পথিক, তুমি কি ইমিউনিটি খাইয়াছ?

নতুনতর সন্দেশের সন্দেশে কি নিয়ন্ত্রণে বাঙালিচিত্তের সুগারলেভেল!

Updated By: Oct 27, 2020, 06:25 PM IST
পথিক, তুমি কি ইমিউনিটি খাইয়াছ?

সৌমিত্র সেন

ফ্যাট-কোলেস্টেরল হাই জেনেও যে বাঙালি নিরুদ্বিগ্ন মনে খাসির মাংস সাঁটায়, সুগার বাউন্ডারির বাইরে জেনেও গরম-গরম রসগোল্লা 'সেবা' করার লোভ ত্যাগ করতে পারে না যে জাত, ইউরিক অ্যাসিডে ভুগেও যে টপাটপ ডিম উড়িয়ে দেওয়ার ভয়ানক দুঃসাহস দেখাতে পারে, সে-বাঙালিকে আর যাই হোক শরীর সচেতন বলে কেউ 'অপবাদ' দিতে পারবে না!

ইমিউনিটি সন্দেশ বা ভাইটালিটি সন্দেশ এ হেন বাঙালির কী করিবে! 'পথিক, তুমি কি সন্দেশ খাইয়াছ?' বলে প্রশ্ন করলে বাঙালি মাত্রই গোত্তা খেয়ে পথ হারিয়ে ফেলবে। মুখব্যাদানপূর্বক সে জিজ্ঞাসিবে, 'স্বাস্থ্যসম্মত' মিষ্টি-- তা-ও কি সম্ভব? তা কি ওই অনেকটা কাঁঠালের আমসত্ত্ব বা চৌকো বৃত্তের মতো হয়ে গেল না? আরে মশাই, ক্ষতি হয় জেনেই তো খাওয়া। ক্ষতির মধ্যে এক ধরনের নেশা আছে। ধূমপান, কঠিনপান বা তরলপান-- নিজেকে একটু খইয়ে দিয়ে না খেলে কি আর দেবদাস-জাতের মনে কোনও আত্মশ্লাঘা জমে?

বাঙালির হাত থেকে তৃপ্তির এ অস্ত্রটি এই দুর্বিনীত করোনাকালে কে আবার কেড়ে নিতে বসল? করোনার সঙ্গে তো আমরা সর্বস্ব দিয়ে লড়ছি। সেখানে আবার সন্দেশ কেন! নতুন এই অস্ত্র হজম করে কোনও বাঙালিই কলার তুলে বলতে চাইবে কি যে, সে স্বাস্থ্যসচেতন মিষ্টি খেয়েছে!

রাবড়ি খেতে অসম্ভব ভালবাসতেন শিব্রাম চক্কোত্তি। রসগোল্লা, ছানার পায়েসও দুর্দান্ত পছন্দ করতেন। জাত খাদ্যরসিক শিব্রাম দোকানে মিষ্টি খেতে গিয়ে যদি শুনতেন সেখানে রোগপ্রতিরোধী বা জীবনীশক্তি আনয়নকারী সন্দেশ বিক্রি হচ্ছে, কী করতেন তিনি? সটান ফুটপাতে শুয়ে পড়তেন, কিংবা সন্দেশের দোকানের পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেই নিজের ইমিউনিটি বাড়িয়ে নিতেন। কেননা, কে না জানে, এক থালা ভাত নিয়ে রান্নাঘরের পাশে বসে খাওয়ার প্রেসক্রিপশন তো তাঁরই। যুক্তি ছিল, ঘ্রাণেণ অর্ধং ভোজনম্! অর্থাৎ কিনা, ভাল ভাল রান্নার ঘ্রাণ নিতে নিতেই শুধু ভাত খেয়ে ফেলা। তাই যদি হয়, তবে রোগপ্রতিরোধী বা প্রাণশক্তিদায়ী সন্দেশের ক্ষেত্রেই বা তার অন্যথা হবে কেন?

সন্দেশের নাম নিয়ে রসিকতামগ্ন রসনাসম্রাট শিব্রাম নিশ্চয়ই উত্তর দিতেন, যথেষ্ট ইমিউনিটি এবং ভাইটালিটি না থাকলে কি চাঁচোলের জমিদারপুত্র হয়েও তিনি আজীবন উত্তর কলকাতার মেসে কাটিয়ে দিতে পারতেন!

সে না-হয় হল। কিন্তু একটা কথা তো পরিষ্কার, শিব্রাম করোনা দেখেননি। আর আমবাঙালিও শিব্রাম নন। অ-শিব্রামীয় বঙ্গসন্তানের জন্য অতএব চাই-ই নতুনতর সন্দেশের 'সন্দেশ'। ট্র্যাডিশনাল মিষ্টির পাশাপাশি যে সন্দেশে কামড় দিয়ে বাঙালি তার রসনায় পেয়ে যাবে তুলসী, হলুদ, তেজপাতা, যষ্টিমধু, অশ্বগন্ধা, চ্যবনপ্রাশ-সহ হিমালয়ের মধুর আশ্বস্তকর আস্বাদ। এ হল হাল আমলের 'নিউট্রি সুইট'। জিভের ডগায় এক টুকরো হেলথ্। যাতে রথ দেখা আর কলা বেচা দুই-ই হবে। মিষ্টির স্বাদ উপভোগের পাশাপাশি হবে শরীররক্ষাও।

আরও পড়ুন: ও চাঁদ, বরফজলের নামবে জোয়ার! আশ্বাস বিজ্ঞানীদের

.