গ্রেফতার চিরবিশ্বস্ত মদন, বহুদিন পর রাজপথ দেখল মুখ্যমন্ত্রী নয়, 'প্রতিবাদী' দলনেত্রী মমতাকে
ক্ষমতায় আসার পর থেকে মমতা ব্যানার্জির সরকার একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছে। পার্কস্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ড, কামদুনি, শিলাদিত্য-মাওবাদী বিতর্ক, সিঙ্গুর জমি ফেরানোর মামলা থেকে তাপস পাল মন্তব্য সহ বহু ঘটনায় বারবার সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছে তাঁর সরকার। এমনকি সারদা কাণ্ডে দলের নাম জড়ালেও এতদিন মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের সব বাউন্সারের উত্তরই দিয়েছেন একজন প্রশাসক হিসাবে। কিন্তু, বহুদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গি মদন জেলে যাওয়ার পরেই ফের সামনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই 'বিদ্রোহী' রূপ।
ওয়েব ডেস্ক: ক্ষমতায় আসার পর থেকে মমতা ব্যানার্জির সরকার একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছে। পার্কস্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ড, কামদুনি, শিলাদিত্য-মাওবাদী বিতর্ক, সিঙ্গুর জমি ফেরানোর মামলা থেকে তাপস পাল মন্তব্য সহ বহু ঘটনায় বারবার সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছে তাঁর সরকার। এমনকি সারদা কাণ্ডে দলের নাম জড়ালেও এতদিন মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের সব বাউন্সারের উত্তরই দিয়েছেন একজন প্রশাসক হিসাবে। কিন্তু, বহুদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গি মদন জেলে যাওয়ার পরেই ফের সামনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই 'বিদ্রোহী' রূপ।
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের ভিত যে 'বিদ্রোহী', 'প্রতিবাদী' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আসনটা পাইয়ে দিয়েছিল, আরও একবার সেই চেনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখল দেশ। পুরনো মুডেই মদন মিত্রের গ্রেফতারির প্রতিবাদে কলকাতার রাজপথে নামলেন তিনি। শোনা গেল চিরপরিচিত কায়দায় তাঁর সেই হুঙ্কার। যুব কংগ্রেসের আমলের 'লড়াকু' নেত্রী মমতাকে আবারও দেখল শহর।
প্রশাসক নয়, এখানে তিনি পুরোপুরি বিরোধীর ভূমিকায়। টার্গেট, কেন্দ্র সরকার। আরও পরিস্কার করে বললে, বিজেপি।
আভাসটা অবশ্য মিলছিল গত কয়েকদিন ধরেই। সারদা কাণ্ডে দলের একের পর কেষ্টুবিষ্টুর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তি বাড়ছিল এ রাজ্যের তৃণমূল সরকারের। সারদা ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলকে কোণঠাসা করতে উঠে পড়ে লেগেছিল বিরোধীরা। লোকসভা নির্বাচনের পর সব হিসেব নিকেশ উল্টো করে এ রাজ্যে শক্তি বাড়াচ্ছিল বিজেপি। সারদাকাণ্ডে তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষের গ্রেফতারির পর মোটামুটি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁর উপর থেকে সমস্ত সহযোগিতার হাত সরিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। উদ্দেশ্য, দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখা। কিন্তু, মমতার কাছের টুম্পাইকেও (তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয় বসু) সিবিআই জেলবন্দী করার পর সুর চড়াতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী।
কলকাতায় বিজেপির সর্বভারতীয় প্রেসিডেন্ট অমিত শাহের বিরাট সভা আর তৃণমূল বিরোধী মন্তব্যের পরেই বোধহয় অশনি সংকেত দেখেন তিনি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বা প্রশাসক নন, তখন থেকেই আবার পুরোদমে দলের মুখ, দলের প্রধানের রূপে ময়দানে নামেন সেই চিরপরিচিত মমতা।
সারদাকাণ্ডে পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রের গ্রেফতারির খবর পেয়েই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে দেন মমতা। মদনের গ্রেফতারিকে 'অসাংবিধানিক', 'বেআইনি' আখ্যা দিয়ে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছোঁড়েন নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে। সিবিআই-কে কেন্দ্র সরকারের স্তাবক বলে দাবি করেন। পরিবহণ মন্ত্রীর গ্রেফতারি পর আজ তৃণমূলের প্রতিবাদী মিছিলও তাঁরই অঙ্গুলিহেলনে সংগঠিত হয়েছে সেটা বুঝতে বোধহয় রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
আজ, গোষ্ঠ পালের মূর্তির পাদদেশে দলীয় সভামঞ্চে সরাসরি মদনের পাশে থাকার কথা ঘোষণা করলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশ্য, বক্তব্যে নিজের স্বভাবচিত কনফিডেন্স দেখালেও, মাঝপথে মেজাজ হারিয়ে প্রমাণ করলেন চাপে আছেন তিনিও।
এর আগে বস্তুত প্রায় একার ক্যারিশ্মায় লোকসভা নির্বাচনে দলের সাংসদ পদ ১ থেকে ১৮ করেছিলেন তিনি। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সময় রাজ্যের মানুষের সেন্টিমেন্টকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের রাজত্ব কব্জা কড়েছিলেন। দলের ভাল, খারাপ সব সময় মমতার সঙ্গি ছিলেন কিন্তু এই মদন, মুকুলরাই। আজ, মদন মিত্রের খারাপ সময়ে দলনেত্রী মমতা তাঁর পাশে থাকবেন এটা বোধহয় প্রত্যাশিতই ছিল। সারদাকাণ্ডে জর্জরিত দলের বৈতরণী এবারও কি পাড় করতে পারবেন তিনি? সময়ই বোধহয় তার উত্তর দেবে। বাংলার আকাশে কিন্তু গেরুয়া রঙ ছড়াতে শুরু করেছে...