মহানায়িকার অন্তরাল জীবনকে বরবারই সম্মান জানিয়েছে বেলভিউ কতৃপক্ষ, সুচিত্রার কেবিনের চারপাশ নিরাপত্তার দুর্গ। কাল রাতে ঘটল অঘটন, নিরাপত্তা ভেঙে ঢুকে পড়ল গুণমুগ্ধ ভক্ত।
মহানায়িকার অন্তরাল জীবনকে বরবারই সম্মান জানিয়েছে বেলভিউ কতৃপক্ষ, সুচিত্রার কেবিনের চারপাশ নিরাপত্তার দুর্গ। কাল রাতে ঘটল অঘটন, নিরাপত্তা ভেঙে ঢুকে পড়ল গুণমুগ্ধ ভক্ত।
সন্দীপ সরকার
এই নিয়ে পাঁচবার বেলভিউতে ভর্তি হলেন মহানায়িকা। অভিনয় ছাড়ার পর তাঁর দীর্ঘ অন্তরাল জীবনকে বরবারই সম্মান জানিয়েছেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। শেষবার হাসপাতাল ছাড়ার আগে নিজের হাতে সাদা কাগজে হাসপাতালের একটি শংসাপত্র লিখে দিয়ে গিয়েছিলেন। যা এখনও হাসপাতালের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। হাসপাতালে তাঁর প্রাইভেসি কোনওভাবেই বিঘ্নিত হয় না। ঘনিষ্ঠমহলে বিভিন্ন সময়ে একথা জানিয়েছেন মহানায়িকা। এবারও তাই বড়দিনের রাতে অসুস্থ হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে নিয়ে ছুটে আসেন দক্ষিণ কলকাতার মিন্টো পার্কের এই নার্সিংহোমে। হাসপাতালের একটি আইটিইউ স্যুইটে রয়েছেন সুচিত্রা সেন। যে ঘরে পরিচিত ডাক্তার ছাড়া বাকিদের প্রবেশ নিষেধ। ব্যতিক্রম অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রী।
সুচিত্রা সেনের খাবার পৌছে দেন হাসপাতালের দুই কর্মী। একজন গৌর অন্যজন সন্ন্যাসী। গৌর এবং সন্ন্যাসীর সাথে গত কয়েকদিনে রীতিমত ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সুচিত্রা সেন। এই দুজন ছাড়া অন্য কেউ তাঁর খাবার নিয়ে আসুক তা চান না মহানায়িকা। যা কার্যত বিড়ম্বনায় ফেলেছে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে। বাতিল করতে হয়েছে দুজনের ছুটি। নিয়মিত রস্টার ভেঙে এই দুজনকে দিয়েই একটানা ডিউটি করাতে হচ্ছে। সবছুটি পরে দেওয়া হবে। আপাতত এই বলেই দুই কর্মীকে আশ্বস্ত করেছেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। কারণ অন্য কারুর হাতে খাবার খাবেন না তিনি। তাই হাসি মুখেই মহানায়িকার এই আবদার মেনে নিয়েছেন গৌর ও সন্ন্যাসী।
আট ঘণ্টার শিফটে তিনজন নার্স পর্যায়ক্রমে ডিউটি করছেন আইটিইউতে। কারণ অন্য নার্সকে পাঠানো হলেও মহানায়িকা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অন্য কেউ নয় , ওই তিনজনকেই আসতে হবে। মায়ের এই আবদার মেনে নিয়েছেন মুনমুনও। তাই ছুটি বাতিল করে তিনজন নার্স একটানা ডিউটি করে যাচ্ছেন আইটিইউতে। এদের মধ্যে একজন কেয়া। যাঁকে বরাবরই খুব ভালবাসেন সুচিত্রা সেন। বলেছেন , আমি যদি সুযোগ পেতাম, আমি তোকে সিনেমায় নামাতাম। অসুস্থ থাকাকালীন মহানায়িকার বাড়িতে একাধিকবার ডিউটি করেছেন কেয়া। এই চেনা মুখ গুলোর বাইরে অন্য কেউ তাঁর কেবিনে ঢুকুক তা মহানায়িকার পছন্দ নয়।
সচারচর অন্য কাউকে তাঁর কেবিনে পাঠান না নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দুএকবার সমস্যায় পড়ে অন্য লোক পাঠাতেও হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই অপিরিচিত কেউ ঘরে ঢুকলেই দ্রুত চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে নেন। হাতে স্যালাইনের চ্যানেল থাকলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়েন। ঠিক এরকমই একটি ঘটনা ঘটেছে তাঁকে আইটিইউতে শিফট করার দিন। আইটিইউর বিশেষ স্যুইটে ঢুকে মুনমুন সেন আবিষ্কার করেন আইটিইউর চেয়ার গুলো সামান্য অপরিষ্কার। ততক্ষনাত নির্দেশ সব পরিষ্কার করতে হবে। নিরুপায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অন্য এক কর্মীকে চেয়ারগুলি বার করতে ঘরে পাঠান। তাঁকে ঘরে ঢুকতে দেখেই মুখ ঢেকে ফেলেন সুচিত্রা। মুখ ঢাকা অবস্থাতেই প্রশ্ন করেন তুমি কে? তোমায় তো আগে দেখিনি। যতক্ষণ ওই কর্মী চেয়ার বার করেছিলেন ততক্ষণ আগাগোড়া মুখ ঢেকেছিলেন মহানায়িকা।
সুচিত্রা সেন যাতে আর বিড়ম্বনায় না পড়েন তাই তাঁর অপরিচিত ডাক্তার , নার্স, কর্মী কাউকে কেবিনে পাঠাচ্ছেন না নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। তাই বাড়ানো হয়েছে কেবিনের নিরাপত্তাও।
তবে একটা ছন্দপতন ঘটেছে কালকে। এক প্রবীণ ব্যক্তি দোতলার নিরাপত্তারক্ষীকে ধাক্কা মেরে হঠাত করেই পৌছে যান মহানায়িকার কেবিনের কাছে। সিসিটিভি মনিটরে এই ছবি দেখে পরিমরি করে ছুটে আসেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। নার্সিংহোমের এক জিএম, সিইও। নিজেকে বায়ুসেনার প্রাক্তন কর্মী পরিচয় দেন ওই বৃদ্ধ। জানান, তিনি সঙ্কটজনক সুচিত্রাকে দেখতে ছুটে এসেছেন জয়পুর থেকে। ৬২ সালে কোনও এক শুটিং স্পটে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল মহানায়িকার। ওই সময় তাঁর সঙ্গে সুচিত্রা সেন কথা বলেছিলেন বলেও দাবি করেছেন ওই বৃদ্ধ। বুঝিয়ে সুঝিয়ে কোনওরকমে মহানায়িকার ওই প্রবীণ গুণমুগ্ধকে বিরত করেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। এরকম বহু টুকরো টুকরো ঘটনার স্মৃতি ঘুরে ফিরে আসছেন নার্সিংহোম কর্মীদের মনে। তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান এটাই প্রার্থনা সবার।