামে প্রসিদ্ধ হয়। এবং সেটাই চলতে থাকে। কিন্তু রামচন্দ্র (ramachandra) সীতা-উদ্ধার কালে অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য শরৎকালেই দুর্গার আরাধনা করলেন। এটি অকালবোধন হিসাবে বিখ্যাত হল। আর তার পর থেকে এই পুজোই চলতে থাকল।
বাল্মীকি (valmiki) অকালবোধনের ঘটনাটি তাঁর রচনায় উল্লেখ করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু বাঙালি কবি কৃত্তিবাস ওঝা তাঁর বঙ্গ-রামায়ণে এই অংশের এমন আবেগমথিত বর্ণনা দেন যে, তা বরাবরের জন্য বাঙালিচিত্তে গেঁথে যায়। শরৎকালের দুর্গাপুজো এইভাবেই ধীরে ধীরে তার নিজস্ব ধর্মীয়-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞান রচনা করে গণমনে চিরস্থায়ী হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: ধুতি পাঞ্জাবিতে 'খাঁটি বাঙালি' প্রধানমন্ত্রী, উদ্বোধন করবেন BJP-র দুর্গাপুজো
কিন্তু তবুও বাঙালি (the bengalees) তার আদি দুর্গাপুজোকে কোনওদিনই পুরোপুরি ভুলে যায়নি। সে এখনও দুর্গাপুজোর আদিরূপ বাসন্তী পুজোর আয়োজন করে। যদিও এই পুজো কোনও দিনই বারোয়ারির আকার নেয়নি। যে সময়ে রমরম করে বাসন্তী পুজো হত তখনও তা আয়োজিত হত মূলত জমিদার নায়েব গোমস্তা গোষ্ঠীর লোকজনদের দ্বারাই। এই পুজো কোনও দিনই সাধারণের পুজো হয়ে ওঠেনি।
এখনও এই পুজো পরিবার-তন্ত্রেই আটকে, বারোয়ারি হয়নি। এবং খোঁজ করলে দেখা যাবে, আজও এ শহরের (kolkata) কিছু ভুঁইফোঁড় উঠতি বড়লোকের বাড়ির হঠাৎ-শুরু-হওয়া বাসন্তী পুজো ছাড়া তা মূলত হয় বনেদি বড়লোকদের বাড়িতেই। পড়তি বড়লোকের বাড়িতে হলেও এই পুজোর সঙ্গে ধন-তন্ত্রের যোগ প্রবলই।
কেন এক সময় রমরম করে বাসন্তী পুজো হত, তার একটা অন্য কারণও কেউ কেউ বলে থাকে। বসন্ত ঋতুর শেষে গ্রীষ্মের শুরুর এই সময়টায় সেকালে বসন্ত রোগের (pox) খুব প্রকোপ ছিল। টিকাহীন চিকিৎসাহীন সেই অতীতে দুর্বার বসন্তের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য মায়ের আরাধনা করে মায়ের কৃপা প্রার্থনা করা হত হত। রোগকে প্রশমিত করার জন্য়ও তাই বাসন্তীদেবীর পুজোর চল হয়েছিল বলে ধরে নেওয়া যেতেই পারে।
আজ, সোমবার সেই বাসন্তী পুজো। আগামীকাল অন্নপূর্ণা পুজো। অন্নপূর্ণা পুজোকে বাসন্তী পুজোরই অঙ্গ বলে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন: অলক্ষ্মী বিদায়ে কালীঘাটে পূজিতা মহালক্ষ্মী