টেক্কা নয়; আক্ষরিক অর্থেই বন্ধুত্বের প্রত্যয়ে মিলল দুই পুজো
প্রতিযোগিতা ভুলে প্রীতি ও মিলনের মৌতাতে মিলেমিশে একাকার শহরের দুই ডাকসাইটে পুজো-- উত্তরের টালা পার্ক প্রত্যয় আর দক্ষিণের মুদিয়ালি।
'ওরা থাকে ওধারে' ছবিটির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই বাঙালির। রেডিয়োও মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের ধারাবিবরণী শুনতে-শুনতে যুযুধান দুই ক্লাব নিয়ে দু'পারের বাঙালির দ্বন্দ্বের অপূর্ব 'পিকচারাইজেশন' সেখানে।
বাঙালি কিছু কিছু বিষয়ে বিভাজনে স্বতঃসিদ্ধ। তারা জানে-- মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল, হেমন্ত-মান্না, উত্তম-সৌমিত্র, সত্যজিৎ-মৃণালে কোনও দিন মিলমিশ হয় না, হতে পারে না! এই বিভাজনের উত্তাপেই তারা আড্ডায়-আলোচনায় নিজের সেঁকে নেয়।
অথচ এমন একটা চিরায়ত ভাবনার 'প্যারাডাইম শিফট' ঘটিয়ে দিল এ শহরেরই দুই হেভিওয়েট পুজো। পুজোকে ঘিরে অন্য বছর তাদের মধ্যে থাকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা; তবে দ্বন্দ্বের নয়, এ বছর তাদের 'পিকচারাইজেশন' পারস্পরিক অমলিন বন্ধুত্বের।
প্রতিযোগিতা ভুলে প্রীতি ও মিলনের মৌতাতে মিলেমিশে একাকার শহরের দুই ডাকসাইটে পুজো-- উত্তরের টালা পার্ক প্রত্যয় আর দক্ষিণের মুদিয়ালি।
আজ, রবিবার, সকাল ১০টা নাগাদ টালা পার্ক প্রত্যয় তাদের একটি বিশেষ 'স্যানিটাইজ ভেহিকল' নিয়ে হাজির হয় দক্ষিণের মুদিয়ালি পুজো প্রাঙ্গণে। চির-প্রতিদ্বন্দ্বীর মণ্ডপ-চত্বর স্যানিটাইজ করে দিয়ে গেল তারা। এই 'জেসচারে'র প্রতিদান হিসেবে দক্ষিণের মুদিয়ালি কথা দিল, টালা প্রত্যয় তাদের মণ্ডপের কাজ শেষ করলেই আগামী শনিবার সকালে তারা সেখানে গিয়ে 'বায়ো বাবল' বসিয়ে দিয়ে আসবে। যা ৯০ দিন পর্যন্ত টালার গোটা মণ্ডপ চত্বরকে কোভিড-ফ্রি রাখতে সক্ষম হবে।
কী বলছেন দুই ক্লাবের কর্মকর্তারা?
তাঁরা বলছেন, চিরকালই আমরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় মাতি। পুজোর সময়ে ক্লাবে-ক্লাবে লড়াই এ শহরের একটা বিশেষ ব্যাপার। কিন্তু এ বারের পুজো তো অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে। তাই এ বারের আবহ অন্যরকম। এ বারের পুজো অনেক বেশি মানবিক। এটা লড়াই ভুলে বন্ধুত্বের পুজো। সামনের বছর পরিস্থিতি অনুকূল হলে হয়তো আবার আমরা লড়াই করব।
করোনা-আবহে এটাই বোধ হয় সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি। এ ভাবেই কঠিন সময়ের পুজো মিলিয়ে দিল উত্তর ও দক্ষিণকে। ঘুচিয়ে দিল লড়াই। তৈরি করল 'পুজোর বন্ধু'।
আরও পড়ুন: সামাজিক দূরত্ব তো মনকে দূরে ঠেলতে পারে না!