সিঙ্গুর আইন `অবৈধ ও অসাংবিধানিক`, রায় হাইকোর্টের
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হওয়া `সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন আইন অবৈধ ও অসাংবিধানিক`! শুক্রবার এই ঐতিহাসিক রায় দিল কলকাতা হাইকোর্টের ২ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। সেই সঙ্গে বিচারপতি পিনাকি চন্দ্র ঘোষ ও বিচারপতি মৃণালকান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, এই রায় নিয়ে আপত্তি থাকলে আগামী ২ মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাতে পারবে রাজ্য সরকার।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হওয়া 'সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন আইন অবৈধ ও অসাংবিধানিক'! শুক্রবার এই ঐতিহাসিক রায় দিল কলকাতা হাইকোর্টের ২ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। সেই সঙ্গে বিচারপতি পিনাকি চন্দ্র ঘোষ ও বিচারপতি মৃণালকান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, এই রায় নিয়ে আপত্তি থাকলে আগামী ২ মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাতে পারবে রাজ্য সরকার।
কলকাতা হাইকোর্টের এদিনের রায়কে রাজ্য সরকারের পক্ষে বড় ধাক্কা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৪ জুন- পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় 'সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন আইন' পাশ হওয়ার আগে বামপন্থী বিধায়করা এই আইনকে 'অবৈধ ও অসাংবিধানিক' বলে সভা থেকে ওয়াকআউট করেছিলেন। এদিন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও একই কথা বলেছে। টাটা মোটরস-এর দায়ের করা মামলার রায় দিতে গিয়ে সিঙ্গুর আইনের ৩, ৪ এবং ৫ নম্বর (জমি অধিগ্রহণ, অধিগৃহীত জমি খাস করা এবং টাটাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া সংক্রান্ত) ধারাকে সুস্পষ্টভাবে 'অসাংবিধানিক' বলে চিহ্নিত করেছে ডিভিশন বেঞ্চ। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছে, উচ্চতর আদালতে মামলার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি বিলি স্থগিত রাখতে হবে। প্রত্যাশিতভাবেই ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ে খুশি প্রকাশ করেছে টাটা মোটরস কর্তৃপক্ষও। অন্যদিকে রাজ্য সরকারের আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা।
২০১১-র ২ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পিনাকি চন্দ্র ঘোষ ও মৃণালকান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। ৬-মাস ধরে সরকার এবং টাটা মোটরস কর্তৃপক্ষের বক্তব্য শোনে আদালত। এর আগে গত ২৮ জুলাই কলকাতা হাইকোর্টের ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে সিঙ্গুর আইনকে 'বৈধ এবং সাংবিধানিক' বলা হয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে যায় টাটা মোটরস। ১৮ এপ্রিল মামলার শুনানি শেষ হয়। মে মাসেই এই মামলার রায় বেরনোর সম্ভাবনা ছিল। তবে আদালতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি পড়ে যাওয়ায় পিছিয়ে যায় রায় ঘোষণার দিন।
সিঙ্গুর-নামা ২০০৬-২০১২
১৯ মে ২০০৬- সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। জমি অধিগ্রহণের পর শুরু হয়ে যায় চেক বিলি আর সিঙ্গুরে সরকারের এই জমি অধিগ্রহণ এবং অনিচ্ছুকদের জমি ফেরতের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে তৃণমূল।
২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬- বিডিও অফিসে অবস্থান বিক্ষোভরত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেয় পুলিস।
৩০ নভেম্বর ২০০৬- বিধানসভায় ভাঙচুর চালায় তৃণমূল কংগ্রেস।
৫ ডিসেম্বর ২০০৬- ধর্মতলায় অনশন শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৬ দিন ধরে চলে অনশন।
১৮ ডিসেম্বর ২০০৬- সিঙ্গুরে উদ্ধার হয় তাপসী মালিকের দেহ। তার মৃত্যুর ঘটনাকে সামনে এনে সিঙ্গুর আন্দোলন আরও জোরদার করে তৃণমূল।
২৪ আগস্ট ২০০৮-টাটাদের কারখানার সামনে জাতীয় সড়কে ধর্না শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮- রাজ্যপালের মধ্যস্থতায় সিঙ্গুর সমঝোতার লক্ষ্যে রাজভবন চুক্তি সই হয়।
৪ অক্টোবর ২০০৮- টাটারা এ রাজ্য থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয়।
এরপর ২০১১-র মে মাসে রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হয়।
২০ মে ২০১১-মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৪ জুন- পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ‘সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন আইন’ পাশ।
২০ জুন- বিলে সম্মতি দিলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন।
২১ জুন- সিঙ্গুরে জমিতে সরকারি বিজ্ঞপ্তি সেঁটে দেওয়া হল।
২১ জুন- জমি থেকে উত্খাতের আশঙ্কা প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ টাটা মোটরস।
২২ জুন- বিচারপতি সৌমিত্র পালের এজলাসে শুনানি শুরু।
২৮ জুন- স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে টাটার আবেদন।
২৯ জুন- জমি বিলিতে স্থগিতাদেশ দিয়ে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তির হাইকোর্টকে নির্দেশ শীর্ষ আদালতের।
১৪ জুলাই- বিচারপতি সৌমিত্র পালের এজলাসে ফের এল মামলা।
২৬ জুলাই- ব্যক্তিগত কারণে মামলা শুনতে বিচারপতি পালের আপত্তি।
২৮ জুলাই- বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চে শুনানি শুরু।
১৬ সেপ্টেম্বর- হাইকোর্টে সওয়াল-জবাব শেষ।
২৮ সেপ্টেম্বর- রায় ঘোষণা, রায় গেল রাজ্য সরকারের পক্ষে।
৩১ অক্টোবর- সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন টাটাদেরথ
২ নভেম্বর- কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পিনাকি চন্দ্র ঘোষ ও মৃণালকান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চে টাটাদের আবেদনের শুনানি শুরু।
১৮ এপ্রিল ২০১২- সিঙ্গুর মামলার শুনানি শেষ, দু'তরফের বক্তব্য শুনল হাইকোর্ট।
২২ জুন- সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন আইন 'অবৈধ ও অসাংবিধানিক', রায় ডিভিশন বেঞ্চের।